বাসস
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৪

প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

\ সেলিনা শিউলী \

ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আন্তরিকভাবে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৬ মাসের কার্যক্রম নিয়ে বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, এ যাবৎ ২ হাজার একরের বেশি বনভূমি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প হতে ফেরত আনা হয়েছে। গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বনভূমির অবৈধ দখল মুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মধুপুর শালবনের বন নির্ভর জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, এই ছয় মাসে জনগণের প্রত্যাশা চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন কাজ হল মাইক্রো ইস্যুতে না গিয়ে ম্যাক্রো ইস্যুতে থেকে কাজ করা। তিনি বলেন, দেশের জন মানুষ সমর্থন দিয়েছে, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন, সাহসের জায়গা। জনগণের সমর্থনেই অনেক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।

পরিবেশ উপদেষ্টা তার দুই মন্ত্রণালয় কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে বলেন, মানুষের দুর্ভোগ কমাতে বায়ুদূষণ নিয়ে বিভিন্ন কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাস্তায় পানি ছিটিয়ে তো আর বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। আমরা দেখছি কোন কোন জায়গায় কীভাবে বায়ুদূষণ কমানো যায়। জনস্বার্থে ও পরিবেশ রক্ষায় ধূলা নিয়ন্ত্রণেও আমরা কাজ শুরু করেছি।

উপদেষ্টা আরো বলেন, ভাঙা রাস্তা, রাস্তার আস্তরণ আর নির্মাণ সামগ্রী উন্মুক্ত রাখার স্থানসহ ইটভাটা থেকে ধূলো আসে, আবার শীতকালেও বায়ুদূষণ বেশি হয়। এসব বিবেচনায় নিয়ে আমরা কাজ করছি।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজধানী ঢাকা নিয়ে একটা সার্ভে করেছে। কোথায় রাস্তা ভাঙা আছে, রাস্তার পাশে স্লোপ বা ডিভাইডারের ফাঁকা জায়গা রয়েছে, সেখানে গাছ লাগানো হবে।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ভাঙা রাস্তাগুলো মেরামত করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। নির্মাণ কাজে জড়িত বেশিরভাগ কন্ট্রাক্টরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নতুন করে প্রচেষ্টা শুরু করতে হচ্ছে। আশা করছি, আগামী অক্টোবরের মধ্যে ভাঙা রাস্তাগুলো ঠিক করা সম্ভব হবে।

পরিবেশ রক্ষা ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাস্তার পাশে ডিভাইডার ও স্লোপ এরিয়াতে বৃক্ষ রোপণের ক্ষেত্রে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।

মাত্র চার জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সারা দেশের ইটভাটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে যেসব জায়গায় অবৈধ ইটভাটা রয়েছে এবং যে যেসব ইট ভাটায় ‘ধোঁয়া’ বেশি আসে সেগুলোকে ‘নো ব্রিকফিল্ড জোন’ ঘোষণা করা হবে।

উপদেষ্টা বলেন, সরকারের বিশেষ উদ্যোগে শপিংমলগুলো হতে পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার অনেকাংশে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, পরিবহন ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও আইনপ্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে।

সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে যা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার আমরা বাস্তবায়ন করেছি। বাস্তবায়ন করতে গিয়েও বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

তিনি বলেন, হোটেল মালিক এবং জাহাজের মালিক কেউই সেন্ট মার্টিনের না। সব ব্যবসায়ীরা এলাকার বাইরের। কিন্তু সেন্ট মার্টিনের মানুষের দুঃখের কথা বলে এ গোষ্ঠী বিতর্ক সৃষ্টি করছে। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে জীববৈচিত্র্যসহ রক্ষা করার চেষ্টা করেছি।

উপদেষ্টা বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীকে পুনরুদ্ধার করে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। বুড়িগঙ্গা নিয়ে আমাদের জন্য একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বুড়িগঙ্গার পানিতে অনেক ভারী ধাতু আছে। এর তলদেশে রয়েছে বিপুল পরিমাণ পলিথিন। এসব সরিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে।

তিনি বলেন, বিশ্বের কোন দেশকে নদী দূষণে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়নি। বিগত সময়ে বুড়িগঙ্গায় সবাই আবর্জনা ফেলেই গেছেন। বুড়িগঙ্গা নদীতে কোন স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম) হয়নি। তাই বুড়িগঙ্গা রক্ষায় এ নদীর তলদেশের এসব জঞ্জাল নিরসনে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার একটা কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। বাজেটসহ কাজটা শুরু করবো শিগগিরই।

নদী এবং খালগুলো রক্ষায় পলিউশন পয়েন্টে (দূষণ স্থান) নির্ণয়ে জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এ কথা উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এসব নদী ও খালের পলিউশন পয়েন্টে যেখানে শিল্প কারখানা রয়েছে,সংশ্লিষ্টদের সাথে কাজ শুরু করব। কিন্তু এখানেও স্যুয়ারেজ প্লান্ট ঠিকমতো না হলে অন্তর্বর্তী সময়ে ওই জায়গাতে বিকল্প কিছু করা যায় কি না সেটা নিয়েও ভাবা হচ্ছে।

ঢাকার খাল রক্ষা পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হওয়ার কথা উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, নদী পুনরুদ্ধারের একটা বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা শুরু করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, দেশের ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকের কাছে থেকে ৬৪ টি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে বাজেট সহ কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি। এগুলোর মধ্যে হতে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবে। ইতোমধ্যে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে কাজ শুরু হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, যশোরের ভবদহের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাময়িকভাবে হলেও মানুষের মনে স্বস্তি আনা সম্ভব হয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করা হবে।