ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে এই গ্রীষ্মে ইউরোপীয় নগরীগুলোয় আনুমানিক প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বুধবার সরকারি তথ্য প্রকাশের আগে আনুমানিক এই মৃতের সংখ্যা জানান।
পিয়ার-রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার জন্য মাস বা বছর অপেক্ষা না করেই, দ্রুত প্রকাশিত এই গবেষণা জলবায়ু ও স্বাস্থ্য গবেষকদের দ্বারা তাপপ্রবাহের সময় মৃত্যুর সংখ্যাকে বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে দ্রুত সংযুক্ত করার সর্বশেষ প্রচেষ্টা।
প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইউরোপীয় নগরগুলোর আনুমানিক এ মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড করা হয়নি। বরং পূর্বে পিআর-পর্যালোচিত গবেষণায় ব্যবহৃত মডেলিংয়ের মতো পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে একটি অনুমান।
তাপপ্রবাহের সময় মৃত্যুর সংখ্যা যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। কারণ সাধারণ হাসপাতালে মৃত্যুর কারণগুলো— যেমন হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতায় হয়ে থাকে।
এই রোগগুলো বয়স্কদের প্রভাবিত করে। কারণ সেগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বেড়ে যায়।
এই গ্রীষ্মের একটি চিত্র তুলে ধরার লক্ষ্যে, যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক গবেষকদের একটি দল জলবায়ু মডেলিং ব্যবহার করে অনুমান করেছে যে জুন থেকে আগস্টের মধ্যে ৮৫৪টি ইউরোপীয় শহরে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রা গড়ে ২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হয়ে গেছে।
ঐতিহাসিক তথ্য ব্যবহার করে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি মৃত্যুর হারকে কীভাবে বাড়িয়ে তোলে, তা দেখা গেছে। দলটি অনুমান করেছে যে সেই সময়ে ওই শহরগুলোয় প্রায় ২৪ হাজার ৪০০ জনের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে।
র্যাপিড অ্যাট্রিবিউশন স্টাডি অনুসারে, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে আনুমানিক অতিরিক্ত মৃত্যুর হার প্রায় ৭০ শতাংশ বা সংখ্যায় ১৬ হাজার ৫০০ জন।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী এবং লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের মহামারী বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় বলা হয়েছে, এর অর্থ হল, জলবায়ু পরিবর্তন এই গ্রীষ্মে তাপমাত্রাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা তিনগুণ বাড়িয়ে দিতে পারত।
দলটি পূর্বে জুনের শেষের দিকে একই ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করে ইউরোপীয় তাপপ্রবাহের জন্য একই রকম ফলাফল খুঁজে পায়।
গবেষকরা বলেছেন, তারা এই গ্রীষ্মে ইউরোপীয় শহরগুলোয় রেকর্ড করা প্রকৃত অতিরিক্ত মৃত্যুর সঙ্গে তাদের অনুমানের তুলনা করতে সক্ষম হননি, কারণ বেশিরভাগ দেশই সেই তথ্য প্রকাশ করতে দীর্ঘ সময় নেয়।
এই অনুমানগুলো পূর্ববর্তী একই রকম পর্যালোচিত গবেষণার প্রতিফলন ঘটায়।
নেচার মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ইউরোপের গ্রীষ্মে ৪৭ হাজারের বেশি তাপমাত্রা সম্পর্কিত মৃত্যু হয়েছে।
অনেক বিশিষ্ট জলবায়ু ও স্বাস্থ্য গবেষকও এই গবেষণাকে সমর্থন করেছেন।
যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান গবেষক অক্ষয় দেবরাজ বলেছেন, ‘এই আবিষ্কারকে আরও উদ্বেগজনক করে তোলে যে এই অ্যাট্রিবিউশন স্টাডিতে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে শক্তিশালী হলেও তা রক্ষণশীল।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।’
গবেষণায় বলা হয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রোমে ৮৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক। এরপরের স্থানে রয়েছে এথেন্স। এখানে ৬৩০ জন এবং প্যারিসে ৪০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের, যা আনুমানিক ৮৫ শতাংশেরও বেশি।
গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, গবেষণায় সমগ্র ইউরোপকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।