ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাজ্য ও পর্তুগাল রোববার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ এক সপ্তাহব্যাপী অধিবেশনের আগে আরও কয়েকটি দেশ একই সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টির অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরাইলের বহু পুরোনো মিত্র অবস্থান বদলেছে। ২০২৩ সালে ইসরাইলে হামাসের হামলার পর দেশটি গাজায় হামলা আরও তীব্র করায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এতে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলে বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ, প্রাণহানি ও খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে এবং গোটা অঞ্চল এখন মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে।
এই সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্বনেতারা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবেন। আলোচনার মূল বিষয় হবে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত সমাধানের জন্য তথাকথিত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান।
আগামী কয়েক দিনে প্রায় ১০টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
বিবিসিসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রোববার প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেবেন। ইসরাইল এ পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে।
স্টারমার জুলাইয়ে বলেছিলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের আগেই যদি ইসরাইল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ না নেয়, তবে বৃটেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে।
যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এই নেতা বলেন, এই পদক্ষেপ ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলবে এবং একটি সুষ্ঠু শান্তি প্রক্রিয়ায় অবদান রাখবে।'
এ ঘোষণার পর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, স্টারমার আসলে ‘নৃশংস সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করছেন’ এবং ‘জিহাদি মতাদর্শকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।’
এদিকে পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানিয়েছে, তারাও রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এ স্বীকৃতি ঘোষণা করবে।
গত জুলাইয়ে লিসবন এই স্বীকৃতি দিবে বলে জানায়। এর কারণ হিসেবে ‘সংঘাতের অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়া’, চলমান মানবিক সংকট এবং ইসরাইলের বারবার ফিলিস্তিনি ভূমি দখলের হুমকিকে তারা উল্লেখ করে।
এরপর থেকে ইসরাইল গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘ সমর্থিত একটি ক্ষুধা পর্যবেক্ষক সংস্থা গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। এদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজা শহর দখল করতে ‘নজিরবিহীন শক্তি’ ব্যবহার করবে।
ফ্রান্স ও কানাডাসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশও আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ইসরাইল এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে। এমনকি তারা পশ্চিম তীর দখলের হুমকি দিয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এএফপিকে শুক্রবার বলেন, ইসরাইলের প্রতিশোধের আশঙ্কায় বিশ্ব যেন ভয় না পায়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়। এর বেশিরভাগই ছিলেন সাধারণ মানুষ। এর প্রতিশোধে ইসরাইলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ২০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ হিসাব জাতিসংঘও নির্ভরযোগ্য বলে মনে করছে।