।। লিয়াকত হোসেন লিংকন ।।
গোপালগঞ্জ, ২১ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার কোটালীপাড়ায় বাঙ্গির আশাতীত ফলন হয়েছে। বাঙ্গি সংগ্রহ ও বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
উপজেলার কলাবাড়িয়া ইউনিয়নের বুরুয়া, মাছপাড়া, হিজলবাড়ি, তেঁতুল বাড়ি, নলুয়া ও মাছপাড়া গ্রামে বিস্তীর্ণ মাঠে শুধু বাঙ্গি ক্ষেত। দেখলে শুধু চোখ নয়, মনও জুড়িয়ে যায়। এসব গ্রামের প্রধান কৃষি ফসল হলো বাঙ্গি-তরমুজ। ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় এখানকার বাঙ্গি-তরমুজের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কম খরচে লাভজনক হওয়ায় বাঙ্গি চাষে ঝুঁকেছেন তারা। এখানকার স্থানীয় কৃষকরা কম পুঁজিতে অধিক ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় প্রতি বছরই বাঙ্গির চাষ করেন।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর উপজেলার ৪৩৪ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব বাঙ্গি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে গড়ে উঠেছে বাঙ্গি-তরমুজের পাইকারি হাট। সকাল থেকেই চাষিরা তাদের বাঙ্গি তরমুজ নিয়ে হাটে আসছেন। আবার অনেকে রাস্তার পাশে সারি সারি বাঙ্গি-তরমুজ নিয়ে বসে আছেন ক্রেতার অপেক্ষায়। পাইকাররা কৃষকের উৎপাদিত বাঙ্গি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রকার ভেদে একশ’ বাঙ্গি সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নলুয়া গ্রামের বাঙ্গি চাষি পরিমল গাঙ্গুলী বলেন, ‘আমি এ বছর সাড়ে চার বিঘা জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে। বিক্রি করে দামও ভালো পাচ্ছি। খরচও কম, দামও ভালো।’
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন রায় বাসসকে বলেন, ‘কোটালীপাড়া উপজেলায় এবছর ৪৩৪ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার, বীজ ও পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে খুশি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের সরদার বলেন, ‘এ বছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। চাহিদা থাকায় জেলার উৎপাদিত বাঙ্গি বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। বাঙ্গিতে শর্করা, ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় এবং মিষ্টি কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের কাছে বাঙ্গি খুবই জনপ্রিয়।’
বাঙ্গি এক ধরনের শসা জাতীয় ফল যার অন্য নাম খরমুজ, কাঁকুড় বা ফুটি। দেশের প্রায় সব এলাকাতেই গ্রীষ্মকালে বাঙ্গি জন্মে। তরমুজের পর এটিই অধিক প্রচলিত শসা গোত্রীয় ফল। বাঙ্গি গাছ দেখতে অনেকটা শসা গাছের মতোই লতানো।
বাঙ্গির ছোট এবং লম্বাটে জাতকে চিনাল বলা হয়। ফুটি বেশ বড় আকারের হয়, কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ রঙের হয় এবং ফেটে যায়। ফলের বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো হালকা ডোরা কাটা খাঁজযুক্ত। খেতে তেমন মিষ্টি নয়, অনেকটা বেলে বেলে ধরনের। এর ভেতরটা ফাঁপা থাকে। কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন।
গ্রীষ্মকালে বাঙ্গি জন্মে। বাঙ্গি চাষের জন্য শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু সবচেয়ে উপযোগী। উর্বর বেলে দোআঁশ ও পলি মাটি বাঙ্গি চাষের জন্য সর্বোত্তম। মার্চ থেকে এপ্রিল বীজ বপনের সময়। তবে জাত ভেদে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে বাঙ্গির বীজ বপন করা হয়।
দেশে প্রধানত দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়। বেলে ও এঁটেল বাঙ্গি। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা, শাঁস খেতে বালি বালি লাগে, তেমন মিষ্টি নয়। অন্যদিকে, এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত এবং তুলনামূলকভাবে বেশি মিষ্টি। বাঙ্গি সাধারণত লম্বাটে হলেও গোলাকার মিষ্টিকুমড়ার মতো বাঙ্গিও রয়েছে। এ প্রজাতির বাঙ্গির অপর নাম চীনা বাঙ্গি।