বাসস
  ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৩৪

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ফের জিজ্ঞাসাবাদে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত ইউন সুক ইওল। ফাইল ছবি

ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত ইউন সুক ইওলকে আটক রাখার আদেশের সময়সীমা প্রায় শেষ হতে চললেও শুক্রবার তিনি আবারও তদন্তকারীদের তার ব্যর্থ সামরিক আইন প্রয়োগ চেষ্টার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। 

সিউল থেকে এএফপি জানায়, ইউন গত ৩ ডিসেম্বর দেশে সামরিক আইন প্রয়োগের চেষ্টা করেন, যার কারণ হিসেবে তিনি ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’র হুমকি মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিলেন।

কিন্তু তার চেষ্টা মাত্র ছয় ঘণ্টা স্থায়ী হয়। তিনি যে সেনাদের পার্লামেন্ট দখলের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারা পার্লামেন্ট সদস্যদের সামরিক আইন প্রত্যাখ্যান করার ভোট থামাতে ব্যর্থ হন।

পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে পার্লামেন্ট তাকে ইমপিচ করে এবং তিনি তার সুরক্ষিত বাসভবনে অবস্থান করে গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করেন। অবশেষে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আটক হন।

বুধবার ভোরে তার বাসভবনে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করা হয়, যা তদন্তকারীদের তাকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার জন্য আটক রাখার অনুমতি দেয়।

তবে শুক্রবার তারা নতুন পরোয়ানার আবেদন করার পরিকল্পনা করছে। এতে তার আটকাদেশ ২০ দিন বাড়াতে পারে এবং এ সময়ের মধ্যে প্রসিকিউটররা তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রস্তুত করতে পারবেন।

দুর্নীতি তদন্ত অফিস (সিআইও) তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তদন্ত করছে। এটি প্রমাণিত হলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

নতুন পরোয়ানাটি যদি শুক্রবার দাখিল করা হয়, তবে অন্তত আদালতের শুনানি ও অনুমোদনের রায় না হওয়া পর্যন্ত ইউনকে আটক রাখা যাবে। আদালত যদি শুনানির পর এটি প্রত্যাখ্যান করে, তবে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।

ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইউন শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (জিএমটি ০১০০) সিআইও-তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার আইনজীবী ইউন কাব-কিউন এএফপিকে জানিয়েছেন, তিনি পরপর দুই দিন তদন্তে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সিআইও কর্মকর্তারা এএফপির অনুরোধে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি।

অন্য এক আইনজীবী সিওক ডং-হিউন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইউন ইতোমধ্যে তদন্তকারীদের তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আজ সিআইওতে উপস্থিত হবেন না। তিনি প্রথম দিনেই তদন্তকারীদের তার মূল অবস্থান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।’

বুধবার কয়েক ঘণ্টা ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি চুপ থাকার অধিকার প্রয়োগ করেন এবং পরের দিন জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান।

সমর্থকদের প্রতিবাদ

ইয়োনহাপ জানিয়েছে শুক্রবার তদন্তকারীরা নতুন পরোয়ানা দাখিল করার পরিকল্পনা করায় ইউনের সমর্থকরা আদালতের বাইরে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেন এবং একে অপরের হাত ধরে একটি অবরোধ তৈরি করেন।

শেষ মুহূর্তের ঘটনাবলি

ইউন কয়েক সপ্তাহ ধরে তার বাসভবনে অবস্থান করে গ্রেফতার এড়িয়েছেন। এসময় প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের (পিএসএস) অনুগত সদস্যরা তাকে রক্ষা করেন।

বুধবার তার বাসভবনে শত শত সিআইও তদন্তকারী ও পুলিশ অভিযান চালায় এবং তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতার হওয়ার পর ইউন বলেছিলেন, তিনি ‘রক্তপাত এড়াতে’ তার বাসভবন ছাড়তে সম্মত হয়েছেন, কিন্তু তিনি তদন্তের বৈধতা মেনে নেননি।

তার দল পিপল পাওয়ার পার্টির একজন আইনপ্রণেতা জানান, গ্রেফতার হওয়ার আগে ইউন তার আইনজীবীদের জন্য স্যান্ডউইচ তৈরি করেন এবং অনুগত সংসদ সদস্যদের সান্ত্বনা দেন।

তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউন সাং-হিউন একটি ইউটিউব সাক্ষাৎকারে বলেন, এসময় ‘একজন কেঁদে ফেলেন এবং মাথা নত করে অভিবাদন জানান। ইউন আমাদের পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দেন।’

প্রসিকিউটররা গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখানোর পর তার শেষ অনুরোধ ছিল তার পোষা কুকুরের সাথে দেখা করার।

আইনপ্রণেতা ইউন বলেন, ‘তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বুঝেছি। আমি জানি এর মানে কী। তো, চলো যাই।’

‘তিনি টোরিকে (তার কুকুর) দেখতে চান, দ্বিতীয় তলায় গিয়ে তার থাকার জায়গা দেখেন, ফিরে আসেন, এবং বের হয়ে যান।’

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া

বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ইউনের গ্রেফতার উদযাপন করেছে। এক শীর্ষ কর্মকর্তা একে ‘সংবিধান ও আইনের শাসন পুনঃস্থাপনের প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইউন জয়ী হলেও গত বছর এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ভূমিধস জয় পায়।

এদিকে একটি তদন্তে সাংবিধানিক আদালত ইউনের ইমপিচমেন্ট বহাল রাখা হবে কিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

যদি তা বহাল রাখা হয়, তাহলে ইউন প্রেসিডেন্ট পদ হারাবেন এবং ৬০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

তিনি এই সপ্তাহে প্রথম দুটি শুনানিতে অংশ নেননি।

তার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলছে এবং এটি শেষ হতে কয়েক মাস লাগতে পারে।