ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : টেক্সাসের এক ছোট রেস্তোরাঁ, নাম ‘ট্রাম্প বার্গার’। দুপুরের খাবারের সময়, আর খদ্দেররা উপভোগ করছেন ফাস্টফুড আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনের উত্তেজনা।
যুক্তরাষ্ট্রের বেলভিল থেকে এএফপি জানায়, মাত্র কয়েকটি টেবিলের এই খুদের দোকানে চারপাশে ছড়িয়ে আছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি ও চিহ্ন- কার্ডবোর্ডের কাটআউটে তার বিখ্যাত কৃত্রিম হাসি, ২০২৪ সালের নির্বাচনী ব্যানার, বিক্রির জন্য রাখা টুপি ও টি-শার্টে ট্রাম্পের ছাপ।
টেক্সাসে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির চারটি শাখা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আর কোথাও এমন কিছু নেই।
বেলভিলের এই বিশেষ শাখাটি ২০২০ সালে চালু হয়। হিউস্টন শহর থেকে প্রায় ৯০ মিনিট উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই শহরের কাউন্টিতে গত নভেম্বরে ট্রাম্পের পক্ষে কামালা হ্যারিসের বিপরীতে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
তবে, এই চেইনের সঙ্গে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের কোনো সরাসরি সংযোগ নেই।
সপ্তাহান্তে জায়গাটি হয়ে ওঠে সরগরম- গর্জনরত হার্লে-ডেভিডসন বাইকার আর মোটা টায়ারের পিকআপ ট্রাকে আসা পরিবারে ভরে যায় রেস্তোরাঁ।
মেনুতে আছে ‘ট্রাম্প বার্গার’ আর ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ নামের সুপার সাইজ বার্গার—যাতে থাকে দুটি হ্যামবার্গার প্যাটি। দাম ১৬.৯৯ ডলার। সব স্যান্ডউইচেই বান-এর ওপর বড় করে ইংরেজিতে লেখা ‘ট্রাম্প’।
মেনুতে আরও একটি বার্গারের নাম রয়েছে—‘বাইডেন বার্গার’। বর্ণনায় বলা হয়েছে, এটি তৈরি পুরোনো টমেটো আর বাসি রুটি দিয়ে, আর দাম ৫০.৯৯ ডলার! তবে রেস্তোরাঁর ভাষায়, এটি বর্তমানে ‘চুরি আর মুদ্রাস্ফীতির’ কারণে পাওয়া যাচ্ছে না।
‘সঠিক পথে আছেন ট্রাম্প’
সাম্প্রতিক এক দিনে সেখানে থাকা অধিকাংশ ক্রেতাই এএফপিকে জানান, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তারা বেশ সন্তুষ্ট।
৪৭ বছর বয়সী জেসন সুলিভান, যিনি তেল ও গ্যাস খাতে কাজ করেন, বলেন, ট্রাম্পের ‘ড্রিল, বেবি, ড্রিল’ মনোভাব ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগকে উপেক্ষা করে পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত তাঁদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু টেক্সাসে না, সারা দেশে নতুন নতুন প্রকল্প ও উন্নয়ন দেখছি। আগের প্রশাসনে পিছিয়ে পড়া অনেক প্রকল্প এখন বাস্তবায়নের পথে।’
৫৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত কিম ভানেক বলেন, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিন দারুণভাবে কেটেছে।
এই সময়েই প্রশাসন দশ হাজারেরও বেশি সরকারি কর্মচারী ছাঁটাই করেছে, বেশিরভাগ দেশের ওপর শুল্কারোপ করে বিশ্ব বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে, ও অনিয়মিত অভিবাসীদের ব্যাপক হারে বহিষ্কার অভিযান চালিয়েছে।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি মানবিক সহায়তা প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, গণমাধ্যম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে এবং শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ অভিযান’ শুরু হয়েছে।
ভানেক বলেন, ‘ট্রাম্প গত চার বছর ধরে পরিকল্পনা করছিলেন। অনেকেই ভাবেন, রাতারাতি সবকিছু বদলে যাবে। তা হবে না। কিন্তু উনি সঠিক পথে আছেন। পরের তিন বছরে অনেক ভালো কিছু দেখা যাবে।’
‘আরও ভালোভাবে করা যেত’
তবে সবার অভিমত এক নয়। ৩৪ বছর বয়সী রিপাবলিকান অগাস্ট মানি, যিনি স্বাস্থ্যসেবা প্রযুক্তি খাতে কাজ করেন, বলেন, ‘ঘন ঘন পাল্টানো শুল্কনীতি বিভ্রান্তিকর।’
তিনি বলেন, ‘আমি বুঝি, দেশীয় শিল্প ফিরিয়ে আনার বড় লক্ষ্যের কথা। তবে বিষয়টা আরও ভালোভাবে করা যেত। যে হিসাব ব্যবহার করা হয়েছে, তা অনেকটাই যুক্তিহীন।’
এছাড়াও আদালতের রায় ছাড়াই গ্যাং সদস্য সন্দেহে লোকদের এল সালভাদরের একটি ভয়াবহ কারাগারে পাঠানোর ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপও তিনি সমালোচনা করেন।
‘এটা বিপজ্জনক আর একটা ভয়ংকর দৃষ্টান্ত তৈরি করে,’ বলেন মানি।