ঢাকা, ২২ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ফেডারেল অর্থ সহায়তা বন্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার মামলা করেছে প্রখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
বিষয়টি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ও হার্ভার্ডের মধ্যকার চলমান দ্বন্দ্বকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে, যেখানে ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়টির তহবিল হুমকির মুখে ফেলে রাজনৈতিক তদারকি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প ক্যাম্পাসে ইহুদি বিদ্বেষ সহ্য করার অভিযোগে
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্যবস্তু করেছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি তাদের বাজেট, কর অব্যাহতি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। তবে হার্ভার্ড এসব চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি।
ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা মামলায় হার্ভার্ড বলেছে, ‘এই মামলা যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক ফেডারেল অর্থ সহায়তা আটকে দিয়ে হার্ভার্ডের একাডেমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা সংক্রান্ত।’
মামলায় আরও বলা হয়, ‘সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু সংবিধানের প্রথম সংশোধনী নয়, বরং বিদ্যমান ফেডারেল আইন ও নীতিমালারও পরিপন্থী।’ এতে ট্রাম্প প্রশাসনের কার্যক্রমকে ‘ইচ্ছাকৃত ও খামখেয়ালি’ বলা হয়েছে।
হার্ভার্ড সরকার নির্ধারিত নিয়ন্ত্রণ মানতে অস্বীকৃতি জানালে গত সপ্তাহে ট্রাম্প ২.২ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল অর্থ সহায়তা স্থগিতের নির্দেশ দেন।
ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের ভর্তি, শিক্ষক নিয়োগ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
মামলায় ফেডারেল অর্থ সহায়তা স্থগিতাদেশ ও তাতে আরোপিত শর্তাবলিকে বেআইনি ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়েছে, পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসনকে মামলার খরচ পরিশোধে বাধ্য করার দাবিও তোলা হয়েছে।
ট্রাম্প ও তার হোয়াইট হাউস দল জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে তাদের এই অভিযানের কারণ ক্যাম্পাসে ‘নিয়ন্ত্রণহীন ইহুদি বিদ্বেষ’ ও সংখ্যালঘুদের প্রতি ‘বৈচিত্র্যনীতি’র নামে পক্ষপাতমূলক আচরণ।
প্রশাসনের দাবি, গাজার যুদ্ধে ইসরাইলের বিরোধিতা করে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে যেসব বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, সেগুলোতে ইহুদি বিদ্বেষ প্রকট ছিল।
হার্ভার্ডসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সেই সময় বিক্ষোভ দমন করছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। ক্যামব্রিজভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বিক্ষোভে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২৩ জন শিক্ষার্থীকে পর্যবেক্ষণে রাখে এবং ১২ জনকে স্নাতক ডিগ্রি দিতে অস্বীকৃতি জানায় বলে দাবি করে বিক্ষোভ আয়োজকরা।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘হার্ভার্ড এখন আর সম্মানজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নয়। এটি বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের তালিকায় থাকার যোগ্যতা হারিয়েছে। হার্ভার্ড কৌতুক, ঘৃণা ও বোকামি শেখায় এবং এর ফেডারেল অর্থ সহায়তা বন্ধ হওয়া উচিত।’
‘সার্বিক অর্থ সহায়তা স্থগিত’
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে ‘অসংখ্য তদন্ত’ শুরু করেছে।
গত সপ্তাহে গারবার বলেন, ‘হার্ভার্ডের স্বাধীনতা কিংবা সংবিধান-নির্ধারিত অধিকার নিয়ে আমরা কোনো ধরনের দরকষাকষিতে যাব না।’
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান কিছুটা নমনীয়তা দেখালেও হার্ভার্ড এখন পর্যন্ত তেমন কিছু করেনি। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি অতিমাত্রায় বামঘেঁষা হয়ে উঠেছে।
দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগও হার্ভার্ডকে হুমকি দিয়েছে, যদি তারা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসাধারীদের ‘অবৈধ ও সহিংস কার্যক্রম’ সংক্রান্ত তথ্য না দেয়, তবে তাদের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির
ক্ষমতা রহিত করা হবে।
হার্ভার্ডের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, চলতি শিক্ষাবর্ষে তাদের মোট শিক্ষার্থীদের ২৭.২ শতাংশই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী।
হার্ভার্ড মামলায় বলেছে, ‘হার্ভার্ড ইহুদি বিদ্বেষ ও সকল ধরনের বৈষম্য প্রত্যাখ্যান করে এবং ক্যাম্পাস থেকে ইহুদি বিদ্বেষ দূর করতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।’
‘কিন্তু এসব প্রচেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসার বদলে সরকার চিকিৎসা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অন্যান্য গবেষণার অর্থ সহায়তা—যার সঙ্গে ইহুদি বিদ্বেষের কোনো সম্পর্ক নেই—তাও বন্ধ করে দিয়েছে।’
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের কট্টরপন্থী রক্ষণশীলদের বহুদিনের অভিযোগকেই তুলে ধরেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বামমুখী হয়ে পড়েছে এবং ডানপন্থীদের কণ্ঠরোধ করছে।
হার্ভার্ডের ক্ষেত্রে, হোয়াইট হাউস দেশটির সবচেয়ে পুরোনো ও ধনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ওপর নজিরবিহীন হারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়—যেটি বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত।