স্কটল্যান্ড যাচ্ছেন ট্রাম্প, কড়া নিরাপত্তা ও বিক্ষোভের প্রস্তুতি

বাসস
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৫, ১৮:১৯

ঢাকা, ২৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার কূটনীতি, ব্যবসা ও অবসরের মিশ্র সফরে স্কটল্যান্ডে পৌঁছাবেন। এদিকে তার পারিবারিক মালিকানাধীন গলফ রিসোর্টগুলোর আশপাশে বিক্ষোভের প্রস্তুতির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে সেখানে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।

গ্লাসগো থেকে এএফপি জানায়, স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ট্রাম্পের মায়ের শিকড় রয়েছে এই অঞ্চলে। সফরকালে তিনি তার নামে নামকরণ করা দুটো সমুদ্রতীরবর্তী গলফ কোর্স- দক্ষিণ-পশ্চিমের টার্নবেরি ও উত্তর-পূর্বের অ্যাবারডিনে সময় কাটাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সময় রাত ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ ট্রাম্পকে বহনকারী ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ বিমানটি স্কটল্যান্ডে অবতরণ করার কথা। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শনিবার ও রোববার তার জনসমক্ষে কোনো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেই।

স্কটিশ পুলিশ জানিয়েছে, এডিনবার্গ ও অ্যাবারডিনসহ গলফ কোর্সের কাছে ব্যাপক বিক্ষোভের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে তারা দেশব্যাপী ‘বহুদিনব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অভিযান’ পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে।

গলফপ্রেমী ট্রাম্প গলফ কোর্স থেকে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও সে বৈঠকের বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

৭৯ বছর বয়সী রিপাবলিকান ট্রাম্প গলফের প্রতি গভীর অনুরাগী হলেও স্টারমারের তেমন খ্যাতি নেই, এবং তিনি সম্ভবত অন্য বিষয়েই আলোচনা শুরু করবেন।

মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ট্রাম্পের চুক্তি ‘পুনর্বিবেচনার’ ঘোষণায় লন্ডন উদ্বিগ্ন।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য অন্যান্য দেশের মতো অতিরিক্ত আমদানি-রপ্তানি শুল্কের শিকার হয়নি, এবং স্টারমার এই খামখেয়ালি মার্কিন নেতার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে চেষ্টা করবেন।

গাজা সংকট নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগও আলোচনায় আসতে পারে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ব্রিটেন যাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, এই দাবিতে স্টারমারের ওপর চাপ বাড়ছে।

আগামী সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প আবারও যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, এটি হবে রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে তার দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর।

২০২৩ সালের সফরে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি স্কটল্যান্ডে নিজেকে ‘বাড়ির মতোই’ মনে করেন। তার মা মেরি অ্যান ম্যাকলিওড স্কটল্যান্ডের প্রত্যন্ত লুইস দ্বীপে বেড়ে ওঠেন এবং ১৮ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।

তবে স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশবাদী ও নির্বাচিত কর্মকর্তারা ট্রাম্প পরিবারের নতুন গলফ কোর্স নির্মাণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার আগে এটি উদ্বোধন করবেন।

স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে।’

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের সফর স্কটল্যান্ডের জন্য একটি ‘মঞ্চ তৈরি করছে’ যার মাধ্যমে দেশটি ‘যুদ্ধ-শান্তি, বিচার ও গণতন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে।’

স্কটল্যান্ডের তেল শিল্পের কেন্দ্র অ্যাবারডিনে অবস্থানকালে ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ‘নেট জিরো’ লক্ষ্য অর্জন সংক্রান্ত বিতর্কেও হস্তক্ষেপ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এই ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিকটু উইন্ডমিল বন্ধ করা উচিত এবং উত্তরের সাগরে আধুনিক ড্রিলিংকে উৎসাহিত করা উচিত, যেখানে বিপুল পরিমাণ তেল অপেক্ষা করছে উত্তোলনের জন্য।’

তিনি তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘ড্রিলিংয়ের এক শতাব্দী বাকি রয়েছে, অ্যাবারডিন হবে সেই কেন্দ্র।’

স্কটল্যান্ড সফর ট্রাম্পকে যৌন অপরাধে দণ্ডিত ও ২০১৯ সালে বিচার শুরু হওয়ার আগেই কারাগারে মৃত্যু হওয়া বিতর্কিত ধনকুবের জেফরি এপস্টাইন ইস্যুর সাম্প্রতিক মোড় থেকে কিছুটা শারীরিকভাবে দূরে সরিয়ে রাখছে।

যৌবনে এপস্টাইন ছিলেন ট্রাম্পসহ নিউইয়র্কের জেটসেট শ্রেণির ঘনিষ্ঠ। তবে বর্তমানে ট্রাম্প নিজ দলের (ম্যাগা) সমর্থকদের চাপের মুখে পড়েছেন যারা এপস্টাইন মামলার নথি প্রকাশের দাবি জানাচ্ছে।

অনেকে বিশ্বাস করেন, ‘ডিপ স্টেট’ বা গোপন শক্তিগুলো নামি-দামি ব্যক্তিদের যৌনচক্রে জড়িত থাকার তথ্য গোপন করেছে। তবে ট্রাম্প তার সমর্থকদের এই বিষয়টি ভুলে যেতে অনুরোধ করছেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সম্প্রতি ট্রাম্প ও এপস্টিনের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার কারণে হোয়াইট হাউস থেকে তাদের বিরূপ আচরণের শিকার হতে হয়েছে।

সংবাদপত্রটির কর্মীরা স্কটল্যান্ড সফরের জন্য হোয়াইট হাউস প্রেস পুলে যোগ দিলেও, ফিরে আসার পথে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এ তাদের সিট বাতিল করা হয়েছে।

যদিও ট্রাম্পের পরিবার বিশ্বব্যাপী বহু উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করছে, ট্রাম্প আইনি দিক থেকে এসব সম্পদের নিয়ন্ত্রণে নেই।

তবু বিরোধীরা এবং নজরদারি সংস্থাগুলো তাকে স্বার্থের সংঘাত ও প্রেসিডেন্ট পদ ব্যবহার করে বিদেশে পারিবারিক বিনিয়োগকে প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলছে।

ওয়াশিংটনের মার্কিন এনজিও সিটিজেন্স ফর রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড এথিকস ইন ওয়াশিংটন গত মে মাসে জানায়, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ইতোমধ্যে বিদেশে ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বরিশালে চোরাই কয়লাসহ ১২ চোরাকারবারি আটক
কক্সবাজারে আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদিসহ কারিগর আটক
গোবিন্দগঞ্জে দিনব্যাপী পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
বান্দরবানে ৭৫০ নেতাকর্মীকে বিএনপি প্রার্থী সাচিং প্রু’র সম্মাননা
দিনাজপুরে নাশকতা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার 
ঢাবি আইবিএ’র বিবিএ প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নাইসিয়ার কাউন্সিলের ১,৭০০তম বার্ষিকী উদযাপন করবেন পোপ ও অর্থডক্স নেতা
কড়াইল অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি খাদ্য সহায়তায় ডব্লিউএফপি
চব্বিশের আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরলিখিত থাকবে : দুলু
চুয়াডাঙ্গায় ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোশক কারিগরদের
১০