// হারুন অর রশিদ খান হাসান //
সিরাজগঞ্জ, ২১ মার্চ ২০২৫ ( বাসস) : মন্দাভাব কাটিয়ে আবারো সরগরম হয়ে উঠেছে জেলার তাঁত পল্লীগুলো। ঈদুল ফিতরকে ঘিরে কর্মমুখর হয়ে উঠছে তাঁত পল্লী। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত অবধি তাঁতের খট খট শব্দে শাড়ি, লুঙ্গী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে কারখানা মালিকদের এবারে বেগ পেতে হচ্ছে।
ঈদে ক্রেতাদের নতুন নতুন পোশাকের চাহিদা বিবেচনা করে বিভিন্ন নকশার শাড়ি, লুঙ্গী তৈরি করছেন কারিগররা। শ্রমিকদের উৎপাদিত প্রতিটি শাড়িতে আধুনিক ও শৈল্পিক কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বাহারী নকশা। তাঁত পল্লীতে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি ব্যাস্ত সময় পার করছেন নারী শ্রমিকরাও। তারা নলি ভরা, সুতা প্রস্তত করা, মাড় দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করেন।
রং, সুতা ও প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকায় শাড়ি, লুঙ্গীর দামও বেড়েছে বলে জানান কারখানার মালিকরা। সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে তাঁতকুঞ্জ খ্যাত সলঙ্গার পাঁচলিয়া গ্রামটি যুগ যুগ ধরে সুপরিচিত। পাঁচলিয়া গ্রামকে তাঁতপল্লী হিসেবে সবাই চেনেন। গ্রামের এমন কোন বাড়ি নাই যে বাড়িতে ন্যুনতম ১০/২০ টি তাঁত নাই। সিরাজগঞ্জের নামকরা পাঁচলিয়ার কাপড়ের হাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী ক্রেতারা বাহারী শাড়ি, লুঙ্গী, গামছা কিনতে এ হাটে আসেন। জেলার সলঙ্গা থানার পাঁচলিয়ার শাড়ি, লুঙ্গী শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও স্থান করে নিয়েছে।
ঈদ মৌসুম আসলেই সলঙ্গার তাঁতপল্লীতে কাজের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শ্রমিক,মহাজনদের যেন দম ফেলার সময় থাকে না। এ সব কারখানায় তৈরি হচ্ছে বাহারি নাম আর নতুন নতুন ডিজাইনের জামদানি, সুতি জামদানি, কাতান, বেনারসি, কন জামদানি, হাফ সিল্কসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ি ও লুঙ্গী। বেলকুচি, শাহজাদপুর, সদর পাঁচলিয়া, আমডাঙ্গা, হোড়গাতী, রতনকান্দি, বাদুল্লাপুর, তারুটিয়া, হাসানপুর, হাটিকুমরুল, জগন্নাথপুরসহ থানার বিভিন্ন গ্রামের উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গী পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
পাঁচলিয়ার বড় মহাজন আলহাজ্ব ইদ্রিস আলী জানান, পাঁচলিয়ার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গীর সুনাম দেশ জুড়ে। তাঁতশিল্পে কিছুটা মন্দাভাব শুরু হয়েছিল। তার উপর আবার রং,সুতা ও প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বেড়েছে। অনেক তাঁত বন্ধও হয়ে গেছে। তার পরেও বাপ দাদার পেশা এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমরা চেষ্টা করেই যাচ্ছি।
ফারুক উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক হাফিজুর জানান, ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে বাহারী রংয়ের শাড়ি-লুঙ্গী তৈরি করছেন। তাই তাদের জন্য ঈদ বোনাসের ব্যবস্থাও করেছি।
আরেক মহাজন খলিল জানান, গত বছর ঈদে ব্যবসা ভালো হয়েছিল, এবারেও আশা করছি ব্যবসা ভালোই হবে।
তাত ব্যাবসায়ী শফিকুল ইসলাম ও মুনছুর আলী জানান, কাঁচামাল, রং, সুতার বাজার, শ্রমিকের মুল্য নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আবারো ঘুরে দাঁড়াবে পাঁচলিয়ার ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প। এবছর বিদেশি শাড়ির আধিপত্য কমায় বেড়েছে দেশীয় তাঁত পণ্যর কদর। তাঁত মালিকদের দাবি রং এবং সুতোর দাম বেশি থাকার কারণে মুনাফা কম হবে।
সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁত ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি রং ও সুতার দাম কমানোর দাবি জানান তাঁত শিল্প মালিকরা। সিন্ডিকেটের কবলে পরে দিন দিন রং ও সুতার দাম বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান বাচ্চু বাসসকে বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর সিরাজগঞ্জের তাঁত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে অনেক। তবে রং ও সুতার দাম বেশি হওয়াতে সমস্যায় পরেছে ব্যবসায়ীরা। তিনি সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের কাছে রং ও সুতার দাম কমানোর আবেদন জানান।