ঢাকা, ২৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই তিন সমন্বয়ক হলেন- নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদার।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিন সমন্বয়ককে তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করে ডিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। সহিংসতার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য আছে কিনা, তা জানতে চাওয়া হবে।’
বিকেলের দিকে তিন সমন্বয়ককে সাদা পোশাকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে নাহিদের পরিবার জানায়, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল লোক এসে প্রথমে নাহিদকে তুলে নিয়ে যান। পরে আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যান।
এই তিনজনকে এর আগেও তুলে নেওয়া হয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা দাবি আদায়ে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার পর ১৯ জুলাই মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া থেকে নাহিদকে তুলে নেওয়া হয়। ২১ জুলাই ভোরে পূর্বাচল এলাকায় তাকে ফেলে যাওয়া হয়। এর পর থেকে তিনি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অপর দুই সমন্বয়ক আসিফ ও বাকেরকেও ১৯ জুলাই তুলে নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ দিন পর ২৪ জুলাই আসিফকে হাতিরঝিল ও বাকেরকে ধানমন্ডি এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়। এর পর থেকে আসিফ ও বাকের গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এদিকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, তিন সমন্বয়ক নিজেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। কারা যেন তাদের হুমকি দিয়েছিল। নিরাপত্তার জন্যই তাদের ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এইদিনও কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘাত, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে ‘ব¬ক রেইড’ দিয়ে চলে গ্রেফতার অভিযান।
গত ১০ দিনে (১৭ থেকে ২৬ জুলাই) সারা দেশে মোট ৬ হাজার ২৬৪ জন গ্রেফতার হয়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেফতার হয় ৭৬৫ জন। এই সময়ে রাজধানীতে গ্রেফতার করা হয় ২০৭ জনকে। শুধু রাজধানীতে ১০ দিনে মোট গ্রেফতারের সংখ্যা ২ হাজার ৪১৬ জন। এইদিন ঢাকার বাইরে নতুন ২২টি ও ঢাকায় আরও আটটি মামলা হয়। ঢাকায় এ নিয়ে মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২০৯ (সূত্র: প্রথম আলো, ২৭ জুলাই)।
কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার সকালে রংপুরের পীরগঞ্জের গিয়ে তার মা-বাবার হাতে সাড়ে সাত লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদল।
এছাড়াও বাংলাদেশে সম্প্রতি নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহারের ঘটনায় গভীর উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে জাতিসংঘ।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকটির ‘শহীদ রুদ্র তোরণ’ নামকরণ করে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। ২৬ জুলাই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারা দেশে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে সরকারের পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে ‘জাতীয় ঐক্যের’ ডাক দেন।
এদিন বিকেলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) সহিংসতায় আহতদের দেখতে গিয়ে দলমত নির্বিশেষে আহত সবার চিকিৎসা ও আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা দরকার সবই করবে সরকার।
এর আগে সকালে রামপুরায় নাশকতাকারীদের হামলা ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সে দেশের লেবার পার্টির এমপি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. রুপা হক বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে পার্লামেন্টে প্রশ্ন তুলেন। তিনি পার্লামেন্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের অবস্থান জানতে চান।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে প্রাণহানি ও ধ্বংস নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার রাজনৈতিক সমধানের দাবী জানায় বামপন্থি জোট ও দলগুলো।
সরকারি চাকরিতে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে সহিংসতায় প্রাণহানি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশের জনগণ যে সহিংসতার শিকার হয়েছে তাতে বিস্ময় প্রকাশ করে কানাডা।
এইদিন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে জানায়, ভিন্নমত ও দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অপরাধ নয়, সাংবিধানিক অধিকার।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা চলাকালে প্রত্যেকটি প্রাণহানির ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একইসঙ্গে ঢালাওভাবে মামলা, গ্রেফতার বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।