সুনামগঞ্জ পর্যটকদের জন্য সেজেছে আধুনিকতার আবেশে 

বাসস
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:১৮
মেঘপাহাড়ের দেশ সুনামগঞ্জ পর্যটকদের জন্য সেজেছে আধুনিকতার আবেশে ।ছবি : বাসস

মো. আমিনুল হক

সুনামগঞ্জ, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মেঘপাহাড়ের দেশ সুনামগঞ্জ। হাওর, নদী, পাহাড় বেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসে এখানে ঘুরতে। কবি, সাহিত্যিকরা জল-জোছনায় এখানে এসে বজ্রা ভাসায়। জোছনা রাতে শহরে বসে কবিতার আসর। হাওরের সাথে রয়েছে পাহাড়ের মিতালী। শীত মৌসুমে পাখিরা দল বেঁধে হাওরে ঘুরতে আসে।

ইদানীংকালে পর্যটকদের জন্য সুনামগঞ্জ সেজেছে আধুনিকতার আবেশে। শহরে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক হোটেল ও রিসোর্ট। রয়েছে হাউসবোট। ভোরে ও সন্ধ্যায় শহরে দেখা যায় পর্যটকদের আনাগোনা। 

হাওরের থৈ থৈ পানির ওপরে বন্ধু বান্ধব ও প্রেমিক প্রেমিকারা ভেসে বেড়ায় হাউসবোটে। টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেকসহ (নিলাদ্রী লেক) বেশ কিছু পর্যটন স্থান দেখতে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হাউসবোট। 

বর্ষায় হাওরের জালের সাথে নদী, নালা ও খাল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল করচা গাছ পর্যটকদের আরো আকৃষ্ট করে। চোখ বুলালেই দেখা মিলে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়। মেঘ পাহাড়ের এমন রূপে মুগ্ধ হয়ে টাঙ্গুয়ার ঘুরতে আসেন হাজারো পর্যটক। 

শারদীয় দুর্গোৎসবের ছুটি ও বিশ্ব পর্যটন দিবসকে সামনে রেখে নানা আয়োজন নিয়ে প্রস্তুত এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর, জাদুকাটা নদী, বারিক টিলা, শহীদ সিরাজ লেক, শিমুলবাগান, ডলুরা শহীদ মিনার, ও লাকমাছড়া। পাশাপাশি  এলাকা, ছবির মতো সুন্দর। টাঙ্গুয়ার হাওর ভরা বর্ষায় এক রূপ,  হেমন্তে আরেক রূপ। বর্ষার রূপ উপচে পড়ছে এই সময়ে। হাওরের স্বচ্ছ জলে রাতে জল-জোছনার মায়াবী খেলায় মন জুড়িয়ে যায় আগুন্তকদের। পড়ন্ত বিকেলে মেঘালয় পাহাড়, আকাশে থাকা মেঘের ছায়া অন্য রকম এক আবহ  দেখা দেয়। 

সুনামগঞ্জ শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় এই হাওরের অবস্থান। এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে  ছোট বড় ১০৯ টি বিল আছে। তবে প্রধান বিল ৫৪টি। হাওরের ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে এক অভুতপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। হাওর এলাকার ৮৮টি গ্রাম আছে। বর্ষায় এই গ্রামগুলোকে মনে হয় ছোট ছোট দ্বীপ। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝরনা নেমে এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে।

আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ টাঙ্গুয়ার হাওরে নিবন্ধিত দুশ হাউসবোট আছে। এর বাইরে নানা জায়গা থেকে ছোট বড় আরও দুইশ নৌকা ও বোট আসে এ হাওরে। পর্যটকেরা এসব বোটে সারা দিন হাওরে ঘুরে বেড়ান, পরে বোটেই রাত যাপন করেন হাওরপাড়ের টেকেরঘাট এলাকায়। 

পর্যটকদের হাওরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য এখন নির্দিষ্ট পথ নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রশাসন। এর বাইরে যেতে হলে নৌকায় করে ঘুরতে হবে। এরও ব্যবস্থা আছে হাওরে।

