ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : সরকার টেকসই সরকারি ক্রয় (এসপিপি) প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করছে এবং এই বিশাল কাজের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক সক্ষমতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনি কভারেজ এবং সকল ক্রয় নথির পুনর্বিন্যাস।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট কর্তৃপক্ষ (বিপিপিএ), আইএমইডি-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা আশফাকুর রহমান আজ রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের এসপিপি নীতি সংক্রান্ত নীতি সংলাপে এই তথ্য জানান।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিপিপিএ -এর পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন এসপিপি বাস্তবায়নের জন্য বিপিপিএ-এর রোডম্যাপ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত উপস্থাপনা করেন।
বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এখানে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) শিট্রেডস ইনিশিয়েটিভের সহযোগিতায়, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন অফিস (এফসিডিও) এর সহায়তায় নীতি বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলি চিহ্নিত করার জন্য এসপিপি নীতি সম্পর্কিত একটি জরিপের প্রতিবেদন প্রচারের জন্য এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে না হলেও, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাকে ডিজিটাইজড করেছে। ক্রয়ের একটি বড় অংশ এখন বহুল পরিচিত ই-জিপি (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) সিস্টেমের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
মির্জা আশফাকুর বলেন, সরকার এখন এসপিপি বাস্তবায়নের উপর মনোযোগ দিচ্ছে। সরকারি ক্রয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী লক্ষ্য ১২.৭ অর্জনের জন্য বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য নারী উদ্যোক্তা ও দরপত্রদাতা সহ সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি স্টিয়ারিং কমিটি এ সংক্রান্ত বাস্তবায়ন তদারকি করছে। এ লক্ষ্যে, বিপিপিএ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে পরামর্শ করছে এবং এর অংশ হিসেবে, কর্তৃপক্ষ নারী উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতের সাথে আরও পরামর্শ করতে যাচ্ছে।
বিপিপিএ প্রথমে ২০২৩ সালে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এসপিপি নীতিতে নির্ধারিত ছয়টি পণ্যে পাইলট ভিত্তিতে এসপিপি বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ মনিটরের ২০২৩/২৪ বছরের নারী প্রতিবেদনের উল্লেখ করে আশফাকুর বলেন, বিশ্বজুড়ে নারী উদ্যোক্তা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নারীরা উচ্চ-প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবনী ব্যবসায় ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত হচ্ছে। তবুও তারা সরকারি ক্রয়ের মতো বাজারে অসম প্রবেশাধিকার সহ নানা বাধার মুখোমুখি হচ্ছে।
বিপিপিএ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে প্রায় ৭.২ শতাংশ ব্যবসার মালিক নারীরা। এছাড়া, শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুসারে, দেশের উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের লিঙ্গ বৈষম্য বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, নারীরা মোট কর্মশক্তির প্রায় অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও, ব্যবসায়িক মালিকানায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী, যেখানে প্রতি তিনটি ব্যবসার মধ্যে প্রায় একটির মালিক নারী, সেখানে বাংলাদেশের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য এবং তাদের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য লক্ষ্যযুক্ত নীতি ও উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
আশফাকুর বলেন, এই কারণেই এসপিপি নীতি বাস্তবায়ন কেবল সরকারি খাতের দায়িত্ব নয় বরং এটি একটি সামাজিক অঙ্গীকার।
বিল্ড এর সিইও ফেরদৌস আরা বেগম একটি জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন যেখানে নারী মালিকানাধীন উদ্যোগ (ডব্লিউওই) এর ব্যবসায়িক অংশগ্রহণ এবং সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, জরিপকৃত ডব্লিউওই-দের ৯০ শতাংশ পাবলিক
প্রকিউরমেন্টে অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) পদ্ধতিকে সমর্থন করে এবং মাত্র ৩০ শতাংশ অধিক জটিল ওপেন টেন্ডারিং পদ্ধতি (ওটিএম) ব্যবহার করে। তিনি এ বিষয়ে সকলের মধ্যে, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
আইটিসির শিট্রেডস ইনিশিয়েটিভের নীতি বিষয়ক প্রধান দিইনা জেম আরবো নারী-মালিকানাধীন ব্যবসার একটি আদর্শ সংজ্ঞাসহ নারী সংবেদনশীল পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো তুলে ধরেন।
তিনি মহিলা উদ্যোক্তাদের সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় নারী সংবেদনশীল বিধানগুলো এবং প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করার উপায়গুলি সুস্পষ্টভাবে অনুধাবন করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
দিইনা নারী সংবেদনশীল পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো সৃষ্ট প্রভাব পরিমাপ করার জন্য একটি কর্ম পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।
তিনি সুপরিকল্পিত রোডম্যাপের পাশাপাশি একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন, যার মধ্যে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের একটি কাঠামোগত ডেটাবেস থাকা আবশ্যক।
অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন মহিলা উদ্যোক্তা, ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান, বিপিপিএ কর্মকর্তা, উন্নয়ন অংশীদাররা এই বিষয়ে মতবিনিময় করার জন্য উপস্থিত ছিলেন।
মহিলা দরপত্রদাতা এবং উদ্যোক্তারা সরকারি ক্রয়ে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরেন।