সুনামগঞ্জ, ১৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নে প্রতিবছর গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। পুরষ্কৃত হন কৃষি অফিস কর্তৃক অনেকেই। এই বছর সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের একই পরিবারের দুই ভাই ইয়াসিন মিয়া ও আবু সাঈদ সবজি চাষে লাভবান হয়েছেন। শুধু তারাই নন উপজেলার আরও অনেক কৃষক সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
কৃষকরা বলছেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাস্তা ও পুকুর পাড়ের অনাবাদি জায়গা, নিজ বসতবাড়ির আশপাশের ১৪ কেদার জমিতে কাঁকরোল, ধুন্দল, বরবটি চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষকরা।
কৃষক ইয়াসিন ও আবু সাঈদ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শ ও সহযোগিতায় বর্ষাকালীন সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন তারা। তাদের ক্ষেতে কাঁকরোলের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি কাঁকরোল ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। দুই ভাই বলছেন, এ বছর ৫ লাখ টাকার উপরে কাঁকরোলসহ অন্যান্য সবজি বিক্রি করতে পারবেন।
আবু সাঈদ আরো বলেন, কাঁকরোল একটি উচ্চ ফলনশীল সবজি। কাঁকরোল চাষ করে একাধারে আটমাস ফলন পেয়ে থাকেন তারা। কাঁকরোলের কন্দ নরসিংদী থেকে সংগ্রহ করেন তার। তারা বলেন, আমাদের বাপ—দাদারাও এইসব সবজির চাষ করতেন, আর এখন তারা করছেন। সবজি চাষ ব্যয়বহুল এবং কষ্টকর। এইসব সবজি ফলাতে হলে প্রতিদিন পরিচর্যা করতে হয়। প্রতিদিন সকালে যে ফুল ফুটে, এরমধ্যে পুরুষ ফুল এবং স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন করতে হয়, সেজন্য কেউ চাষ করতে চায় না। কিন্তু আমরা এই সবজির সঙ্গে লেগে আছি। ব্যবসা যেমনই হোক আমরা চাষ করে আসছি। এই সবজিটা এমন এক সিজনে হয়, যখন অন্যান্য সবজি থাকে না। যেকারণে কাঁকরোলের দামটা বেশি। প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
ইতোমধ্যে আমরা লাভের দিকে এগুতে পেরেছি, উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এছাড়াও ধুন্দল, বরবটি, পেঁপেসহ অন্যান্য সবজি চাষ করেছি, ফলনও ভালো হয়েছে। আমরা প্রায় ১৪ কেয়ার জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষসহ ফলের চাষ করেছি।
একই গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি বছর চারা নার্সারি করি, এর পাশাপাশি সবজি চাষ করি। এ বছর একখানি (ত্রিশ শতক) জমিতে বেগুন এবং কলমি শাক চাষ করেছি। শাকটাতে তেমন লাভ করতে পারিনি, তবে বেগুন চাষে লাভবান হবো। সার, বীজ, কীটনাশক ওষুধ ক্রয়ে এই পর্যন্ত ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, আরও খরচ হবে। সবেমাত্র বেগুন ধরেছে, বেগুন বড় হচ্ছে। বিক্রিও শুরু করেছি। সাড়ে চার হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পেরেছি। দামে, ফলনে আমরা খুবই খুশি।
একই গ্রামের সফল কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর আমি ৬৬ শতাংশ জমিতে চাল কুমড়া, বেগুন এবং বরবটি চাষ করেছি। চাল কুমড়া এবং বরবটি বিক্রি শুরু করেছি। চাষ করেছি। মাস দেড়েক পর বেগুন ধরবে, আশা করি লাভবান হবো। আশা করি সব মিলিয়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো সবজি বিক্রি হবে।
কৃষি বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা সৈয়দ ইমরান হোসেন বলেন, পাহাড় ঘেঁষা একটি এলাকা হচ্ছে সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন। এই এলাকাটি উঁচু হওয়ায় সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। এই এলাকায় বসবাসকারী লোকজন বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন, যেমন— নরসিংদী, ময়মনসিংহ সহ অন্যান্য জেলা থেকে এসে বসবাস করছেন। তাদের অনেকেই কৃষক এবং ফসল উৎপাদনে খুবই অগ্রগামী। এখন আষাঢ় মাস চলছে। সুনামগঞ্জের বাজারগুলোতে সবজির ক্রাইসিস চলছে। কিন্তু সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন এলাকায় অদ্যাবধি সবজি চাষ, উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে। উঁচু এরিয়া হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ হয়। প্রচলিত সবজির সবগুলোই চাষ করা হয় এখানে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদেরকে পরামর্শ, পরিচর্যাসহ প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা করে আসছি। ভালো জাত, আগাম জাতের বীজ, অর্থাৎ যেগুলো প্রতিকূল আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পারে, সেসব সবজি চাষের পরামর্শ দিয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ঝরঝরিয়া এলাকায় বছরে তিন থেকে চারবার ফসল ফলানো হয়। এই জমিগুলো যাতে করে নিয়মিতভাবে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে পারি, আমরা সেই লক্ষে তাদেরকে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ঝরঝরিয়া এলাকায় দুই একজন কৃষক কাঁকরোল চাষ করছেন এবং লাভবান হচ্ছেন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল আলম বলেন, সদর উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন রকমের সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এই বছর সদর উপজেলায় মোট ৬৯০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৫ হেক্টর বেশি। এই গ্রীষ্মকালীন শাক— সবজির মধ্যে বেগুন, ধুন্দল, বরবটি, মুখিকচু, লতিকচু সহ অন্যান্য সবজি চাষ করা হয়।
তিনি বলেন, সদর উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে কাঁকরোল চাষ করা হয়েছে। যেহেতু কাঁকরোল চাষের জন্য বীজ পাওয়া যায় না। যাঁরা কাঁকরোল চাষ করছেন, তাদের নিকট থেকে যাতে করে পার্শ্ববর্তী কৃষকেরা বীজ সংগ্রহ করতে পারে, আমরা তাদেরকে সেই বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি।