“বিদ্রোহ ও ভালোবাসার জাতীয় কবি নজরুল স্মরণে বরিশাল”

বাসস
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১১:৪০
জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। ফাইল ছবি

//শুভব্রত দত্ত//

বরিশাল, ২৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ‘কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।’ ‘এ তুফান ভারী দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।’ কবি কাজী নজরুলের এই অমর সৃষ্টি কবিতার লাইনগুলো আজও প্রাসঙ্গিক।

“যে নজরুল আগুন জ্বালাতে শিখিয়ে ছিলেন কণ্ঠে, কলমে, গানে-আজও তার সেই আগুন প্রজন্মে প্রজন্মে শিখা হয়ে জ্বলে। বরিশালের সাহিত্য প্রেমী জনগণ সেই শিখার আলোতেই তাকে স্মরণ করে।”

আজ ২৭ আগস্ট বুধবার দিনব্যাপী বিদ্রোহ ও ভালোবাসার জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম স্মরণে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলার বিভিন্ন সংগঠনে পালিত হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯ তম মৃত্যুবিার্ষিকী।

৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ করা হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের এই অগ্নিকবি কাজি নজরুল ইসলামকে। ব্রিটিশ শাসনামলে বরিশাল ছিল সাংস্কৃতিক ভাবে সমৃদ্ধ। সে সময়ে নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা ও গান বরিশালে বিপ্লবী ও সাহিত্যিক মহলে ছড়িয়ে পড়ে। বরিশালের অনেক সাহিত্যিক, সংগঠক ও শিক্ষক নজরুলের গান-কবিতা চর্চা করতেন। যা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে উৎসাহ জুগিয়েছিল।

বরিশাল বিভাগের ইতিহাস ও মুক্তবুলি বইয়ের সুত্র থেকে জানা গেছে, প্রকৃতির অবাধ সৌন্দর্যের এই লীলা ভূমিতে নিছক সৌন্দর্যের খোঁজে নয়, রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা সংক্রান্ত কারণে শের-ই বাংলার ভাগ্নে ইউসুফ আলীর আমন্ত্রণে বাংলার-বাঘ দ্রোহ-বিদ্রোহের মূর্ত প্রতীক বরিশালের বীর সন্তান শের-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হকের সাথে ১৯২০-এর অক্টোবরে কবি বরিশাল আসেন। ওই সময় একজন খ্রিস্টান মহিলার বাড়িতে ওঠেন তিনি। হতদরিদ্র এই পরিবারগুলোর ভাগ্য-বিড়ম্বিত জীবনের করুণ কাহিনীকে বাস্তব অভিজ্ঞতার রসে সিঞ্চিত করে কবি রচনা করেন ’মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসটি। এ উপন্যাসটিতে বরিশাল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। ক্ষুধার সর্বগ্রাসী প্রভাব কী ভাবে মানুষকে ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, এমন কি তার আজন্ম লালিত ধর্ম-বিশাস ও মন-মানসিকতাকে পর্যন্ত বিপর্যস্ত করে ফেলে তারই বাস্তবচিত্র তিনি এঁকেছেন ‘মতৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসটিতে। কবি মাত্র দুদিন বরিশালে অবস্থান করেছিলেন। এ দুদিনে বরিশালের যে বিশেষ দুটি বৈশিষ্ট্য তার মনকে নাড়া দিয়েছিল তার একটি হল খালে ঘেরা বরিশাল, যা ইতালীর ভেনিস নগরীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অন্যটি হল, বরিশাল খ্রীস্টান মিশনারীদের তৎপরতার ঘাটি।

কাজী নজরুল ইসলামের ‘মৃত্যুক্ষুধা’ অমর উপন্যাস সুত্রে জানা যায়, জাতীয় কবি নজরুল বরিশাল জেলাকে ‘বাংলার ভেনিস’ বলে আখ্যা দেন। কবি নজরুল বৃটিশ যুগে এ শহরের পাশে প্রবাহমান কির্তনখোলা নদীর তীরে ইটের সুরকির রাস্তা আর গাছ গাছালীর কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি ‘মৃত্যুক্ষুধা’ অমর উপন্যাসে।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের (প্রধান) সহকারী অধ্যাপক উম্মেস রায় বাসসকে বলেন, ‘একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে বাঙ্গালির আত্মপরিচয় সৃষ্টিতে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামসহ ২৪’র গণঅভ্যুত্থানেও কাজী নজরুল ইসলামের তেজোদীপ্ত কবিতা, গান ও সাহিত্য আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, নিপিড়ীত মানুষের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ধর্মমত নির্বিশেষে সকল বাঙ্গালির মিলেমিশে সমতার ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ সৃষ্টির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রুশ তেল কেনায় ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজীপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯টি দোকান পুড়ে ছাই 
চন্দ্রনাথ মন্দিরের সিঁড়ি উন্নয়নে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে : প্রেস সচিব
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
রাঙ্গামাটিতে ২৩টি প্রতিষ্ঠানে মাছের পোনা বিতরণ
ঢাবিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
হাটহাজারী থেকে মাদক মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে গড়ে উঠেছে শতাধিক চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা
টানা পতনের পর বুধবার সকালে এশীয় শেয়ারবাজারে ভিন্নধারা লক্ষ্য করা গেছে
আবু সাঈদ হত্যার বিচার শুরু, ট্রাইবুনালে অশ্রুসিক্ত বাবা
১০