শিরোনাম
শাহজাহান নবীন
ঝিনাইদহ, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): রাত পোহালেই পহেলা ফাল্গুন। সেই সঙ্গে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের হাতছানি। এরই মধ্যে বসন্ত উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেও সারাদেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে জেলার ফুলচাষিরা ফুল সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাইকারি ও খুচরা বাজারে জমে উঠেছে বিকিকিনি। ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পেরে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, মহেশপুর উপজেলার নেপা বাজারের পাইকারি ফুলের বাজারে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে। এই ফুলগুলো হাত বদলে চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। সারাদেশে গাঁদা ফুলের ৭০ শতাংশ চাহিদা মিটিয়ে থাকে ঝিনাইদহের চাষীরা। এ বছর গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা, সাদা গোলাপ, গ্লাডিওলাসসহ নানা জাতের ফুল চাষ হয়েছে।
সরোজমিনে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না গ্রামে গিয়ে দেখা হয়, ফুলচাষি সোলাইমান হোসেন-এর সাথে। তিনি বলেন, ১ বিঘা জমিতে জারবারা ফুলের চাষ করেছি। বর্তমানে ১ একর জমিতে চন্দ্রমল্লিকা, জারবারা, গোলাপ ও গাঁদা ফুলের চাষ করা হয়েছে। বিশেষ দিবসকে ঘিরে ফুল গাছের পরিচর্যায় আমাদের ব্যস্ত সময় কাটছে। বর্তমানে বাজারে ফুলের দামও ভালো আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ঝিনাইদহে এ বছর ২২৪ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২৭ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৭৫ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৫২ হেক্টর এবং মহেশপুর উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে নানা প্রজাতির ফুল চাষ হয়েছে। তবে জেলার সদর উপজেলা ও কালীগঞ্জে গাঁদা ফুলের চাষ বেশি হয়ে থাকে। হলুদ ও লাল রঙের এই ফুল সারাদেশে বেশ জনপ্রিয়।
ফুল চাষি শরিফুল ইসলাম বাসস'কে বলেন, ডিসেম্বর থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিশেষ দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। একারণে ফুলের বাড়তি যত্ন নেওয়া হয়। গতবছর ফুলের বাজার অনেক ভালো ছিল, এবছর একটু কম। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি, বসন্ত বরণ ও ২১শে ফেব্রুয়ারি ফুলের দাম বেশি পাবো বলে আশা করছি।
জেলা ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি জমির উদ্দিন জানান, গত কয়েকদিন আগেও ফুলের চাহিদা অনেক কম ছিল। বর্তমানে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। ঝিনাইদহের গাঁদা ফুল সারাদেশে জনপ্রিয়। বর্তমানে প্রতি ঝুপা (গোছা) গাঁদা ফুল মান ভেদে ২৫০ টাকা থেকে ৩৬০ টাকা, গোলাপ প্রতি পিস ১৮ থেকে ২০ টাকা, জারবারা প্রতি পিস ৮ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতি পিস ৬ টাকা থেকে ৭ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস প্রতি পিস ১০ থেকে ১২ টাকা পাইকারি বিক্রয় হচ্ছে।
জমির উদ্দিন বাসস'কে বলেন, এ বছর জেলার পাইকারি ও খুচরা বাজার থেকে আনুমানিক সর্বমোট ৫০ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রয় করার টার্গেট রয়েছে। পহেলা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষকরা এবার ভালো দাম পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, গতবছর একটি গোলাপ বিক্রয় হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, সেখানে বর্তমান বাজারে বিক্রয় হচ্ছে সবোর্চ্চ ২৫ টাকা। এবছর ফুলের অনেক উৎপাদন বেড়েছে। দেশে ফুলের বিভিন্ন ভ্যারাইটি উৎপাদন হচ্ছে, যার মধ্যে লিলিয়াম, গ্লাডিওলাস, গোলাপ, জারবারা, টিউলিপ, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূর-এ-নবী বলেন, ঝিনাইদহে ফুল চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আশা করছি এ বছর সদর উপজেলার গান্না বাজার থেকেই ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রয় হবে। আমরা ফুলের পরিচর্যা, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়েছি। আশা করছি, এবছর কৃষকরা লাভবান হবেন।