ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় হামাসের বহুতল ভবনগুলোতে হামলা চালাচ্ছে

বাসস
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:১৫

ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বৃহত্তম শহর দখলের পরিকল্পনার আগে স্বাধীনতাকামী হামাসের ব্যবহৃত উঁচু ভবনগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালানোর ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শুক্রবার গাজা শহরের একটি বহুতল ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে।

গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা অভিযান বন্ধ করার জন্য দেশে-বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাপ সত্ত্বেও ইসরাইল রিজার্ভ বাহিনীকে ডেকে বোমাবর্ষণ তীব্র করছে এবং গাজা শহরের কাছাকাছি পৌঁছেছে। 

গাজা সিটি থেকে এএফপি আজ এই খবর জানায়।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘গাজা শহরের বিভিন্ন অবকাঠামোগত স্থানে বিশেষ করে উঁচু ভবনগুলোতে হামাসের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চিহ্নিত করেছে’।  তারা ‘আগামী দিনে’ সেই স্থানগুলোকে টার্গেট করে অভিযান চালানোর হুমকি দিচ্ছে। 

তারা বলেছে, এক ঘণ্টারও কম সময় পরে তারা এমন একটি বহুতল ভবনে আঘাত হেনেছে এবং হামাসকে ‘এলাকায় সৈন্যদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য’ এই ভবন ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছে।

এএফপি ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের আল-রিমাল পাড়ায় অবস্থিত মুশতাহা টাওয়ারটি হামাসের ঘাঁটিতে শক্তিশালী বিস্ফোরণের পর ধসে পড়েছে। এর ফলে ধোঁয়া এবং ধুলোর ঘন মেঘ আকাশে উড়ছে।

এএফপি’র পরবর্তী ছবিতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ এবং ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করছে।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামলার আগে, ‘বেসামরিক লোকদের ক্ষতি না হয় সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল’। এর মধ্যে পূর্ব সতর্কতাও জারি করা ছিল।

গাজা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি তাঁবুতে বসবাসকারী ৫০ বছর বয়সী বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আরেজ আহমেদ এএফপি’কে বলেছেন, তার স্বামী ‘মুশতাহা টাওয়ারের বাসিন্দাদের ওপরের তলা থেকে তাদের জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলতে দেখেছেন যাতে তারা হামলার আগে সেগুলো নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে’।

তিনি টেলিফোনে বলেছেন, ‘সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার আধ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে টাওয়ারটিতে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল’।

‘কোনা নিরাপদ জায়গা নেই’

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল ইসরাইলকে ‘বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নীতি’ অনুসরণ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। অথচ সেখানে তারা উঁচু ভবন লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজা শহরের ভেতরে এবং আশপাশে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার পুরো অঞ্চল জুড়ে কমপক্ষে ৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

এএফপি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা এই প্রতিবেদনের ওপর মন্তব্য করবে না।

গাজায় মিডিয়ার বিধিনিষেধ এবং অনেক এলাকায় প্রবেশের অসুবিধার ফলে এএফপি স্বাধীনভাবে নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা বা ইসরাইলি সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রদত্ত টোল এবং বিবরণ যাচাই করতে পারছেনা।

আহমেদ আবু ওতফা (৪৫) বলেছেন, ‘ইসরাইল টাওয়ার এবং অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলোতে বোমা হামলা শুরু করার খবরটি ভয়াবহ’। তিনি পশ্চিম গাজা শহরের তার আত্মীয়দের আংশিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত পঞ্চম তলার অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমার সন্তানরা আতঙ্কিত এবং আমিও। কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। আমরা কেবল আশা করি মৃত্যু দ্রুত আসবে।’

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন সদস্য ইজ্জত আল-রিশক বলেছেন, ইসরাইল দাবি করছে হামাস গোষ্ঠীটি বহুতল ভবনগুলোতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এই অভিযোগ ‘একটি তুচ্ছ অজুহাত এবং স্পষ্ট মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।’

জাতিসংঘের অনুমান গাজা শহর এবং এর আশপাশে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ বাস করে। যে অঞ্চলে গত মাসে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়াসুস গাজায় অনাহারে মৃত্যুর ‘বিপর্যয়’ বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৭০ জনেরও বেশি মানুষ অপুষ্টিতে মারা গেছে।

এদিকে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভোট এএফপি’কে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘এই বিশাল মানবিক সংকটে তার দায়িত্ব পালন করছে না’।

‘নরকের দরজা’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন, ‘গাজার নরকের দরজা থেকে এখন বোল্টটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে’। তিনি যুদ্ধ শেষ করার জন্য হামাসকে ইসরাইলের শর্ত মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অভিযান তীব্রতর করার অঙ্গীকার করেছেন।

ইসরাইল আশা করছে, তাদের নতুন আক্রমণ দক্ষিণে প্রায় দশ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করবে।

যুদ্ধের সূত্রপাতকারী ইসরাইলের ওপর আক্রমণের সাতশ’ দিন পর হামাসের সশস্ত্র শাখা ফুটেজ প্রকাশ করেছে যেখানে গত মাসের শেষের দিকে গাজা শহরে হামলায় আটক দুই জিম্মিকে জীবিত দেখানো হয়েছে।

ভিডিওটিতে জিম্মি গাই গিলবোয়া-দালালকে একটি গাড়িতে করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজা শহরে পরিকল্পিত আক্রমণ না চালানোর জন্য আহ্বান জানাতে দেখা যাচ্ছে।

পরে এটিতে তাকে আরেক বন্দী অ্যালন ওহেলের সাথে দেখা করতে দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলার সময় অপহরণের পর তাকে প্রথমবারের মতো কোনো ভিডিওতে দেখা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, নেতানিয়াহু উভয় জিম্মির পরিবারের সাথে কথা বলেছেন। 

নেতানিয়াহু তার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত মন্তব্যে বলেছেন, ‘কোনো খারাপ প্রচারণামূলক ভিডিও আমাদের দুর্বল করতে পারবে না অথবা হামাসকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য আমাদের দৃঢ় সংকল্প থেকে সরাতে পারবে না।’

জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি চুক্তির দাবিতে শুক্রবার জেরুজালেম এবং তেল আবিবে জিম্মিদের আত্মীয়স্বজন এবং সমর্থকরা সমাবেশ করেছেন।

হামাসের হামলায় আটক ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে ৪৭ জন এখনও গাজায় রয়েছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি এরমধ্যে ২৫ নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপি’র হিসাব অনুযায়ী, এই হামলার ফলে ১,২১৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ভিসতা ১৩তম জাতীয় সার্ভিসেস কুস্তি প্রতিযোগিতা কাল শুরু
সিলেট সীমান্তে কোটি টাকার চোরাই মহিষ আটক
জলাশয় রক্ষায় জনগণকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : পানিসম্পদ  উপদেষ্টা
সাংবাদিক নাহিদ নজরুলের শয্যাপাশে বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক
শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনায় জাপান অস্বীকৃতি জানালে সরকার নতুন অপারেটর খুঁজবে 
সাতক্ষীরা সীমান্তে ভারতীয় বিভিন্ন মালামাল জব্দ 
সাইবার নিরাপত্তা আইন এখন অনেক সক্রিয় : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
ময়মনসিংহে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যু 
মেধাভিত্তিক নিয়োগ হলে নিয়োগপ্রাপ্ত সকলেই দেশের সম্পদ হবে : আসিফ মাহমুদ
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঝটিকা মিছিল, আওয়ামী লীগের ৯ জন গ্রেফতার
১০