ঢাকা, ৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির মধ্যে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার মধ্যেই এই বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আলোচনা হয় অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও সম্পর্ক পুনর্গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, বৈঠকের ঠিক আগে ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’- এ কানাডার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি কানাডাকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে চড়ে চলা’ দেশ বলে অভিহিত করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি ওয়েস্ট উইংয়ের বাইরে সদ্য পুনর্নির্বাচিত কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে স্বাগত জানান।
৬০ বছর বয়সী লিবারেল নেতা কার্নি নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কানাডার স্বার্থ রক্ষা করবেন। তিনি বলেছিলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কখনোই নিজের করে নিতে পারবে না' এবং হুঁশিয়ার করেন যে, দুই দেশের সম্পর্ক আর কখনো আগের মতো, হবে না।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প এরই মধ্যে কানাডার সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন। তিনি কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ সাধারণ শুল্ক আরোপ করেছেন, সেই সঙ্গে অটোমোবাইল খাতে পৃথক হারে শুল্ক বসিয়েছেন—যার কিছু এখন আলোচনা চলায় স্থগিত আছে। একইভাবে তিনি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপরও বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন।
ট্রাম্প কার্নির আগমন উপলক্ষে বলেন, 'আমি তার সঙ্গে কাজ করতে চাই,' তবে ইঙ্গিত দেন যে বৈঠকটি সহজ হবে না।
তিনি পোস্ট করেন, 'আমেরিকা প্রতিবছর কানাডাকে ২০০ বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি দিচ্ছে, সঙ্গে দিচ্ছে বিনা মূল্যে সামরিক সুরক্ষা এবং আরও অনেক কিছু। আমাদের তাদের কিছু দরকার নেই, শুধু বন্ধুত্ব ছাড়া—যেটি আশা করি সবসময় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছেন, সম্ভবত ওটাই আমার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থাকবে।'
অন্যদিকে, নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান নেওয়া কার্নি সফর শুরুর সময় ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) লেখেন, 'কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র যখন একসঙ্গে কাজ করে, তখনই তারা সবচেয়ে শক্তিশালী—এবং সেই কাজটি এখন থেকেই শুরু হচ্ছে।'
কার্নি বলেন, ন্যাটোভুক্ত কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ধরনে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটবে। তিনি বলেন, “আমাদের পুরনো সম্পর্ক—যেখানে ক্রমান্বয়ে একীভবন হচ্ছিল—তা শেষ। এখন প্রশ্ন, আগামীতে কীভাবে দুই দেশ সহযোগিতা করবে।'
ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক বিষয়ে তিনি জানান, 'আমি সর্বোত্তম চুক্তির জন্য লড়াই করব।'
তবে ট্রাম্পের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক ফক্স বিজনেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'চুক্তি করাটা সত্যিই জটিল হবে। তাদের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা মূলত আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল—আমি বুঝি না কীভাবে এটা ভালোভাবে শেষ হবে।'
উল্লেখযোগ্যভাবে, ট্রাম্প কানাডার নির্বাচনেও হস্তক্ষেপ করেছিলেন। তিনি এক পোস্টে বলেছিলেন, কানাডা যদি 'আমাদের প্রিয় ৫১তম রাজ্য' হয়ে যায়, তাহলে তারা 'শূন্য শুল্ক’ সুবিধা পাবে।
সেই সময় পিয়েরে পয়লিয়েভরের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি নির্বাচনে এগিয়ে ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের আক্রমণ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর জনপ্রিয়তা হ্রাসের ফলে সমীকরণ পাল্টে যায়। কার্নি মার্চে ট্রুডোর জায়গায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
প্রাক্তন ব্যাংকার কার্নি অর্থনৈতিক সংকট ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা থাকার কারণে ভোটারদের আস্থা অর্জন করেন। তিনি আগে ব্যাংক অব কানাডা ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্রেক্সিট ভোটের পর তিনি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তবে এখন তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো—নিজের ভাষাপ্রয়োগে সংযত ও পরিমিত হলেও—যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত ও আক্রমণাত্মক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এক টেবিলে বসে কার্যকর আলোচনা করা।
অটোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জেনেভিভ তেলিয়ে বলেন, 'কার্নির জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, কারণ তিনি প্রচারণায় বলেছেন, ট্রাম্পের মোকাবিলা করতে পারবেন।'
তবে তিনি সতর্ক করেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মতো পরিস্থিতিতে যেন কার্নি না পড়েন। ফেব্রুয়ারিতে জেলেনস্কি ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের কাছে কড়া তিরস্কারের মুখে পড়েন।
তেলিয়ে আরও বলেন, 'কার্নির একটি বাড়তি সুবিধা হলো, তিনি ট্রুডো নন। ট্রাম্প ট্রুডোকে বরাবরই অবজ্ঞা করে ‘গভর্নর’ বলে ডাকতেন এবং একরকম ঘৃণা করতেন।'