হ্যানয়তে পেট্রোলচালিত বাইক নিষিদ্ধের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ স্কুটার চালকরা

বাসস
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১৩:০৮

ঢাকা, ২০ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) :  ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের কেন্দ্রস্থল ও এর আশপাশের এলাকায় জ্বালানি নির্ভর মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মোটরসাইকেল মালিক ও চালকদেরকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

রাজধানীর পরিবেশবান্ধব এই রূপান্তর, ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত এই রাজধানীর বাতাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে। 

৫২ বছর বয়সী গৃহিণী ডাং থুই হান প্রশ্ন তুলে বলেন, অবশ্যই সবাই চায় পরিবেশ ভালো হোক। কিন্তু কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই কেন আমাদের ওপর এই বোঝা চাপানো হচ্ছে? 

হান তার পরিবারের চারটি স্কুটার পরিবর্তে ই-বাইক কিনতে প্রায় ৮ কোটি ডং (৩,০০০ ডলার) খরচের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

হ্যানয় থেকে এএফপি জানায়, হ্যানয়ের স্কুটার চলাচল শহরের চেনা চিত্র। প্রায় ৯ কোটি জনসংখ্যার ভিয়েতনামে ৭ কোটির বেশি মোটরসাইকেল আছে, যা ভিড়ের সময় যানজটের মধ্যে ছুটে বেড়ায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দূষণের কারণে বছরে কমপক্ষে ৭০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ভিয়েতনাম এমন একটি দেশ, যেখানে তাদের গাড়ির ধোঁয়া নির্গমন নিয়মিতভাবে হ্যানয়কে বিশ্বব্যাপী দূষিত শহরের শীর্ষ তালিকায় নিয়ে গেছে।

গত সপ্তাহে দেশটির সরকার জানায়, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে শহরের ৩১ বর্গকিলোমিটারের কেন্দ্রীয় অংশে জীবাশ্ম  জ্বালানি চালিত বাইক চলাচল নিষিদ্ধ এবং পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে পুরো শহরে ধাপে ধাপে গ্যাস চালিত যান নিষিদ্ধ করা হবে।

হ্যানয়ের নিষিদ্ধ ঘোষিত অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ৬ লাখ বাসিন্দার একজন হান বলেন, ইলেকট্রিক বাইকের দাম ক্রমশ বাড়ছে। ‘ই-বাইক কিনতে গেলে আমাদের অনেক সঞ্চয় শেষ হয়ে যাবে।’ 

যদিও তিনি স্বীকার করেন যে, ই-বাইক দূষণ কমাতে সহায়ক, তবু তার আশপাশে কোনও চার্জিং স্টেশন না থাকায় তিনি উদ্বিগ্ন।

তিনি প্রশ্ন করেন,  যখন শহরের অবকাঠামো এখনো প্রস্তুত নয়, তখন মানুষকে কেন জোর করে তাদের বাহন বদলাতে বলা হচ্ছে?

ভিয়েতনামে অনেক পরিবারই দৈনন্দিন যাতায়াত, স্কুল, কাজ কিংবা অবসরের জন্য দুটি বা তার বেশি মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। এ কারণে পরিবেশ বান্ধব সংস্কারে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ওপর চাপ বেশি পড়ছে বলে অভিযোগ ওঠে।

লন্ডনে ২০২৩ সাল থেকে পুরনো ও দূষণকারী গাড়িগুলোর জন্য অতিরিক্ত ফি নেওয়া হয়। ফ্রান্সেও ২০১৮ সালে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন শুরু হয়েছিল জ্বালানির ওপর ‘সবুজ কর” আরোপকে কেন্দ্র করে।

‘খরচ অনেক বেশি’

হ্যানয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা প্রতিটি ই-বাইকে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডং (১১৪ ডলার) ভর্তুকি দেওয়ার কথা ভাবছে। এছাড়া পাবলিক বাস সেবা বাড়ানো এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথাও বিবেচনায় আছে।

ডেলিভারি অ্যাপ ‘গ্র্যাব’-এ কাজ করা ৪৫ বছর বয়সী ট্রান ভ্যান টান বলেন, ‘ই-বাইকে রূপান্তরের খরচ আমাদের মতো নিম্ন আয়ের লোকজনের পক্ষে অসম্ভব।’ 

তাছাড়া ব্যাটারির সীমাবদ্ধতা দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রার জন্য সমস্যার কারণ হবে বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন।

টান প্রতিদিন পাশের হাং ইয়েন প্রদেশ থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ বাইকে আসেন। 

তবুও শহরের উপ-মেয়র ডুং ডাক টুয়ান বলেন, বায়ু দূষণ মানবস্বাস্থ্য ও জীবনের মানের জন্য বড় হুমকি, তাই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

হ্যানয়ের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, শহরের দূষণের অর্ধেকেরও বেশি আসে পেট্রোল ও ডিজেল চালিত যানবাহন থেকে।

যদিও বিশ্বব্যাংক বলছে, এই হার ৩০ শতাংশ, কারখানা ও বর্জ্য পোড়ানোও বড় উৎস।

ইউরোপের বার্সেলোনা, প্যারিস ও আমস্টারডামের মতো শহরগুলোতেও অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের ব্যবহারে বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। ভিয়েতনামের অন্যান্য শহরও এই পথ অনুসরণ করতে চাইছে।

দক্ষিণের শহর হো চি মিন সিটি ধীরে ধীরে ই-বাইকে রূপান্তর ঘটাতে চায়। বিশেষ করে ডেলিভারি ও সার্ভিস কাজে ব্যবহৃত বাইকগুলোতে। তবুও অনেকেই সন্দিহান। 

৪২ বছর বয়সী অফিসকর্মী নগুয়েন মাই হোয়া বলেন, ‘এইভাবে এটা কার্যকর হবে না। কর্তৃপক্ষ বাইরের জেলা থেকে আসা পেট্রোলচালিত বাইক আটকাতে পারবে না। এটা বাস্তবসম্মত নয়।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রাজধানীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু
হজ ও ওমরাহ পালনকে সহজ ও সাশ্রয়ী করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে : বিমান সচিব
অধ্যক্ষ আব্দুল জব্বারের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক প্রকাশ
বিএনপি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজনীতি বিশ্বাস করে : সেলিমুজ্জামান
সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ঠেকাতে ইতিহাস চর্চায় মনোযোগ দিতে হবে : ড. মাহমুদুর রহমান
বাংলাদেশে সবার অধিকার সমান, এই দেশ সবার : সেনাবাহিনী প্রধান
ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে সোমবার ওয়াশিংটন যাচ্ছেন জেলেনস্কি
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া এতো রক্তপাত দেখিনি: মাহবুব মোর্শেদ
হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক ৪ লেনে ও বড়াইগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের দাবিতে মানববন্ধন
নতুন বাংলাদেশ গড়তে কোনো বিভাজন নয় : আমীর খসরু 
১০