ঢাকা, ৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধে সাফল্যের অভাব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আবারও 'আমাদের সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক শত্রু' চীনের প্রতি মনোযোগের আহ্বান জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, 'ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুত্বহীন নয় ঠিকই, তবে আমি বলব, চীন নিয়ে যা ঘটছে, তা ভবিষ্যতের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বপরিস্থিতিতে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ,' ফক্স নিউজের শন হ্যানিটিকে বলেন রুবিও।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলে চীনকে দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে আসছে। কেউ কেউ মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটলে, তা বেইজিংয়ের মোকাবেলায় সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করবে—বিশেষত যদি চীন তাইওয়ানের দিকে আগ্রাসী হয়।
তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ১০০ দিনেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও চীনের ওপর প্রত্যাশিত মনোযোগের ঘাটতি লক্ষ্য করছেন বিশ্লেষকরা। ট্রাম্প চীনের পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করেছেন বটে, তবে স্পষ্ট কোনো কৌশল এখনও প্রকাশিত হয়নি।
সিনেট শুনানিতে রুবিও সতর্ক করেছিলেন, আগামী এক দশকের মধ্যে চীন 'আমাদের জীবনের প্রায় সবকিছুতেই প্রভাব ফেলতে পারে'—তবু এখনো তিনি পূর্ব এশিয়া সফর করেননি। বরং ট্রাম্পের অগ্রাধিকারে থাকা লাতিন আমেরিকান অভিবাসীদের নির্বাসন ও ইউক্রেন ইস্যুতে কূটনীতিতেই মনোযোগ দিয়েছেন।
'হোয়াইট হাউসের ধারণা ছিল, তারা এখন চীনের সঙ্গে ভিন্ন এক অবস্থানে থাকবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি,' বলেন সাবেক শীর্ষ মার্কিন বাণিজ্য আলোচক এবং বর্তমানে এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি কাটলার।
তিনি বলেন, 'ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ এত দ্রুত বেড়ে গেছে যে, এখন তা উল্টে দেওয়া কঠিন।' চীন এদিকে 'দীর্ঘমেয়াদি খেলা খেলছে', প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রকে দোষী করে তার দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করছেন।
শি-তে আস্থা
রুবিওর মতো কট্টরপন্থীদের দ্বারা ঘেরা হলেও ট্রাম্প নিজে লেনদেন-কেন্দ্রিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক মনোভাবের, এবং শি জিনপিংয়ের প্রতি তার একধরনের মোহপ্রবণতা রয়েছে বলে মনে করেন কাটলার।
"তিনি মনে করেন, শি’র সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো এবং দুই নেতা মুখোমুখি হলে সম্পর্ক আবার সঠিক পথে ফিরতে পারে,' বলেন কাটলার।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই সপ্তাহেই সুইজারল্যান্ডে প্রথম আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য আলোচনা করতে যাচ্ছে, এক মাস আগে ট্রাম্প চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর। জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে।
'তারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য করছে না বলেই তাদের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে,' মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন ট্রাম্প।
‘সূক্ষ্ম কৌশল’ কী?
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের তুলনায় দ্বিতীয়বার অনেক বেশি র্যাডিকাল পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে চীনের ব্যাপারে কিছুটা বাস্তববাদী মনোভাবও দেখা যাচ্ছে, যদিও প্রচারণায় বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ছিল জ্বালাময়ী ভাষা।
চীনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে ট্রাম্প যাকে মনোনীত করেছেন, সেই সাবেক সিনেটর ডেভিড পার্ডিউ প্রচারণায় লিখেছিলেন, 'আমেরিকা এখন যুদ্ধাবস্থায়।' তবে শুনানিতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চীন কৌশল হওয়া উচিত 'সূক্ষ্ম, অরাজনৈতিক ও কৌশলগত।'
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনও চীনকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, তবে জলবায়ু পরিবর্তন এবং ফেন্টানিল নিয়ন্ত্রণসহ নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতার চেষ্টাও করেছিল।
একইসঙ্গে তারা চীনের মোকাবেলায় আঞ্চলিক জোট ও নিরাপত্তা কৌশল গ্রহণ করে। দক্ষিণ জাপান ও উত্তর ফিলিপাইনে মার্কিন বাহিনী পুনর্বিন্যাস করা হয়, যা তাইওয়ানের কাছে। চীনা প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধে যৌথ উদ্যোগও নেওয়া হয়।
অন্যদিকে ট্রাম্প ইউরোপীয় মিত্রদের ‘ভাড়াটে’ বলে ব্যঙ্গ করেছেন এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকেও শুল্কে আঘাত করেছেন, যদিও কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক ছাড় দিয়েছেন।
এ সুযোগে চীন দ্রুত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করেছে—যারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপে চীন বিষয়ক বিশ্লেষক আলি ওয়াইন বলেন, 'ইউরোপ ও এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতার ভিত্তি দুর্বল করে ট্রাম্প আসলে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রভাবই কমিয়ে দিচ্ছেন।'
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ আসলে সুপরিকল্পিত চীন কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে চীন আরও বেশি আত্মনির্ভরতার পথে যাচ্ছে এবং নিজেকে 'বিশ্বের প্রধান শক্তির চেয়ে বেশি স্থিতিশীল ভূরাজনৈতিক শক্তি" হিসেবে উপস্থাপন করছে।
"শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথিত বন্ধুত্ব এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও, ট্রাম্প এমন এক বাণিজ্যিক অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছেন, যেখান থেকে মুখ রক্ষা করে বের হওয়া কোনো নেতার পক্ষেই সহজ নয়, ' বলেন ওয়াইন।