ঢাকা, ২৭ জুন, ২০২৫ (বাসস) : গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, শুক্রবার ইসরইলি বাহিনীর হাতে অন্তত ৬২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জন যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ত্রাণের অপেক্ষায় ছিলেন।
গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, ত্রাণপ্রত্যাশীদের হত্যার এই খবর গাজার ত্রাণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে মৃত্যুর দীর্ঘ ধারাবাহিকতার সর্বশেষ ঘটনা, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত একটি প্রতিষ্ঠান মূলধারার মানবিক সংস্থাগুলোর জায়গা দখল করে নিয়েছে।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল এএফপিকে জানান, শুক্রবার গাজা জুড়ে ইসরাইলি বিমান হামলা ও গুলিতে ৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখছে। তবে গাজার মধ্যাঞ্চলে যে স্থানে একজন ত্রাণপ্রত্যাশীর মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, সেখানে তাদের বাহিনী কোনো গুলি চালিয়েছে, এমন দাবি অস্বীকার করেছে তারা।
বাসসাল জানান, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ছয়জন এবং কেন্দ্রীয় গাজার আরেক স্থানে এক ব্যক্তি নিহত হন, যেখানে সেনাবাহিনী গুলি চালানোর কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।
তিনি আরও বলেন, গাজা সিটির দক্ষিণ-পশ্চিমে ত্রাণের জন্য অপেক্ষাকালে আরেকটি হামলায় তিনজন নিহত হন।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ৫০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
জিএইচএফ দাবি করেছে, তাদের ত্রাণ বিতরণ পয়েন্টের সরাসরি আশপাশে কোনো প্রাণঘাতী গুলির ঘটনা ঘটেনি।
আন্তর্জাতিক মেডিকেল দাতব্য সংস্থা ‘ডক্টরস উইদআউট বর্ডারস’ (এমএসএফ) শুক্রবার জিএইচএফ-এর ত্রাণ কার্যক্রমকে ‘মানবিক সাহায্যের ছদ্মবেশে হত্যাযজ্ঞ’ বলে উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে।
তারা জানিয়েছে, ৮ জুনের সপ্তাহে, যখন জিএইচএফ গাজার কেন্দ্রীয় নেতসারিম করিডোরে একটি বিতরণ কেন্দ্র চালু করে, তখন কাছের দেইর আল-বালাহ এলাকায় এমএসএফ পরিচালিত ফিল্ড হাসপাতালে আগের সপ্তাহের তুলনায় গুলিবিদ্ধ রোগীর সংখ্যা ১৯০ শতাংশ বেড়ে যায়।
গাজায় এমএসএফ-এর জরুরি সমন্বয়ক আইতোর জাবালগোগিয়াসকোয়া এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমানে বিতরণকেন্দ্রগুলো যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তাতে ‘যদি কেউ আগেভাগে গিয়ে চেকপয়েন্টের কাছে পৌঁছে যায়, তাহলে তাকে গুলি করা হয়।’
‘যদি নির্ধারিত সময়ে পৌঁছেও ভিড় বেশি হয় এবং কেউ বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলেও গুলি করা হয়।’
‘যদি কেউ দেরি করে পৌঁছে, তবে বলা হয় সে ‘নিষিদ্ধ এলাকায়’ প্রবেশ করেছে- তাকেও গুলি করা হয়।’
এদিকে বাসসাল বলেন, শুক্রবার খান ইউনিস শহরের কাছে পাঁচটি পৃথক ইসরাইলি হামলায় ১০ জন নিহত হন। শহরের পূর্ব দিকে ‘অবিরাম গোলাবর্ষণের’ কথাও জানান তিনি।
হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, তারা শুক্রবার খান ইউনিসের পূর্বে একটি ইসরাইলি যান লক্ষ্য করে গোলা ছুঁড়েছে।
হামাস-ঘনিষ্ঠ ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা আল-কুদস ব্রিগেড জানিয়েছে, তারা আল-কাসসাম ব্রিগেডের সঙ্গে সমন্বয়ে খান ইউনিসের উত্তরে ইসরাইলি সেনাদের একটি দলকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
বাসসাল আরও জানান, শুক্রবার গাজার উত্তরে ছয়টি পৃথক হামলায় ৩০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে একজন জেলে, যাকে ‘ইসরাইলি যুদ্ধজাহাজ’ টার্গেট করে হামলা চালায়।
তিনি স্পষ্ট করেন, আটজন নিহত হন ‘উসামা বিন জায়েদ স্কুলে ইসরাইলি বিমান হামলা চালানোর পর’, যেখানে গৃহহীনরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গাজার কেন্দ্রীয় আল-বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে দুটি পৃথক ইসরাইলি হামলায় ১২ জন নিহত হন বলেও জানান বাসসাল।
গাজা উপত্যকায় গণমাধ্যমের ওপর ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞা এবং অনেক এলাকায় প্রবেশে প্রতিবন্ধকতার কারণে এএফপি এসব হতাহতের সংখ্যা ও বিবরণ স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার গাজায় তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত ছিল। এর আগে সপ্তাহের শুরুতে সেনাপ্রধান আইয়াল জমির ঘোষণা দেন, ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে গাজায় অভিযানেই আবারও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল আক্রমণ থেকে এই গাজা যুদ্ধ শুরু হয়, যেখানে ১,২১৯ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
ইসরাইলের পাল্টা সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৬,৩৩১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যেও বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘ তাদের এই হিসাবকে নির্ভরযোগ্য মনে করে।