শিরোনাম
সিরাজগঞ্জ, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): নাব্যতা সংকট ও পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ছে উত্তরবঙ্গে কৃষি উপকরণ ও জ্বালানি সরবরাহের এক সময়কার প্রাণকেন্দ্র বাঘাবাড়ী নদীবন্দর।
আশির দশকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় নির্মিত হয় নদী বন্দরটি। প্রথম কয়েক দশক সার, তেল, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য বোঝাই কার্গো জাহাজের ভিড়ে সরগরম থাকত এই বন্দর। কিন্তু এখন নাব্যতার অভাবে শুষ্ক মৌসুমে মালবাহী জাহাজগুলো ভিড়তে পারে না বাঘাবাড়ী বন্দরে। ফলে চট্টগ্রাম থেকে আসা সার বোঝাই জাহাজগুলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোরের নওয়াপাড়া বন্দরে পণ্য খালাস করে। সেখান থেকে সড়কপথে উত্তরাঞ্চলে পরিবহন করা হয় এসব কৃষি উপকরণ।
পণ্যবাহী জাহাজের মাস্টার ইউসুফ মোল্লা বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে সারবাহী একটি জাহাজ নিয়ে নদীপথে বাঘাবাড়ী বন্দরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে সেখানে মাল খালাস করতে পারিনি। আরিচা কার্গোতে খালাস করতে হয়েছে।
বাঘাবাড়ী রুটে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভারী পণ্যবাহী জাহাজ চালানো যায় না বলে অধিকাংশ শিপিং কোম্পানি এখন এ রুটে তাদের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে নওয়াপাড়া বন্দরমুখী হয়েছে বলে জানান তিনি। ইউসুফ বলেন, নওয়াপাড়া বন্দরে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টনের কার্গোবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে, তবে বাঘাবাড়ী বন্দরে সম্ভব না।
বাঘাবাড়ী ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, শুষ্ক মৌসুমে ৭-৮ ফুটের বেশি ড্রাফট লোড নিয়ে এ বন্দরে কোনো নৌযান ভিড়তে পারে না (পানির সমতল থেকে নৌযানের তলার দূরত্ব অর্থাৎ একটি নৌযানের তলা পানির যতদূর নিচে যায় তাকে ড্রাফট বলে)। সারবাহী জাহাজগুলো অন্তত ১০-১২ ফুট ড্রাফট লোড নিয়ে চলাচল করে।
বাঘাবাড়ীর বন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এই নদীবন্দর প্রতিষ্ঠার সময় নৌযানের আকার ছোট ও পণ্য পরিবহনের সক্ষমতাও অপেক্ষাকৃত কম ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নৌযানের আকার ও ধারণক্ষমতা বাড়লেও বন্দরের আধুনিকীকরণ হয়নি।
বাঘাবাড়ী নদীবন্দরের শ্রমিক সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, একসময় এই বন্দরে ৪০০ থেকে ৫০০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করতেন। কিন্তু বর্তমানে কাজ না থাকায় অনেকেই বন্দর ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকেছেন। এখন ১০০ থেকে ১৫০ জন শ্রমিকও অনেক বেশী।
বন্দরে সার পরিবহন প্রায় বন্ধ থাকায় বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) গুদামে এখন সার আনা হচ্ছে নওয়াপাড়া বন্দর থেকে। তবে সেগুলোও সময়মতো পৌঁছায় না বলে অভিযোগ গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আনসারীর। তিনি বলেন, জানুয়ারিতে সিরাজগঞ্জ জেলায় ১০ হাজার ২৮১ টন সারের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মজুত রয়েছে সাত হাজার ৭৩৪ টন সার। শুধু সার নয়, শুষ্ক মৌসুমে বাঘাবাড়ী বন্দরে তেল পরিবহনেও সংকট তৈরি হয়।
বাঘাবাড়ীতে অবস্থিত যমুনা তেল ডিপোর কর্মকর্তা আবুল ফজল বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তেলবাহী জাহাজগুলো অন্তত ১০-১২ লাখ লিটার তেল পরিবহন করে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদীপথে ঝুঁকি থাকায় তাদের আট থেকে নয় লাখ লিটার তেল পরিবহন করতে হচ্ছে। বড়াল নদীর চ্যানেলটি উন্নত করা গেলে পূর্ণ ক্ষমতার জাহাজই বন্দরে খালাস করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, বাঘাবাড়ী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর ছিল। এই বন্দরটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করতে একটি মেগা প্রকল্পে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যা দূর হবে।