কুমিল্লার গোমতী নদীর  চরে  বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ

বাসস
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৩৯
:জেলার গোমতী নদীর চরে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ :। ।ছবি: বাসস

//কামরুল হাসান//

কুমিল্লা,১১ অক্টোবর, ২০২৫(বাসস):জেলার গোমতী নদীর চরে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করা হয়, যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শসা, করলা, কুমড়া, বেগুন, মুলা, মরিচ এবং লালশাক। এই চরের উর্বর মাটি এবং বর্ষার পলিমাটি কৃষকদের বছরব্যাপী চাষাবাদে সহায়তা করে। সম্প্রতি, এখানকার কৃষকরা বিশেষ করে শীতকালীন সবজির আগাম চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৌসুম শুরুর আগেই গোমতী চরের মুলার বাম্পার ফলন দেখা গেছে। যা প্রতিনিদিন বিভিন্ন বাজারে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে এখানকার কৃষকরা।

গোমতী নদীর চরাঞ্চলে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। মাঠজুড়ে দেখা যাচ্ছে শীতকালীন আগাম সবজি চাষের প্রাণচাঞ্চল্য। কেউ ফসলে আগাছা বাছাই করছেন, কেউ পোকামাকড় দমনে ওষুধ ছিটাচ্ছেন, আবার কেউ সেচের পানিতে ফসল সজিব রাখছেন। নদীর পাড়জুড়ে সবুজ ফসলের সমারোহে প্রাণ ফিরে পেয়েছে চরের জনপদ।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে জেলার সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের জালুয়াপাড়া গিয়ে দেখা গেছে, চরের কৃষকরা বিভিন্ন সবজি খেতের পরিচর্চা করছেন। কেউ কেউ জমি প্রস্তুত করছেন চারা রোপনের জন্য। তবে গোমতীর চরগুলোতে ইতোমধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, টমেটো, শিম, লাউ, শসা, মিষ্টিকুমড়া ও ধনে পাতা, লালশাকসহ বিভিন্ন আগাম সবজির চাষ হয়েছে।

চরাঞ্চলের উর্বর বালুমিশ্রিত দোআঁশ মাটিতে এসব ফসল ভালো ফলন দেয়। স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুমে এসব সবজি বিক্রি করে তারা ভালো লাভ পান, তাই আগাম সবজি চাষে তারা আগ্রহী। মুলা ইতিমধ্যে বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে অন্যান্য সবজি বাজারজাত করতে পারবেন বলে জানায় কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, গোমতীর চরগুলো পলিমাটি সমৃদ্ধ হওয়ায় এখানকার জমি বেশ উর্বর, যা সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উর্বর জমিতে বছরজুড়ে কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করেন, যা তাদের জীবিকার প্রধান উৎস।  অনেক কৃষক আগাম সবজি চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন এবং স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করছেন।

তবে গোমতির চরে চাষাবাদে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় কৃষকদের। বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে গোমতীর পানি বৃদ্ধি পায়, এতে চরের কৃষিজমি প্লাবিত হয়ে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসল ঘরে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে বন্যা বা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।

পাঁচথুবি ইউনিয়নের মধ্য জালুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মো. রুবেল মিয়া বলেন, আমি প্রায় ২০০ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করি। গতবারের বন্যায় কিছু ক্ষতি হলেও বন্যার পরে ফসল পুষিয়ে নেওয়া গেছে। কিন্তু এবার লাগাতার বৃষ্টির কারণে ভালোভাবে বীজ রোপন করা যায়নি। জমিতে পানি লেগে ছিল। ভাবছিলাম শীতে আগাম সবজি বাজারে তুলব ভালো দাম পাব, কিন্তু এবার আর তা হবে না।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আগাম ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম ও মুলা তুলব। দাম ভালো থাকলে তারা আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

একই এলাকার কৃষক হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমার দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও মুলা লাগিয়েছি। 

এখন নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার আর পোকামাকড় দমন করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার ফসল ভালোই হবে আশা করি। তবে বৃষ্টির কারণে শীতের মাঝামাঝি সময়ে ফসল বাজারে নেওয়া যাবে।’

নীলফামারী থেকে আসা কৃষক আবদুর রশিদ। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে কুমিল্লার গোমতীর চরে এসে বর্গা জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির বীজ তলা চারার চাষ করেন। তিনি বলেন, ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে সময়মতো বীজতলা তৈরি করলেও বৃষ্টিতে পানি জমে অনেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে বীজ বপন করতে হয়েছে, এতে খরচ ও শ্রম দুই-ই বেড়েছে। কেউ কেউ প্রাথমিক পর্যায়ে লোকসানের মুখেও পড়েছেন।

জেলার দেবিদ্বার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, কুমিল্লার গোমতীর চরাঞ্চলের কৃষকরা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। তারা ফসলের রোগবালাই দমন, সার ও সেচ ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত কৃষি অফিসের পরামর্শ নিচ্ছেন। গোমতীর চরে কয়েক হাজার কৃষক প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করছে। কিছু জায়গায় সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে, তবে এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন। 

কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সার, কীটনাশক ও কারিগরি পরামর্শসহ সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আগাম সবজি চাষে লাভজনক হওয়ার কারণে কৃষকরা এখন ঐতিহ্যবাহী ধান চাষ ছেড়ে ধীরে ধীরে সবজির দিকে ঝুঁকছেন। এতে পরিবারের আয় বাড়ছে, কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা সহকারী উপপরিচালক শেখ আজিজুর রহমান বলেন, মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো থাকায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা কৃষকদের পরামর্শসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছে। শীতের আগে মুলা ছাড়াও আরও অনেক শাকসবজি পর্যায়ক্রমে চাষ করবেন চরের কৃষকেরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নওগাঁয় বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অজ্ঞতা : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
কিশোরগঞ্জে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
মুক্তিযুদ্ধে নৌ কমান্ডোদের দুঃসাহসিক অভিযান ছিল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ: উপদেষ্টা আজম
ঝিনাইদহে বিএনপির উদ্যোগে পূজা পুনর্মিলনী
খুলনায় পলিথিন বর্জনের শপথ গ্রহণ
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্র কাল শুরু করছে দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান
কিমিচের জোড়া গোলে জার্মানীর জয়, আজারবাইজানকে উড়িয়ে দিয়েছে ফ্রান্স
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন
সুদানের এল-ফাশারে আরএসএফ ড্রোন হামলায় ৩০ জন নিহত
১০