উত্তরায় সেদিন বেধড়ক মারধর করা হয় ছাত্রীদের 

বাসস
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৯:১৪
ছবি : সংগৃহীত

ইসমাঈল আহসান

ঢাকা (উত্তর), ২ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : আজ সেই ভয়াল ২রা আগস্ট। ২০২৪ এর ১৬ জুলাই থেকে দ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়া উত্তরা ছিল উত্তপ্ত। এর মধ্যে বেশি সংখ্যক হতাহত হয় ১৮, ১৯ ও ২১ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্ট। কিন্তু আজকের এই দিনে উত্তরায় সবচেয়ে বেশি মারধরের শিকার হন শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে ছাত্রীরা।

২ আগস্ট ২০২৪ ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজের আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় ছাত্রদের বিক্ষোভ। নামাজের পরে মসজিদ থেকে বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে সবাই এসে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদের সঙ্গে। সহিংসতার শুরু থেকে ঐদিনই উত্তরার আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি মেয়েদের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। 

বিক্ষোভের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনের চৌরাস্তায় আর আরেকটা অংশ ছিল রাজউক কলেজের সামনে। বৃষ্টির মধ্যে রিকশায় মেয়েদের স্লোগানের সেই বিখ্যাত ছবিটি রাজউক কলেজের সামনে থেকে তোলা।

বিক্ষোভের শুরুতেই পরিস্থিতি আঁচ করে গণমাধ্যম কর্মীরা পর্যন্ত মেয়েদের অনুরোধ করতে থাকেন ‘পরিস্থিতি ভালো না, তোমরা এখান থেকে সরে যাও।‘ কিন্তু একজন মেয়েও সেখান থেকে সরেননি। উল্টো তারা বলতে থাকেন, ‘ছেলেদের সঙ্গে আমরাও জীবন দেব। আমাদের বন্ধুরা জীবন দিয়েছে, আমাদের বেঁচে থেকে লাভ কি?’।

সবচেয়ে অগ্রসর ভূমিকা রাখেন বিমান দুর্ঘটনায় আলোচিত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ ও বিভিন্ন বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা।

শেষ পর্যন্ত উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের মাইলস্টোন কলেজের সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান-পিস্তল, ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠিসোটা নিয়ে জমজম টাওয়ার মোড়ে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাবিব হাসান, কয়েক কাউন্সিলরসহ নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন। 

এ সময় শিক্ষার্থীরা ছিলেন মাইলস্টোন কলেজের সামনে। বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া দেন। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রায় সকল শিক্ষার্থী ১১ নম্বর সেক্টর মাইলস্টোন কলেজের পেছনে আটকা পড়ে যায়। আওয়ামী লীগের লোকজন চতুর্দিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলে।

বিকেল ৫টার দিকে বিক্ষোভকারীরা আবার মূল সড়কে ওঠার চেষ্টা করলে পুলিশ চড়াও হয়। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বেশ কয়েকজন যুবককে আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। তাতে গুলিবিদ্ধসহ কয়েকজন আহত হন। 

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অনেকগুলো ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি বাসায় আটকে পড়া বিক্ষোভকারীদের একদল যুবক মারধর করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি লেখা ভেসে ওঠে ‘আটকে পড়া উত্তরার শিক্ষার্থীদের বাঁচান।’ বিশেষ করে সব বাড়ীওয়ালা যখন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ভয়ে মেইন গেট বন্ধ করে দেয়, তখন সেক্টরে আটকে পড়া অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন বাসা-বাড়ির সামনে চিল্লিয়ে বলতে শোনা যায় ‘আপনারা দরজা খুলে দিন, আমাদেরকে বাঁচান।‘

আন্দোলনকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজমপুরে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়ান শিক্ষার্থীদের আরেক গ্রুপ। জমজম টাওয়ারের দিক থেকে সশস্ত্র আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে সেখানেও তাদের নির্মমভাবে পেটাতে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে: এম সাখাওয়াত হোসেন 
পোপ লিও’র নেতৃত্বে নৈশপ্রার্থনায় সমবেত হচ্ছেন ১০ লাখ তরুণ
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন : মেজর হাফিজ
স্বাধীনতার দুশমনদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই : মামুনুল হক
আহত জুলাই যোদ্ধাদের ১৫৫৮ জনের তালিকার গেজেট প্রকাশ 
‘জুলাই শহীদদের মায়েরা চিরকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন’
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে ৫ আগস্ট গণমিছিল সফল করতে আহ্বান জামায়াতের
আনোয়ারায় সাপের কামড়ে কিশোরীর মৃত্যু
জয়পুরহাটে ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অভিভাবক সমাবেশ 
রোমে রেমিট্যান্স যোদ্ধা দিবস পালন
১০