দামেস্কে হু হু করে বাড়ছে ‘আসাদ মোজা’র বিক্রি

বাসস
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১১:৫৮

ঢাকা, ৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : দামেস্কের একটি স্মারক সামগ্রীর দোকানে এখন সবচেয়ে বিক্রীত পণ্য—একজোড়া মোজা। তবে সাধারণ কোনো মোজা নয়, এর গায়ে উৎকীর্ণ রয়েছে ব্যঙ্গচিত্রে রূপান্তরিত বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবারের ছবি। উৎখাত একনায়কের পরিবারকে বিদ্রুপ করে তৈরি এসব মোজা এখন যেন নাগরিকদের প্রতিরোধ ও পরিহাসের এক প্রতীক।

দামেস্ক থেকে এএফপি জানায়, ৩১ বছর বয়সী দোকানি বাসেল আল-সাতি বলেন, ‘দীর্ঘদিন যারা আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, আমি তাঁদের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি।’ সাদা রঙের গোড়ালি-ঢাকা এসব মোজা স্থানীয়রা যেমন সংগ্রহ করছেন, তেমনি বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরাও কিনে নিচ্ছেন কেউ পরার জন্য, কেউবা শুধু পায়ের নিচে মাড়ানোর জন্য।

আরব সংস্কৃতিতে কারো মুখচ্ছবি পদদলিত করা অত্যন্ত অবমাননাকর। ফলে আসাদ পরিবারের ছবি-যুক্ত এই মোজা মানুষের রাগ আর বিদ্বেষ প্রকাশের এক উপায় হয়ে উঠেছে।

২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রায় ১৪ বছর দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে উৎখাত হন বাশার আল-আসাদ। তার পর থেকেই আসাদ পরিবারের ছবিগুলো হয়ে উঠেছে বিদ্রূপের পাত্র।

একটি মোজার গায়ে লেখা ‘আমরা তাদের মাড়িয়ে চলব’, অন্য একটি মোজায় হাফেজ আল-আসাদের ছবির নিচে লেখা: ‘আসাদেরা দেখতে এমনই’—যেটা আসাদের নামের সঙ্গে শব্দখেলা করে তৈরি (আরবি ‘আসাদ’ অর্থ ‘সিংহ’)।

বাশারের ভাই মাহের আল-আসাদ—যিনি ‘ক্যাপটাগনের রাজা’ নামে কুখ্যাত—তাকেও দেখা যাচ্ছে ব্যঙ্গচিত্রে। পশ্চিমা সরকারগুলো মাহেরকে সিরিয়াকে ‘মাদক রাষ্ট্রে’ পরিণত করার দায়ে অভিযুক্ত করেছে।

‘উৎসবের এক নতুন রূপ’

বাসেল সাতির দোকানে বিপ্লবের প্রতীক চিত্র দিয়ে সাজানো। দোকানের দরজার সামনে মাটিতে আসাদের ছবি রাখা, যাতে লোকজন তাকে পায়ের নিচে মাড়িয়ে ভেতরে ঢুকতে পারে।

তিনি বলেন, ‘যারা দামেস্কের উমাইয়া স্কয়ারে গিয়ে উৎসবে যোগ দিতে পারেননি, তাঁদের জন্য এই বিকল্প উদযাপন।’

আসাদ পতনের পর উমাইয়া স্কয়ারে তিন তারকা-সংবলিত বিপ্লবের পতাকা হাতে হাজারো মানুষ উদযাপন করে। কেউ কেউ জার্মানি থেকে ফেরা আফাফ সাবানোর মতো প্রবাসীরা বিশেষভাবে এসব মোজা কিনছেন বন্ধুদের উপহার দিতে।

‘আমার বন্ধুরা সিরিয়ায় আসতে পারছে না, তাই এর চেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে!’—বলেন ৪০ বছর বয়সী সাবানো, যিনি এক ডজনের বেশি মোজা কিনেছেন।

‘এইভাবেই প্রতিশোধ নিলাম’

মোজার নকশাকার জিয়াদ জাওয়িত (২৯) বলেন, ‘আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পরই এই মোজার ভাবনা মাথায় আসে।’ শুরুতে অল্প উৎপাদন করলেও পরে চাহিদা দেখে তিন মাসে ২ লাখেরও বেশি মোজা তৈরি করেছেন তিনি।

‘মানুষ তাঁকে ঘৃণা করে। আমিও এভাবেই প্রতিশোধ নিয়েছি,’ বলেন জাওয়িত।

এসব মোজার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং টিভি স্যাটায়ারে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি আসাদের বিখ্যাত এক উক্তিও এখন উপহাসের বিষয়।

২০২৩ সালের আগস্টে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসাদ বলেছিলেন, ‘আমি এরদোগানের সঙ্গে কেন দেখা করব? জুস খাওয়ার জন্য?’

এই বাক্য এখন শহরের জুসের দোকানে পোস্টারে ব্যবহৃত হচ্ছে, সঙ্গে আসাদের বিদ্রুপমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
লেবাননের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ
শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস সরবরাহ করা হবে : জ্বালানি উপদেষ্টা
ঐকমত্য কমিশনের সাথে নাগরিক ঐক্যের বর্ধিত আলোচনা অনুষ্ঠিত
সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে সভ্যতা বিনির্মাণে প্রতিনিয়ত অবদান রেখে যাচ্ছেন প্রকৌশলীরা: কাদের গনি চৌধুরী
জুলাই বিপ্লবে শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মামলা
প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ শুরু ১০ মে
শ্রম পরিদর্শন ও বিভাগের কার্যাবলী সম্পূর্ণরূপে ডিজিটালাইজড করা হবে : শ্রম সচিব
চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজত থেকে পালানো আরেক আসামি গ্রেফতার
ইসরাইলের ছাড়া সব জাহাজের জন্য জলপথ নিরাপদ: হুথি
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ বন্ধে ‘সংলাপে’র আহ্বান যুক্তরাজ্যের
১০