ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জন্মদিনের উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় তুমুল উত্তেজনা চলছে।
আলাপকালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে মোদির প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন ট্রাম্প।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ থামাতে আপনার সমর্থনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!’
তিনি মোদির সঙ্গে ফোনালাপকে ‘অসাধারণ’ বলেছেন এবং তার প্রশংসা করে বলেন ভারতের এই নেতা ‘চমৎকার কাজ’ করছেন।
মোদিও ‘এক্স’-এর এক পোস্টে ট্রাম্পকে তার শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, তিনি এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।
একইসঙ্গে মোদি জানান, ইউক্রেন সংঘাতের ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ জন্য তিনি ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন।
তবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। রুশ তেল কেনা অব্যাহত রাখায় প্রতিশোধ হিসেবে ট্রাম্প গত মাসে ভারতের বেশিরভাগ রপ্তানি পণ্যে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেন।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ভারতীয় তেল শোধনাগারগুলোকে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য অভিযুক্ত করে বলেন, রুশ অপরিশোধিত তেল কেনার ভারতের এই সিদ্ধান্ত মস্কোকে ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নে সহায়তা করছে।
কিন্তু গত এক সপ্তাহে দুই দেশের নেতারা তুলনামূলকভাবে নরম সুরে কথা বলেছেন এবং বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুই দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তারা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আলোচনা করেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য বিষয়ক সহকারী প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা ছিল ইতিবাচক ও দূরদর্শী। এতে স্বীকার করা হয় যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্ব রয়েছে। পাশাপাশি, সেখানে বাণিজ্য চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করা হয়।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রচেষ্টা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
ভারত ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করা প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম হলেও, এখন পর্যন্ত দেশটি এমন কোনো চুক্তি করতে পারেনি যা তার শুল্কের বোঝা কমাবে।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটির রপ্তানিকারকরা ইতোমধ্যে অর্ডার বাতিল এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চাকরির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
ট্রাম্প যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়কে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত করে ভারতের বেশিরভাগ পণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে বাড়ানোয় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উভয় পক্ষ আলোচনা এগিয়ে নিলেও একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের জন্য কঠিন দর কষাকষি হবে।
নয়াদিল্লি-ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ-এর অজয় শ্রীবাস্তব মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যে কোনো অগ্রগতি নির্ভর করবে ওয়াশিংটন তেল-সম্পর্কিত ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করার ওপর। এটি ছাড়া রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে কোনো বড় অগ্রগতি সম্ভব নয়।’