সকল হাউসবোটেরই ফেসবুক পেজ থেকেই ‘হাউস বোট’ বুকিংয়ের কন্ট্রাক্ট  সেরে নেন পর্যটকেরা। রাজধানী ঢাকা বা দেশের যে কোন এলাকা থেকেই অভিজাত বাস আসে সীমান্তের শহর সুনামগঞ্জে। 

সুনামগঞ্জ শহরে এসে শহরের লঞ্চঘাট, সাহেববাড়ী, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, লালপুর, আনোয়ারপুর, ফাজিলপুর ও তাহিরপুর থানা ঘাট থেকে যাতায়াত করা যায়। রাজধানী ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও হাওর এক্সপ্রেস  নামের দুটি রেল আসে মোহনগঞ্জে। এসব রেল ভোর পাঁচটায় মোহনগঞ্জে নামায়। 

হাউস বোট এসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফত রহমান বললেন, শিশু কিশোরদের হাওরে জলকেলি’র ব্যবস্থা থেকে শুরু করে নিরাপত্তা দেবার বিষয়টি আগের থেকে অনেক বেশি ‘প্রফেশনালি’ দেখছেন হাউসবোট মালিকরা। 

হাওরের পাশাপাশি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য জেলাজুড়ে রয়েছে আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। যেমন শহরের মরমি সাধক হাসন রাজা, জগন্নাথপুরের বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্ত, দিরাইয়ের উজানধলে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের বাড়ি ও সমাধি দেখতেও অনেক আসেন এ জেলায়। 

প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার গৌরারং জমিদারবাড়ি, দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া জমিদারবাড়ি, ধরমপাশা উপজেলায় সুখাইড় জমিদারবাড়ি, তাহিরপুর উপজেলায় হলহলিয়া রাজবাড়ি, দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া জমিদারবাড়ি।

সুনামগঞ্জ জেলা এক সময় শুধু হাওর ও কৃষি নির্ভর অর্থনীতির জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে পালটে গেছে দৃশ্যপট। হাওরের জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের জায়গা করে নিয়েছে ভ্রমণ পিপাসুদের মনে। এখানে বিদেশী পর্যটকেরাও  আসছেন। 

একদিন সুনামগঞ্জ শহরে রেস্ট হাউস বা আবাসিক হোটেল নড়েচড়ে বসেছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে নিজেদের পাল্টে আধুনিকতার ছোয়ায় সমৃদ্ধ করেছে। একইসঙ্গে হাইরাইজ ভবন নির্মাণ করে অত্যাধুনিক হোটেল নির্মাণ হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, টাঙ্গুয়ারার হাওরের প্রাণ বৈচিত্র, পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা করে পর্যটনকে উৎসাহিত করছি আমরা। এখানকার হাওর পর্যটনকে ইতিপূর্বে ব্রান্ডিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সকলকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মানতে হবে। প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা না করলে পর্যটন ক্ষেত্র থাকবে না। পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় সবাইকে  উদ্যোগী হতে হবে। 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আমরা এখন জানি বড় টুর্নামেন্টে কিভাবে ম্যাচ জিততে হয় : জ্যোতি
ভারতের কাছে ফাইনালে টাইব্রেকারে পরাজিত বাংলাদেশ
এবাদতের বোলিং নৈপুন্যে বরিশালকে হারাল সিলেট
শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ে ভর্তি পরীক্ষার বিকল্প নেই : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি 
চিতলমারীতে পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখলেন বিএনপি নেতা
পঞ্চগড়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে র‌্যাবের কড়া নিরাপত্তা 
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক প্রবেশ কখনো বন্ধ হয়নি : পরিবেশ উপদেষ্টা
নিউইয়র্কে ‘এনআরবি কানেক্ট ডে’ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
পিএসজির বিপক্ষে খেলতে পারছেন না রাফিনহা, গার্সিয়া
সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি সততা : কাদের গনি চৌধুরী
১০