ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : পেরুর প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতার কেন্দ্র ‘কারাল’ শহরের পবিত্র এলাকায় খননকার্য চালিয়ে ৫,০০০ বছর আগের এক অভিজাত নারীর মমিকৃত দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। এ আবিষ্কারে প্রমাণ মিলেছে, ওই সভ্যতায় নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।
'যে কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে, তা সম্ভবত এক উচ্চ মর্যাদার নারীর—অভিজাত এক নারীর,' বলেন প্রত্নতাত্ত্বিক ডেভিড পালোমিনো।
পেরু থেকে এএফপি জানায়, মমিটি উদ্ধার হয়েছে কারাল শহরের অন্তর্গত পবিত্র স্থান অ্যাস্পেরো থেকে, যা ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত ৩০ বছরের বেশি সময় একটি আবর্জনার স্তূপ ছিল। পরে এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় রূপ নেয়।
পালোমিনো জানান, খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ সালের সময়কার এ দেহাবশেষ খুব যত্নসহকারে সংরক্ষিত ছিল। এর কিছু ত্বক, নখ ও চুল অবশিষ্ট ছিল। একাধিক স্তরের বস্ত্র এবং একটি রঙিন ম্যাকাও পাখির পালক দিয়ে তৈরি চাদরে মমিটি মোড়া ছিল।
ম্যাকাও হলো টিয়াপাখি পরিবারের অন্তর্গত রঙিন এক প্রজাতি।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সামনে প্রদর্শিত হয় সেই নারীর সমাধি-উপকরণ বা কবরের সরঞ্জাম। এর মধ্যে ছিল টুকান পাখির ঠোঁট, একটি পাথরের বাটি এবং একটি খড়ের তৈরি ঝুড়ি।প্রাথমিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাওয়া এই দেহাবশেষের নারীটির বয়স ছিল আনুমানিক ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে, উচ্চতা ছিল প্রায় ১.৫ মিটার (৫ ফুট)। তাঁর মাথায় একটি অলঙ্কার সজ্জিত পাগড়ি ছিল, যা তাঁর সামাজিক মর্যাদা নির্দেশ করে।
পালোমিনো বলেন, 'এখন পর্যন্ত সাধারণভাবে ধারণা করা হতো যে শাসকেরা পুরুষই হতেন অথবা সমাজে তাদের ভূমিকাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু এই আবিষ্কার প্রমাণ করে, কারাল সভ্যতায় নারীরাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।'
কারাল সভ্যতা খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে বিকাশ লাভ করে—মেসোপটেমিয়া, মিশর ও চীনের প্রাচীন সংস্কৃতির সমসাময়িক হিসেবে।
শহরটি লিমা থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার (১১৩ মাইল) উত্তরে এবং প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) দূরে সুফে উপত্যকার উর্বর অঞ্চলে অবস্থিত।
২০০৯ সালে কারালকে জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।