ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দশ থেকে বার বছর বয়সী এক শিশু নগরীর খিলগাঁও রেলগেইট এলাকায় এক টেম্পুর পেছনে দাঁড়িয়ে প্যাসেঞ্জার ডাকছিল গুলিস্তান যাওয়ার জন্য। তার ডাকে আস্তে আস্তে একে একে প্যাসেঞ্জার উঠছিল টেম্পুতে। টেম্পুর সিট ভরে গেলে খিলগাঁও রেলগেইট ছেড়ে যায় গাড়িটি। শিশুটিও টেম্পুর পেছনে উঠে দাঁড়িয়ে ভাড়া নিতে থাকে প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে।
তের বছরের রাফিন (ছদ্মনাম) কাজ করে এক গ্রিল ওয়ার্কসপে। বড়দের মত সকাল আটটা হতে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাকেও। মূলত সহযোগীর কাজ করে সে। লোহার কাজ করতে হয় তাই অনেকসময় এদিক-ওদিক কেটেও যায়। তারপরও কাজ চালিয়ে যেতে হয়।
রাফিন জানায়, সে ছোট থাকতেই তার বাবা তাদের ফেলে অন্যত্র চলে যায়। তখন মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাদের দুই ভাই আর এক বোনকে বড় করতে থাকে। তবে পড়াশোনা করতে পারেনি তাদের ভাই-বোনের কেউই। গত কয়েক বছর ধরে মাও ঠিকমত কাজ করতে পারেনা অসুস্থততার জন্য। তাই পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সেই এই কাজে এসেছে। এখানে দুপুরের খাবার সহ প্রতিদিন কাজের জন্য ৫০০ টাকা করে পাওয়া যায়। কাজে আসলে টাকা দেয়। না আসলে পাওয়া যায় না। তাই চেষ্টা করি প্রতিদিন কাজে আসার।
শুধুমাত্র এই দুই শিশুই নয়। দেশে এরকম কয়েক লক্ষ শিশু বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে পারিবারিক দারিদ্র্যের কারনে। হাল্কা কাজসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও জড়িত এসব শিশু।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শিশুশ্রম বন্ধ করতে ১৯৯২ সালে কর্মসূচি গ্রহণ করে। এছাড়াও ২০০২ সালের ১২ জুন থেকে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়ে আসছে প্রতিবছর।
অন্যান্য বছরের ন্যায় সারা বিশ্বের মত এবারও দিবসটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেশে দিবসটি পালন করা হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি- এগিয়ে চলি দৃপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি’।
২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী চৌদ্দ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজে নিয়োজিত করা হলে তা শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য হবে।
আইএলও এবং ইউনিসেফ যৌথ উদ্যোগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমের ওপর। এতে বলা হয় বিশ্বের প্রায় ১৪ কোটি শিশু ২০২৪ সালে শিশুশ্রমে যুক্ত ছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২২ সালে শিশুশ্রমের হার ছিল ২.৭ শতাংশ যা আগের তুলনায় কমেছে।
শিশু দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রায় ৩৫ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ শিশু ঝঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
তবে তিনি এ পরিসংখ্যানের সাথে একমত নন। তিনি বলেন, শিশু শ্রমের সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি বলেন, এ পরিস্থিতির আশু পরিবর্তন দরকার। এজন্য শিশুদের কাজে নিয়োগদাতাদের শাস্তির বিধান আরো কঠোর করতে হবে।
তিনি শিশুশ্রম রোধে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণ বিশেষ করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আমরা একটি সুন্দর সমাজ উপহার দিতে পারব।