
এনামুল হক এনা
পটুয়াখালী, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার দশমিনা উপজেলার কৃষক সোহাগ মৃধা (৪০) মাচায় তরমুজ চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন। তৈরি করেছেন সাফল্যের নতুন দৃষ্টান্ত।
প্রচলিত জমির বদলে মাচায় তরমুজ চাষ করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছেন তিনি। তাঁর মাচায় এখন ঝুলছে প্রায় ২৩ লাখ টাকার তরমুজ।
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার উত্তর কাটাখালী খালের পাড় এবং স্থানীয় এক ব্যক্তির ঘেরের ধারে প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ করেছেন সোহাগ মৃধা। আর এ মাচা তৈরিতে তিনি বাঁশ, দড়ি ও জাল ব্যবহার করেছেন। এতে তরমুজ মাটির সংস্পর্শে না এসে গাছে ঝুলে থাকে, ফলে রোগবালাই কম হয় এবং ফলের গুণগত মান বজায় থাকে।
সরেজমিনে উপজেলার উত্তর কাটাখালী খালের পাড়ে গিয়ে দেখা যায় সোহাগ তার তরমুজ ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত। এসময় কথা হলে সোহাগ জানান, গত তিন বছর ধরে তিনি মাচায় তরমুজ চাষ করছেন। এবার তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন। মৌসুমি তরমুজের তুলনায় বারোমাসি তরমুজের চাহিদা বেশি থাকায় এই পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দশমিনা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে প্রায় দশ একর জমিতে কৃষকেরা মাচায় তরমুজ চাষ করছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এ পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে জমির ক্ষয় কম হয়, ফলনও বেশি হয়। তাই কৃষকেরা এখন দিন দিন মাচায় তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপকূলীয় উপজেলা দশমিনার স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বারোমাসি তরমুজের ভালো চাহিদা রয়েছে। এখন আর উত্তরাঞ্চল থেকে তরমুজ আনতে হয় না। উপজেলায় উৎপাদিত তরমুজেই এলাকার চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ভোক্তারা পাচ্ছেন টাটকা ফল।
সফল কৃষক সোহাগ মৃধার সাফল্য দেখে তাঁর আশপাশের অনেকে এখন মাচায় তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতিবেশী কৃষকরা নিয়মিত সোহাগের ক্ষেত পরিদর্শন করছেন, পরামর্শ নিচ্ছেন এবং আগামী মৌসুমে এ পদ্ধতিতে চাষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, সোহাগের সাফল্যে তারা বুঝেছেন পরিশ্রম ও পরিকল্পনা থাকলে অল্প জমিতেও বড় সাফল্য পাওয়া সম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বেকার যুবক বলেন, সোহাগ ভাইকে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আগে ভাবতাম তরমুজ চাষ শুধু বড় জমির কৃষকরাই করতে পারেন, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি মাচায় কম জায়গাতেও লাভজনকভাবে চাষ করা যায়। আগামী মৌসুমে আমিও তরমুজ চাষ শুরু করার পরিকল্পনা করছি।
এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাফর মো. জাফর আহমেদ বলেন, মাচায় তরমুজের ফলন এবার খুবই ভালো হয়েছে। আমরা নিয়মিত কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দিচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর তরমুজ চাষে কৃষকেরা ভালো লাভবান হবেন।
তিনি আরও বলেন, এই মাচা পদ্ধতিতে চাষের ফলে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা থাকে না, বরং গাছগুলো বাতাস ও আলো বেশি পায়। তাই রোগ কম হয় এবং ফলনও বেশি হয়।
ভবিষ্যতে মাচায় তরমুজ চাষ উপকূলের এই উপজেলার অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।