ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শুক্রবার জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একটি প্রতিবাদী বার্তা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গাজা নিয়ে একটি চুক্তি করতে চাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরল চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি।
গাজায় দুই বছরের বিরামহীন আক্রমণের প্রতিবাদে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং আরো কয়েকটি পশ্চিমা শক্তি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়ার কয়েকদিন পর নেতানিয়াহু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
জাতিসংঘ থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
ইসরাইলি ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে প্রত্যাখ্যান করে আসছেন এবং তার অতি-ডানপন্থী মিত্ররা স্বাধীন ফিলিস্তিনের বাস্তব সম্ভাবনাকে ধ্বংস করার জন্য পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করার কথা ভাবছে।
কিন্তু সাধারণত নেতানিয়াহুর একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র ট্রাম্প গাজায় একটি শান্তি পরিকল্পনা পেশ করার সময় সংযুক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন। সেখানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাসের নিরস্ত্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে অতর্কিত ভয়াবহ হামলা চালানোর ফলে ইসরাইলি প্রতিশোধের সূত্রপাত করেছিল।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি ইসরাইলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেব না।’ ‘না, আমি তা হতে দেব না। এটা হবে না।’
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তিনি সোমবার ওয়াশিংটনে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে, যার মধ্যে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করাও অন্তর্ভুক্ত, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে যাওয়ার এক অস্বাভাবিক পথ বেছে নেন। যার মধ্যে জিব্রাল্টারের সংকীর্ণ প্রণালীর ওপর দিয়ে বিমানে ভ্রমণও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট বন্ধু এবং বিশ্ব আলোচক স্টিভ উইটকফকে ম্যানহাটনে নেতানিয়াহু যেখানে অবস্থান করছিলেন সেই কড়া পাহারায় ঘেরা বিলাসবহুল হোটেলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন তরুণী আন্দ্রেয়া মিরেজ বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীরা কোনো মানসিক শান্তির যোগ্য নয়। তাদের কোনো ঘুমের যোগ্য নয়’। এই সময় প্রায় ২০ জন বিক্ষোভকারী এবং একই সংখ্যক নেতানিয়াহুর সমর্থককে বাইরে দেখা গেছে।
নেতানিয়াহুর বক্তৃতার সাথে মিলে যাওয়ায় শুক্রবার টাইমস স্কয়ার থেকে নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারের দাবিতে একটি মিছিলের পরিকল্পনা করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরাইলের আক্রমণে গাজায় এই পর্যন্ত ৬৫,৫০০ জনেরও বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত এএফপি’র হিসাব অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এটি দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক দিন।
সোমবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একটি বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন ডেকেছিলেন। ওই বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পর্তুগালসহ অন্যান্য পশ্চিমা শক্তি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
পশ্চিমা সরকারগুলো বলেছে, তারা ইসরাইলের ওপর হতাশ, যারা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজায় নতুন করে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কার্যত পুরো জনসংখ্যা ইতোমধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বৃহস্পতিবার সাধারণ পরিষদে বলেছেন, ‘গাজায় যা ঘটছে তা অগ্রহণযোগ্য, এটি অমানবিক, এটি সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক এবং এটি এখনই বন্ধ করতে হবে’।
নেতানিয়াহু পশ্চিমা সমালোচকদের এবং জাতিসংঘের সমালোচনা করেছেন। পশ্চিমা এবং জাতিসংঘকে তিনি পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ট্রাম্পকে অমান্য করতেও ভয় পাননি। মার্কিন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইরান, কাতার এবং সিরিয়ায় সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করছেন।
আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের জন্য জাতিসংঘের অনুসরণকারী রিচার্ড গোয়ান বলেছেন, ‘আমি মনে করি নেতানিয়াহুর সুর চরমভাবে কঠোর হবে’।
তিনি বলেছেন, ‘তিনি গাজায় তার অভিযানের পক্ষে বা ব্যাখ্যা দিতে জাতিসংঘে আসছেন না। তিনি ইসরাইলকে সমর্থন করতে ব্যর্থতার জন্য জাতিসংঘের সমালোচনা করতে আসছেন বিশেষ করে এই সপ্তাহের শুরুতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর নিন্দা জানাতে আসছেন’।
ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাসকে ভিসা না দেওয়ার বিরল পদক্ষেপ নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার ভিডিও’র মাধ্যমে সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন তিনি।
আব্বাস বলেছেন, তার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বী হামাসের কোনো ভবিষ্যত থাকা উচিত নয় এবং ৭ অক্টোবরের হামলা এবং ইহুদি-বিদ্বেষ উভয়েরই নিন্দা করেন।
গোয়ান সন্দেহ করেছিলেন, আব্বাসের বক্তৃতা নেতানিয়াহুকে প্রভাবিত করবে।
গোয়ান বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে নেতানিয়াহু কেবল হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণারই বিরোধী নন বরং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মৌলিক ধারণারও বিরোধী’।