ঢাকা, ২০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের বিরুদ্ধে শুক্রবার বাগদাদসহ বিভিন্ন শহরে ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া ধর্মীয় নেতা মোকতাদা সদররের সমর্থনে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছে বলে জানিয়েছেন এএফপি’র সংবাদদাতারা।
বাগদাদ থেকে এএফপি জানায়, বাগদাদের সদর সিটিতে জুমার নামাজের পর সমবেত বিক্ষোভকারীরা রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা মাথায় নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন: ‘ইসরাইল না! আমেরিকা না!’
৫৪ বছর বয়সী ট্যাক্সিচালক আবু হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি অন্যায় যুদ্ধ... ইসরাইলের কোনো অধিকার নেই ইরানকে হামলা করার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নয়। ইসরাইল ও আমেরিকা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ওপর আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে।’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ইরান এ যুদ্ধে বিজয়ী হবে এবং ইরাক প্রতিবেশী ইরানকে ‘অর্থ, অস্ত্র ও প্রতিবাদ’ দিয়ে সহায়তা করবে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বসরায়ও জুমার নামাজের পর প্রায় ২,০০০ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয় বলে জানিয়েছে এএফপি।
৪৩ বছর বয়সী ধর্মীয় নেতা কুসাই আল-আসাদি বলেন, ‘ইরাকের আকাশসীমা ব্যবহার করে ইসরাইলের ইরানে হামলা করা আমাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। এটি ইসলামের বিরুদ্ধে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাভাস।’
তিনি মোকতাদা সদরের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বলেন, ‘ইরাক যেন এই সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে, সেটিই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য।’
সপ্তাহের শুরুতে এক বিবৃতিতে সদর ‘জায়নবাদী ও মার্কিন সন্ত্রাসবাদ’ এবং ‘পার্শ্ববর্তী ইরান, ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনের ওপর হামলা’র নিন্দা জানান।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী মিলিশিয়া পরিচালনার পর সদর এখনও ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া জনগণের মধ্যে মিলিয়ন অনুসারীসহ বিশাল প্রভাব বজায় রেখেছেন।
তিনি অতীতে তেহরান-সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়াদেরও সমালোচনা করেছেন, যারা ঘোষণা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরাইলের পক্ষে যুদ্ধে যুক্ত হয়, তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত হানবে।
শুক্রবার ইসরাইল একটি হামলা চালিয়ে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানে এবং শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের হত্যা করে।
ইসরাইল দাবি করেছে, তারা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতেই এ হামলা চালিয়েছে। তবে তেহরান দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এই হামলার জবাবে ইরান ইসরাইলের দিকে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে প্রতিশোধ নিয়েছে, যার ফলে দুই দেশের আবাসিক এলাকাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইরাক একদিকে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং অন্যদিকে ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রেরও কৌশলগত অংশীদার। ফলে দেশটি বহুদিন ধরেই এই দুই শত্রু পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টায় রয়েছে।
দীর্ঘ যুদ্ধ ও অস্থিরতার পর ইরাক সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে পেয়েছে।