মো. আব্দুল কাইয়ুম
ময়মনসিংহ, ৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : এক বছর পেরিয়ে গেলেও স্মৃতি এখনো টাটকা। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সেই রোববার, যেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার ডাকে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ময়মনসিংহ। সেদিন টাউন হল মোড় হয়ে উঠেছিল এক উত্তপ্ত প্রতিরোধের মঞ্চ। আর আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে প্রশাসনিক ভবন ও রাজনৈতিক কার্যালয়গুলোতে।
৪ আগস্ট সকাল ১১টা থেকে গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনকারীরা ময়মনসিংহ নগরীর কেন্দ্রস্থল টাউন হল ও আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। ফেস্টুন আর স্লোগানে প্রকম্পিত ছিল নগরীর বাতাস। মিছিল থেকে সরাসরি চড়াও হয় প্রশাসনিক ভবনগুলোর ওপর। বিক্ষোভকারীদের একাংশ বিভাগীয় কমিশনারের অফিস ঘেরাও করে গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং নিচ তলার দরজা-জানালা ও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। ওই সময় অফিসে অবস্থান করছিলেন কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অফিস ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। এসময় আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’
শুধু প্রশাসনিক ভবনই নয়, ছাত্রজনতার ক্ষোভ আছড়ে পড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। ময়মনসিংহ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মো. শরীফ আহমেদের বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। একইভাবে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের গেটও ভাঙচুর হয়।
মুক্তাগাছায় উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। দিনভর চলতে থাকে উত্তেজনা। বিকেল ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কৃষ্ণচূড়া চত্বরে জড়ো হয়ে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু এবং সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত। প্রতিবাদ মিছিল শেষে সমাবেশে মোহিত উর রহমান শান্ত ও ইকরামুল হক টিটু প্রকাশ্যে ছাত্রজনতাকে উদ্দেশ্যে করে হত্যার হুমকি দেয় এবং ১৯ জুলাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে শহীদ সাগরের পরিণতির কথা তুলে ধরেন।
প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্থাপনায় হামলা, শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং পাল্টা প্রতিবাদ সব মিলিয়ে ৪ আগস্ট ২০২৪ হয়ে ওঠে ময়মনসিংহের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক সন্ধিক্ষণের দিন। সে দিন রাষ্ট্রের ক্ষমতার প্রতীকগুলো যেন একে একে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল ছাত্র-জনতার সম্মিলিত পদচারণায়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম বলেন, আজ এক বছর পর ফিরে তাকালে দেখা যায়, ওই দিনটি ছিল শাসকবিরোধী ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, দমননীতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বয়ে যাওয়া এক জাগরণের দিন। যা এখনও ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে একটি বিস্ময়, একটি অনুরণন হয়ে।