ঢাকা, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রখ্যাত ডানপন্থী নেতা চার্লি কির্কের হত্যাকারী সন্দেহভাজনকে অবশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের এমন ঘোষণার পর, তার বিধাব স্ত্রী শুক্রবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি তার স্বামীর সৃষ্ট কাজ ও আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।
ওরেম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বার্তা সংস্থা থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
নিরাপত্তা ক্যামেরায় এক যুবকের ছবি প্রকাশ না করা পর্যন্ত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্রকে গুলি করে হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার জন্য তদন্তকারীরা ধীরগতিতে অগ্রগতি করছিল বলে মনে হচ্ছিল।
উটাহের গভর্নর স্পেন্সার কক্স শুক্রবার ভোরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা তাকে পেয়েছি। সন্দেহভাজন ব্যক্তি টাইলার রবিনসন (২২) নামে পরিচিত।
নিরাপত্তা ক্যামেরার ছবিগুলো প্রকাশের পর, তার বাবা তাকে ধরে ফেলে এবং তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
৩১ বছর বয়সী কির্ক বুধবার উটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে একটি বড় সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বন্দুক হামলায় নিহত হন।
কির্ক যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী মহলে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি ট্রাম্পকে গত নভেম্বরে তার নির্বাচনী জয়ে যুব ভোটারদের ভোট সংগ্রহে সহায়তা করেছিলেন।
বিধবা এরিকা কির্ক শুক্রবার আবেগঘন এক ভাষণে বলেন, আমার স্বামী একজন নিখুঁত বাবা, নিখুঁত স্বামী ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর হত্যাকারীরা জানে না, তারা কী করেছে।
এরিকা বলেন, আপনি জানেন না, এই স্ত্রীর মনে যে আগুন জ্বালিয়েছেন, বিধবার অশ্রু বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের হুঙ্কারের মতো প্রতিধ্বনিত হবে।
কির্কের হত্যার সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রের সব কেবল নিউজ চ্যানেল ৪৮ ঘণ্টা ধরে কভারেজ দখল করেছে।
এই ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কির্কের কঠোর মতামত বর্ণ, লিঙ্গ, অস্ত্রধারী অধিকার ও অন্যান্য বিতর্কিত বিষয়ে তাকে বিভাজক চরিত্রে পরিণত করেছিল, তবে সমালোচকরাও তার বিতর্কে অংশগ্রহণের ইচ্ছাকে প্রশংসা করেছিলেন।
বুলেটের চিহ্ন:
রবিনসন যে অস্ত্রটি ব্যবহার করেছেন বলে মনে করা হয়, তার অব্যবহৃত বুলেটের খোলে পাওয়া চিহ্নগুলো নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
একটি কার্তুজে ‘হে ফ্যাসিবাদী!’ ‘ক্যাচ!’ আর অন্যটিতে ‘বেলা সিয়াও’ লেখা ছিল।
সম্প্রতি অনলাইনে বিশেষ কিছু মহলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ইতালীয় ফ্যাসিবাদ বিরোধী গান নতুনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যান্য কার্তুজগুলোতে প্রতীক ও শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল ,যা অনলাইন গেমিং সংস্কৃতি থেকে এসেছে বলে মনে হচ্ছে।
রবিনসন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শুক্রবার প্রকাশিত হতে শুরু করে। এতে একটি কট্টর রক্ষণশীল শহরের একটি রিপাবলিকান পরিবারের এক যুবকের ছবি উঠে আসে।
ছবিতে দেখা যায় যে, যুবকটি ইলেকট্রিশিয়ান শিক্ষানবিশের তৃতীয় বর্ষে পড়েছিল, বন্দুক হাতে পোজ দিচ্ছে ও হ্যালোইনের জন্য এমন পোশাক পরেছে, যেখানে তাকে ট্রাম্পের কাঁধে চড়তে দেখা যাচ্ছে।
অভিযানে অগ্রগতি:
কর্তৃপক্ষকে তাকে গ্রেফতার করতে ৩৩ ঘন্টা সময় লেগেছে।
তবে, মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত না হওয়া দুই ব্যক্তিকে আটক করার পর ছেড়ে দেওয়ার পর পুলিশ ও এফবিআই’র মধ্যে ঝামেলা দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের শেষের দিকে, ওরেমের কর্মকর্তারা সন্দেহভাজন ব্যক্তির পোশাক ও প্রাথমিক গতিবিধি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন।
তাকে শনাক্ত করতে জনসাধারণের কাছে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেন।
এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল বলেন, অবশেষে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গভর্নর কক্স অভিযুক্ত খুনির পরিবারের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়, টাইলার রবিনসনের পরিবারের একজন সদস্য ওয়াশিংটন কাউন্টি শেরিফের অফিসে যোগাযোগ করে তথ্য দিয়েছিলেন যে, রবিনসন তাদের কাছে স্বীকার করেছেন বা ইঙ্গিত করেছেন যে তিনি ঘটনাটি করেছেন।
মৃত্যুদণ্ডের দাবি :
রবিনসনকে গুরুতর হত্যার সন্দেহে আটক করা হয়েছে এবং আগামী দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উটাহে এই ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড রয়েছে। ট্রাম্পও বলেছেন যে, তিনি এমন একটি শাস্তি প্রয়োগ করতে চান।
কার্ক, যাকে সমর্থকরা শহীদ হিসেবে প্রশংসা করেছেন, তিনি ২০১২ সালে তরুণদের মধ্যে রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি জাগানোর জন্য টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার স্বাভাবিক প্রদর্শনী তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।
দুই সন্তানের জনক কির্ক টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে তার দর্শকদের ব্যবহার করে অভিবাসন বিরোধী নীতি, স্পষ্টবাদী খ্রিস্টধর্ম ও বন্দুক মালিকানার পক্ষে সমর্থন গড়ে তুলতেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার অনেক কলেজ ইভেন্টে বিতর্কের সময় তার কথোপকথনের ক্লিপগুলো ছড়িয়ে দিতেন।