বাসস
  ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:০৩
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:২২

আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা মাহমুদুর রহমানের

সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্রের মামলার সাজার বিরুদ্ধে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। ছবি বাসস

ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মামলার সাজার বিরুদ্ধে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের আনা আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন ঢাকার একটি আদালত।

আজ ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তারিক এজাজের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

মাহমুদুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী আদালতে এ মামলায় খালাসের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। কোন সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। আইন, রেফারেন্স ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণ খালাসের পক্ষে তুলে ধরেন আইনজীবীরা।

শুনানিকালে আদালতে হাজির ছিলেন মাহমুদুর রহমান। শুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের উত্থানের পক্ষে বিচার বিভাগের ভুমিকা রয়েছে। এটা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। নতুন বিচারপতি জনগণের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রত্যাশা পূরণে সফল হয়েছেন।  মানুষ এখন ন্যায়বিচার পাচ্ছেন।

সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান বলেন, আশা করি, রায়ে আমি ন্যায় বিচার পাবো। কারণ ফ্যাসিবাদের পতন ও বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়েছে। এ মামলা যখন করা হয় তখন জেলে বন্দি ছিলাম। মামলার সঙ্গে কোনরকম সংশ্লিষ্টতা নেই আমার। এই মামলায় ঘটনা দেখানো হয়েছে আমেরিকার। আমি ২০০৫ সালের পর আমেরিকা যাইনি। অথচ মামলার সময় দেখানো হচ্ছে ২০১২ সালে। ওই সময় সময় আমি আমার পত্রিকা অফিসে বন্দি ছিলাম। পত্রিকা অফিস পুলিশ, র‌্যাব ঘিরে রেখেছিল। এটাতে প্রমাণিত হলো একটা রাষ্ট্র কতটা নির্মম হতে পারে মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে।

মাহমুদুর রহমান আরো বলেন, শেখ হাসিনার বিদায় হয়েছে। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আমার দেশের যে লড়াই, সম্পাদক হিসেবে আমার যে লড়াই সেটা অব্যাহত থাকবে। এই মামলাটি হয়েছিল শেখ হাসিনার পুত্রকে নিয়ে, এমন শতাধিক মামলা আমার বিরুদ্ধে আছে। শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে নিয়ে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এরকম একটি মামলাতেই আমার ওপর হামলা করা হয়েছিল কুস্টিয়ায়৷ আমি আল্লাহর রহমতে জীবিত আসতে পেরেছি। তবে ধরে নিচ্ছি এই যে লড়াই, যতদিন জীবিত আছি এই লড়াই চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

আমার দেশ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যেন কোন ফ্যাসিবাদ সরকারকে উঠতে দেয়া না হয়। জনগণকে প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করা উচিত। আমরা যদি প্রথম থেকে প্রতিবাদ করলাম তাহলে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ সরকার দ্বারা এতো জুলুম, ঘুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হতো  না। এভাবে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও দিল্লির কাছে বিসর্জন দেয়া হতো না। জণগণের কাছে আমার আহ্বান আর কোন ফ্যাসিবাদী সরকারকে দেশে জায়গায় দিবেন না। সকল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই যেন অব্যাহত থাকে।

আইনজীবীরা জানান, ভিত্তিহীন অভিযোগে সাজা দেওয়া হয়। প্রশ্নবিদ্ধ বিচারিক প্রক্রিয়ায় তড়িৎ গতিতে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছিল। রায় ঘোষণা করা বিচারকের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ ৫ জনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন-জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভুইয়া।

আসামিদের দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও একমাসের কারাভোগ করতে হবে। এছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।

মামলার অভিযোগ বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

গত সেপ্টেম্বরে তুরস্ক থেকে দেশে ফিরেছেন মাহমুদুর রহমান। তাকে বরণ করতে বিমানবন্দরের বাইরে সমবেত হয় হাজারো ছাত্র-জনতা।

একসময় বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিএনপি সরকারে দায়িত্ব পালন করেন। এসব দায়িত্ব পালন শেষে তিনি সাংবাদিকতায় নিজেকে যুক্ত করেন। দেশের জনপ্রিয় দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিগত সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের বিরুদ্ধে আমার দেশ পত্রিকায় লেখনির কারণে মাহমুদুর রহমানকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্মম নির্যাতন করা হয়। তিনি বিগত সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ও  আপসহীন ছিলেন।