দিনাজপুর, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): জেলার বিরল উপজেলার পল্লীতে অনেকে গোলাপ সহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষে করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
বিভিন্ন সামাজিক উৎসব গুলোতে ফুলের চাহিদা বেড়েই চলছে,ফলে ফুল বিক্রি করে তারা লাভবান হচ্ছেন।
জেলার বিরল উপজেলার ভান্ডারা ঘাঘরপাড়া ও কাজী পাড়ায় ফুল চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রামের চাষীরা গোলাপ সহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করে তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। ফেব্রুয়ারী মাসে গোলাপ সহ সব ধরনের ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। গোলাপের দাম আরো বেড়ে যায়। সাধারণত এসব ফুল ৩ থেকে ৪ টাকায় বিক্রি হলেও ভালোবাসা দিবসে ১০ থেকে ১২ টাকা পিস বিক্রি হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেলে কথা হয়, উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের ঘাঘরপাড়া গ্রামের ফুল চাষী রেজাউল ইসলাম (৩৫) এর সাথে। তিনি বলেন,গোলাপ ফুলের বাগানে বিশেষ নজরদারি ও পাহারা দেওয়া হয়। শীতের সময় বাগানে লাল, সাদা, হলুদ, কালো গোলাপসহ ১৪ ধরনের গোলাপ ফোটে। এখানকার চাষিরা প্রতিদিন ফুল বিক্রি করে সহজেই নগদ টাকা পাচ্ছেন। এই সাফল্যে এখন তরুণরা গোলাপ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামে গোলাপ ফুলের চাষ এখন খুব প্রসারিত। গ্রামটি গোলাপ ফুলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। এখানকার চাষিরা গোলাপ চাষের পাশাপাশি রজনীগন্ধা, কাঠবেলি, গাঁদা ফুলও চাষ করছেন।
ভান্ডার ইউনিয়নের ঘাঘরপাড়া গ্রামের চাষি বজ্রনাথ রায় (৫০) ও পুলিন চন্দ্র রায় (৪৫) আলাদা আলাদা গোলাপ ফুলের বাগান করেছেন। বজ্রনাথ রায় ২৫ শতক জমিতে ১ হাজার ৮'শ গোলাপ ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। প্রতিদিন দু'শ থেকে ৩'শ পিস গোলাপ বিক্রি করে বেশ ভালো টাকা আয় করছেন। পুলিন চন্দ্র রায় তার ১৮ শতক জমিতে গোলাপ ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। প্রতি বছর ফুল বিক্রি করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করছেন।
কাজীপাড়ায় গোলাপ ফুলের ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় ফুলচাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এখানকার প্রতিটি গোলাপ ৪ থেকে ৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। এতে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার ফুল বিক্রি করছেন চাষিরা।
গোলাপ চাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, ৬ বছর আগে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেছিলাম। এখন আমি আর্থিক ভাবে সচ্ছল। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার ফুল বিক্রি করছি।
ফুল চাষের দিকে ঝুঁকেছেন একাধিক শিক্ষিত যুবকরা। তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ফুল ব্যবসা করে আর্থিকভাবে অনেক চাষি স্বাবলম্বী হয়েছেন। গোলাপ ফুলের পাশাপাশি আমরা গাঁদা, রজনীগন্ধা, বেলি ফুলও চাষ করছি।
উপজেলার রবিপুর এলাকার ফুল চাষী শমশের আলী (৩২) জানান, ১০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষা মূলক ভাবে ফুল চাষ করেছি। অর্জিত ফুলের ভালো ফলন পেয়েছি। আগামীতে এক বিঘা জমিতে ফুল চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
একই গ্রামের মোকাররম হোসেন(৩০) নামে এক চাষি বলেন,আমি নিজের ৪২ শতক জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছি। বছরে ১২ মাস তার বাগানে ফুল পাওয়া যায়। পাইকারেরা তার বাগান থেকে ফুল নিয়ে যায়। ফুলের দাম সব সময় ওঠানামা করে। বিশেষ দিন গুলোতে দাম বেশি পাওয়া যায়। গোলাপ ফুল বিক্রি করে প্রতিদিন আমি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করি। তার ফুলের বাগান পরিচর্যা ও দেখাশোনা করার জন্য স্থায়ীভাবে ৪ জন লোক রাখা হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি, ফুলের স্প্রে ও অন্যান্য পরিচর্যায় প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট পরিমান ব্যয় করতে হয়। ফুলের বাগানে পরিচর্যা ও দেখাশুনার একটু ঘাটতি হলে ফুলের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য সার্বক্ষণিক প্রতিটি বাগান মালিককে নিজে ফুলের বাগানের দেখাশোনা করতে হয়। এভাবে পরির্চ্চার মাধ্যমে ফুলের বাগান থেকে আয় করা সম্ভব হচ্ছে।
বিরল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, জেলার এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য অন্যতম অবস্থান রয়েছে। এখানকার কৃষকরা গোলাপ চাষ করে প্রচুর লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে ফুল চাষীদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে তিনি ব্যক্ত করেন।
বিরল উপজেলা কৃষি দপ্তরে ফুল নিয়ে গবেষণা করছেন উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম। তিনি জানান, গোলাপ চাষের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে চাষিদের সাহায্য করা হচ্ছে। এই অঞ্চলে ফুল চাষের দিকে আগ্রহ বাড়ছে। আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। আগামীতে এই ফুল চাষের ব্যাপকতার বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।