ঢার্কা, ৩০ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): হামাসের গাজা শাসনের অবসান এবং নিরস্ত্রীকরণ চেয়ে মঙ্গলবার কাতার, সৌদি আরব এবং মিশরসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ একযোগে আহ্বান জানিয়েছে।
এই আহ্বান এমন এক সময় এসেছে, যখন গাজায় দীর্ঘ ২১ মাস ধরে চলমান ভয়াবহ যুদ্ধের অবসানের পথ খোঁজা হচ্ছে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে এএফপি জানায়, জাতিসংঘে আয়োজিত একটি দুই-রাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে, ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লীগ সম্মিলিতভাবে সাত পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্র গ্রহণ করে এই আহ্বান জানায়।
ঘোষণায় বলা হয়: ‘গাজায় যুদ্ধের অবসানের প্রেক্ষিতে, হামাসকে অবশ্যই গাজার শাসন ছাড়তে হবে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে অস্ত্রসমর্পণ করতে হবে। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এর লক্ষ্য।’
এই ঘোষণার আগে সোমবার জাতিসংঘে ফিলিস্তিন প্রতিনিধি দল ইসরাইল ও হামাস উভয়কে গাজা থেকে সরে যেতে এবং সেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে শাসনভার গ্রহণের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়।
ঘোষণায় আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইলে চালানো প্রাণঘাতী হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে, যেটি এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দিত হয়নি।
সম্মেলনে সৌদি আরবের সাথে যৌথভাবে আয়োজক দেশ ফ্রান্স এই ঘোষণাকে ‘ইতিহাসে প্রথম এবং নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারো বলেন: ‘এই প্রথমবার, আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো প্রকাশ্যে হামাসকে নিন্দা করেছে, ৭ অক্টোবরের হামলার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ফিলিস্তিনি রাজনীতি থেকে একে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, এবং ভবিষ্যতে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।’
ঘোষণাপত্রে ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডাসহ আরও বেশ কিছু পশ্চিমা দেশের স্বাক্ষর রয়েছে। এতে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের পর বিদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে।
ইসরায়েল এবং এর ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই সম্মেলনে অংশ নেয়নি।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়, যেখানে ব্রিটেন ঘোষণা দিয়েছে, যদি ইসরাইল গাজায় যুদ্ধবিরতি ও পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত না করে, তবে তারা আগামী সেপ্টেম্বরেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন: ‘আমরা এ বিষয়ে অগ্রসর হব যদি ইসরাইল প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ আগেই জানিয়েছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সেপ্টেম্বরে অধিবেশনে ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে।
যদিও দীর্ঘদিন ধরেই অধিকাংশ জাতিসংঘ সদস্য দুটি রাষ্ট্রের সমাধান সমর্থন করে আসছে, তবে গাজায় চলমান যুদ্ধ, পশ্চিমতীরে বসতি সম্প্রসারণ এবং অধিকৃত ভূমি সংযুক্ত করার ইসরাইলি পরিকল্পনা এই সম্ভাবনাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বর্তমান যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,২০০ ইসরাইলি নিহত হওয়ার পর।
ইসরাইল এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, যেখানে দশ-হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারায় এবং অবকাঠামোর প্রায় সবটুকু ধ্বংস হয়ে যায়।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সোমবার বলেন, ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দূরে।’
মঙ্গলবার রাতে ফ্রান্স ও স্পেনসহ ১৫টি পশ্চিমা দেশ একটি বিবৃতিতে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তাদের অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এই ১৫টির মধ্যে ৯টি দেশ- আন্ডোরা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল ও সান মারিনো, যারা এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি, তারা বলেছে যে তারা ইতিবাচক বিবেচনার কথা ভাবছে।