ঢাকা, মে, ২০২৫ (বাসস) : হোয়াইট হাউজ এখন আর শুধু সরকারি কাজের জায়গা থাকছে না। নিজস্ব মতাদর্শ প্রচারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেখানে গড়ে তুলছেন আলাদা মিডিয়া জগৎ। ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য আলাদা ব্রিফিং হচ্ছে। ট্রাম্পকে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নানা মজার মিম। এমনকি তাকে পোপ বা ‘স্টার ওয়ার্স’-এর জেডাই হিসেবে দেখানোর ছবিও প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে সরাসরি ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবেই হোয়াইট হাউজ যেন তৈরি করছে নিজস্ব মিডিয়া মহাবিশ্ব।
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট তিনটি বিশেষ ব্রিফিং করেন। যেখানে কেবল নির্দিষ্ট কিছু ডানপন্থী সংবাদ মাধ্যম ও ইনফ্লুয়েন্সারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এসব ব্রিফিং সাধারণত হোয়াইট হাউসের বাইরে একটি বিশেষ অডিটোরিয়ামে হয়। কিন্তু সেখানে সাধারণ সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নেই।
গত ৩০ এপ্রিল এরকম একটি ব্রিফিংয়ে, ডানপন্থী কর্মী জ্যাক পোসোবিয়েককে লেভিট বলেন, "আমি আপনার প্রশ্নের সঙ্গে একমত। যা সাধারণত হই না।" সেখানে ডম লুকরে নামের এক ইনফ্লুয়েন্সার প্রেস সেক্রেটারিকে প্রশ্ন করেন, “ওবামা বা হিলারির বিরুদ্ধে কি কখনও তদন্ত হতে পারে না?” তবে এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজ কোনো মন্তব্য করেনি।
প্রথম দফার শাসনামল থেকেই ট্রাম্পের দল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে পারদর্শী। ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে তিনি ইনফ্লুয়েন্সার ও পডকাস্টারদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হন। এর পেছনে ১৯ বছর বয়সী ছেলে ব্যারনের প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তিনিই সোশ্যাল মিডিয়া ও ইনফ্লুয়েন্সারদের গুরুত্ব সম্পর্কে তার বাবাকে উৎসাহিত করছেন।
এই কৌশলকে এবার সরকারিভাবে হোয়াইট হাউজের যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস একে ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় ডানপন্থী মিডিয়া আউটলেট’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সোনিয়া গিপসন ব্যাংকিন বলেন, “এই মিডিয়া কৌশলে সোশ্যাল মিডিয়া, এআই ইমেজ এবং পক্ষপাতদুষ্ট ইনফ্লুয়েন্সারের মাধ্যমে বিকল্প বাস্তবতা তৈরি করা হচ্ছে।”
নতুন মিডিয়া কৌশলের অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউস চালু করেছে ‘হোয়াইট হাউজ ওয়্যার’ নামের একটি ওয়েবসাইট। যেখানে সরকারের পক্ষে ইতিবাচক খবর ও সোশ্যাল মিডিয়ার লিংক শেয়ার করা হচ্ছে। সাইটটি দেখতে অনেকটা ‘ড্রাজ রিপোর্ট’-এর মতো। এটি সম্পর্কে ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র এক্সে লেখেন, “ফেক নিউজকে মারো গুলি, হোয়াইট হাউজ ওয়্যার চেক করো!”
হোয়াইট হাউস অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ কিছু প্রধান সংবাদ সংস্থার প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে। বিশেষ করে, গালফ অব মেক্সিকোকে ‘গালফ অব আমেরিকা’ না বলার কারণে এপির সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। প্রেস পুলে কারা থাকবে, সেটাও এখন ঠিক করে দিচ্ছে হোয়াইট হাউজ।
সম্প্রতি পোপের পোশাক পরিহিত তার একটি এআই তৈরি ছবি পোস্ট করা হয়। ট্রাম্পের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ওই ছবি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। যদিও প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি নিজে পোস্ট করেননি, তবে স্ত্রী মেলানিয়া ছবিটিকে ‘কিউট’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, “তারা (সমালোচনাকারি) মজাও বোঝে না। ”
গত রোববার, ‘মে দ্য ফোর্স’ দিবসে হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে একটি ছবি পোস্ট করা হয়। যেখানে ট্রাম্পকে লাল লাইটসেবার হাতে শক্তিশালী যোদ্ধা হিসেবে দেখানো হয়েছে। পোস্টে লেখা ছিল, “তোমরা বিদ্রোহী নও, তোমরাই সাম্রাজ্য।”
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, "স্টার ওয়ার্স" বিশ্বে লাল লাইটসেবার হলো ‘ডার্ক সাইড’-এর প্রতীক। যা অশুভ শক্তির প্রতীক। এটি বিতর্ককে আরও উসকে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এই মিডিয়া কৌশল একটি ‘প্রতিরোধহীন প্রতিধ্বনি কক্ষ’ তৈরি করছে, যেখানে শুধুই সমর্থকদের কথা শোনা হচ্ছে এবং বাস্তবতা থেকে দূরে থাকা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
অধ্যাপক সোনিয়া গিপসন আরও বলেন, “ট্রাম্প এমন এক মিডিয়া জগৎ তৈরি করছেন, যেখানে শাসনব্যবস্থা আর বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই।”