লক্ষ্মীপুর, ৩০ মে ২০২৫(বাসস): ২৪ ঘণ্টা পর লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে ফেরি চলাচল পুনরায় চালু হয়েছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়, বৃষ্টি ও জোয়ারের তোড়ে গতকাল এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। আজ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এখনো লঞ্চসহ অন্যান্য ছোট নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দুই পাড়ে আটকে পড়েছে কয়েকশ পণ্যবাহী ট্রাক। ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।
মজু চৌধুরীর হাট ফেরি ঘাটের সহকারী ম্যানেজার মো. আতিকুর রহমান জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হওয়ায় আজ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।
তবে অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
এদিকে মজু চৌধুরী হাট লঞ্চঘাটে আটকে পড়া কলেজ শিক্ষার্থী হাসিনা আক্তার ও নুর আলম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে ভোলা যাওয়ার জন্য মজু চৌধুরী হাট ঘাটে এসেছি। কিন্তু লঞ্চ না ছাড়ায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছি। গতকাল থেকে লঞ্চঘাটে আটকে পড়েছেন ভোলাগামী যাত্রী, আবদুর রহিম, মুনছুর আহমদ ও হাসনাত আলমসহ অনেকেই। কখন লঞ্চ ছাড়বে তাও নিশ্চিত নয় বলে জানান তারা।
এদিকে গত তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপকূলীয় এলাকার ২০টি গ্রাম। পাশাপাশি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে করে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। আজ সকালে লোকালয় থেকে পানি নামতে শুরু করলেও আবার জোয়ার আসলে পরিস্থিতি আগের মতোই হবে বলে জানান স্থানীয়রা। গত তিন ধরে এভাবে পানি ওঠানামা করছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে এখনও উত্তাল রয়েছে মেঘনা নদী। পৌরসভার বাঞ্চানগর, সমসেরাবাদ, মজুপুর, কলেজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি, সাহেবের হাট, পাটওয়ারীর হাট, চর ফলকন, চর মার্টিন, চর লরেঞ্চ ইউনিয়ন এবং রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার, বড়খেরী, চর গাজী, চর আবদুল্লাহ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০টি এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, নিচু ঘরের ভিটি তলিয়ে যায়।
আজ সকাল পর্যন্ত কখনও হালকা, মাঝারি, ভারী বা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি ও মেঘনার জোয়ারের পানি প্লাবিত হওয়ায় এই দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। দুই শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি এবং গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। সকাল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু দুপুর নাগাদ জোয়ার আসলে পানি আবার বেড়ে যাবে। এভাবে গত তিন দিন ধরে পানি ওঠানামা করছে। মেঘনা প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। এ কারণে অনেক এলাকা নতুন করে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
রামগতি আবহাওয়া সতর্কীকরণ অফিসের কর্মকর্তা মো. সৌরভ হোসেন বলেন, বৃষ্টি শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এরপর বৃষ্টি কমে আসবে। শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। এরপরও পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে। বন্যার আশঙ্কা এখনো নেই। তবে প্রশাসন যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।