ঢাকা, ৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাসের একজন কর্মকর্তা শুক্রবার এএফপি’কে জানিয়েছেন, গাজায় প্রায় দুই বছরের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা অধ্যয়নের জন্য তাদের আরো সময় প্রয়োজন।
গাজা থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমর্থিত প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ৭২ ঘন্টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা থেকে ধীরে ধীরে ইসরাইলি সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এরপর ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি যুদ্ধ-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘হামাস এখনো ট্রাম্পের পরিকল্পনা সম্পর্কে পরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছে। মধ্যস্থতাকারীদের হামাস জানিয়েছে, পরামর্শ চলছে এবং আরো কিছু সময় প্রয়োজন।’
মঙ্গলবার ট্রাম্প হামাসকে তার পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ‘তিন বা চার দিনের’ আল্টিমেটাম দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে আরব এবং মুসলিম দেশগুলোসহ বিশ্বশক্তিগুলো স্বাগত জানিয়েছে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ নাজ্জাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘পরিকল্পনায় উদ্বেগের বিষয় রয়েছে এবং আমরা শিগগির এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান ঘোষণা করব’।
শুক্রবার হামাস কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার একটি উদ্ধারকারী বাহিনী গাজা শহরে ভারী বোমাবর্ষণ এবং স্থলভাগে কামানের গোলাবর্ষণের খবর দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় পুরো অঞ্চল জুড়ে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গাজা শহরেই আটজন রয়েছেন।
এএফপি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মন্তব্যের জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে।
গাজায় মিডিয়ার বিধিনিষেধ এবং অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে প্রবেশের অসুবিধার ফলে এএফপি স্বাধীনভাবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বা নাগরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃক প্রদত্ত বিবরণ বা হতাহতের সংখ্যা যাচাই করতে পারছে না।
- ‘মৃত্যুর স্থান’ -
ইসরাইলি সেনাবাহিনী অঞ্চলের বৃহত্তম নগর কেন্দ্রে বিমান ও স্থল আক্রমণ চালাচ্ছে। সেখান থেকে লক্ষ লক্ষ লোককে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে।
জাতিসংঘ শুক্রবার পুনর্ব্যক্ত করেছে, গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই এবং দক্ষিণে ইসরাইল-নির্ধারিত অঞ্চলগুলো ‘মৃত্যুর স্থান’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডারসন জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দক্ষিণে একটি নিরাপদ অঞ্চলের ধারণাটি হাস্যকর’।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ‘গণ-স্থানচ্যুতির বিপর্যয়কর পরিস্থিতির নিন্দা করেছে। কারণ, ইসরাইল গাজা শহরে আক্রমণ তীব্রতর করেছে।
গোষ্ঠীটি বলেছে, লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনির অনেকেই ইতোমধ্যেই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের ‘দক্ষিণে জনাকীর্ণ ছিটমহলে’ যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেখানে পরিষ্কার জল, খাদ্য, চিকিৎসা যত্ন, আশ্রয় এবং জীবন-রক্ষাকারী অবকাঠামোর প্রবেশাধিকার নেই’।
যুদ্ধ যখন দুই বছরের কাছাকাছি চলে আসছে এবং মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনি-পন্থী কর্মী এবং গাজার জন্য ত্রাণ বহনকারী একটি ফ্লোটিলাকে ইসরাইলি নৌবাহিনী কর্তৃক আটক করার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
শুক্রবার ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র আয়োজকরা বলেছেন, তাদের শেষ নৌকাটিও আটক করা হয়েছে এবং ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা চারজন ইতালীয় অংশগ্রহণকারীকে বহিষ্কার করেছে।
হামাস যখন এই সপ্তাহে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছে, তখন গ্রুপটির নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ একটি ফিলিস্তিনি সূত্র বুধবার এএফপি’কে জানিয়েছে, ইসলামপন্থী আন্দোলন নিরস্ত্রীকরণের ধারাসহ কিছু ধারা সংশোধন করতে চায়।
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, হামাস নেতারা ইসরাইলিদের সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য ‘আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি’ও চান এবং গাজার ভেতরে বা বাইরে কোনো হত্যার চেষ্টা করা হবে না।
- হামাসে ‘দুটি মতামত’ -
আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে, গ্রুপটি ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে বিভক্ত ছিল।
কাঠামোগতভাবে এই দলের নেতৃত্ব গাজা উপত্যকা এবং বিদেশে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভক্ত বিশেষ করে কাতারে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের মধ্যে।
যুদ্ধের সময় ইসরাইলি আক্রমণে হামাসের বেশিরভাগ নেতৃত্বও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
সূত্রটি এএফপি’কে জানিয়েছে, ‘প্রথম নিঃশর্ত অনুমোদনকে সমর্থন করে, কারণ অগ্রাধিকার হল ট্রাম্পের গ্যারান্টির অধীনে যুদ্ধবিরতি। সেখানে ইসরাইল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে’।
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, ‘দ্বিতীয়টির মূল ধারাগুলো সম্পর্কে গুরুতর আপত্তি রয়েছে। তারা হামাস এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর দাবির প্রতিফলনসহ শর্তসাপেক্ষ অনুমোদনের পক্ষে’।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের একজন সিনিয়র পলিসি ফেলো হিউ লোভাট বলেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত এটি কেবল দোহায় হামাস নেতৃত্বকে বোঝানোর বিষয়ে নয়, বরং গাজার নেতৃত্ব সেইসাথে গাজার হামাস সদস্য এবং যোদ্ধাদেরও বোঝানোর বিষয়।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘অতিরিক্তভাবে, হামাসকে তখন গাজার অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোকে বোঝাতে সক্ষম হতে হবে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামাসের অতর্কিত আক্রমণের ফলে এই যুদ্ধ শুরু হয়।
এএফপি’র ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণে কমপক্ষে ৬৭,২২৫ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী এবং শিশু।