শিরোনাম
খাগড়াছড়ি, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার সবুজ অরণ্যজুড়ে এখন ইটভাটার ক্ষত। সবুজ পাহাড় এবং কৃষি জমিতে জ্বলছে ইটভাটার চিমনি। ভাটার ধোয়ায় বিপর্যস্ত পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য।
ভাটা নির্মাণের জন্য পাহাড় কেটে সমান করা হয়েছে। এসব ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এসব ভাটার সবকটি অবৈধ বলে অভিযোগ রায়ছে। ইটভাটাগুলোতে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ির সবভাটাতে ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন পুরোপরি মানা হচ্ছে না। এসব লাইন্সেসবিহীন ভাটা থেকে সরকার কোন রাজস্বও পাচ্ছে না। খাগড়াছড়িতে ইটভাটার সংখ্যা ৩৩টি।
সরেজমিনে জেলা সদর ৩২ কিমি দূরের গুইমারা উপজেলা গিয়ে দেখা যায় বর্তমানে ৫টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।
মদিনা ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায় অনিয়মের হিড়িক। ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে টিনের চিমনি। মাত্র ৪০ ফুটের কম উচ্চতার এসব চিমনির ধোয়া গ্রাস করছে আশপাশের গ্রাম। লোকালয় বা সৃজিত বাগানের পাশে ইটভাটা স্থাপন বেআইনী হলেও তা তোয়াক্কা করছে না। এছাড়া ভাটায় কাঠের পরিবর্তে কয়লা পোড়ানোর কথা থাকলেও পুরো ভাটা ঘুরে কয়লার দেখা পাওয়া যায়নি। ইটভাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, কাঠ স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। পাহাড় থেকে কেটে নিয়ে আসা হয়। এখানে কয়লা পরিবহন ব্যয়বহুল। এ সময় তারা আরো জানান, ‘ইটভাটার মালিকেরা সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করে ভাটা চালায়।’ গুইমারার পাশেরই লাগায়ো মাটিরাঙা উপজেলা। এখানে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ১৩ টি। উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিমি দূরে টিনের চিমনি ব্যবহার করে বনের কাঠ পোড়ানা হচ্ছে ফাইভ স্টার ইটভাটায়। এখানে ইটভাটার কাজে সস্তা শ্রমে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে দীঘিনালা উপজেলার দূরত্ব প্রায় ২০ কিমি। উপজেলার বোয়ালখালি পুরাতন বাজার সংলগ্ন এলাকায় কুজেন্দ্র মল্লিকা মডেল কলেজের পাশেই কর্ণফুলী ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা। ভাটার মালিক রাকিব। তিনি উপজেলার রশিক নগর এলাকায় আরো একটি ভাটা গড়ে তুলেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশেই ভাটা গড়ে তোলার নিয়ম না থাকলেও তা এখানে মানা হয়নি।
দীঘিনালার রশিকনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়- কর্ণফুলী ব্রিকস ও এসএন্ডবি নামে দুটো ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটার জন্য পাশের ফসলি জমি। প্রায় দুই একরের কৃষি জমি কেটে ভাটায় ইট পোড়ানো হয়েছে। এসব ভাটায় ইট, কাঠ ও মাটি পরিবহনের কারণে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। ছোট সড়কের অধিকাংশ যানবাহন চলাচলের কারণে ধুলোয় ধূসর পুরো এলাকা। এসব ভাটার কারণে অতিষ্ঠ জনজীবন। স্থানীয় বাসিন্দা-মোছাম্মদ হাওয়া বেগম, পারুল বেগম ও ইউনুস ব্যাপারী জানান, ‘ব্রিক ফিল্ডে প্রচুর গাড়ি যায়। এসব গাড়ির কারণে আমাদের বাড়ি, সবজির ক্ষেত, আশপাশের বাগানের গাছ ধুলো জমে থাকে। কতবার অভিযোগ করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। যখন বড় গাড়ি ভাটায় যায় আশপাশের পুরো এলাকায় ধুলোয় অন্ধকার হয়েছে যায়। ধুলো বালির কারণে সব সময় রোগবালাই লেগে থাকে।
দীঘিনালার কেবিএম ব্রিকসের মালিকের মো.রাকিব জানান, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে যেসব ধারা বা শর্ত দেয়া হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে তা মেনা চলা কঠিন। এখানে উন্নয়নের জন্য আমরা ইটভাটা চালু রেখেছি।’
খাগড়াছড়ি ইটভাটা মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিস জানান,‘ বর্তমানে জেলায় ইটভাটার সংখ্য ৩৩টি। গতবছর ছিল ৩৮টি। ভূপ্রাকৃতিক গঠনের কারণে ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণের সরকার যে আইন করেছে পার্বত্য এলাকায় তা মেনে চলা কঠিন। ফলে এখানে লাইন্সেস ছাড়াই ভাটা চলছে।
খাগড়াছড়ি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ ফরিদ মিঞা জানান, ‘ইটভাটা সাধারণত নিয়ন্ত্রণ ও অনুমোদন দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। বনের কাঠ যাতে পরিবহন করতে না পেরে সেই বিষয়ে আমরা তদারকি করছে। টাস্কফোর্স করে ইটভাটায় বনের কাঠ পোড়ানো বন্ধ করতে হবে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান জানান, ‘কোন ভাটায় যদি গাছ পোড়ানো হয় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতবছর আমরা ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করেছি । আইন না মানলে এবার আরো বেশি জরিমানা করা হবে।’
খাগড়াছড়িতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কার্যালয় না থাকায় চট্টগ্রাম থেকে তদারকির দায়িত্ব পালন করেন পরিবেশ অধিদপ্তর। সেখানকার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান জানান, ‘আমরা খুব শীঘ্রই খাগড়াছড়ির অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।