কক্সবাজার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্যকে মূল্যবান সম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করলো প্লস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা।
জেলা সদরের অদূরে রামু উজেলার মিঠাছড়িতে স্থাপিত এই কারখানার উদ্বোধনকালে আমিন্ত্রত অতিথিরা এই উদ্যোগকে কক্সবাজারে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ আজ বৃস্পতিবার এই প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানাটি উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বুশরা নিশাত, ইউনাইটেড নেশনস অফিস অর প্রজেক্ট সার্ভিসেজ(ইউএনওপিএস) বাংলাদেশের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর- মেডিক্যাল ওয়েস্ট মেইসন সালাম, কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়াজ প্রামাণিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জমির উদ্দিন, ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী ও মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (এইচসিএমপি) সহযোগী পরিচালক ও অফিস ইনচার্জ রেজাউল করিম।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্য হওয়ায় এবং বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপে কক্সবাজারে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, কক্সবাজার এই শহরে দিনে প্রায় সাড়ে ৩৪ টন প্লাস্টিক বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা হয়। এর মধ্যে একবার ব্যবহারের পরই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বা পলিথিন, পণ্যের মোড়ক, পলিপ্রোপিলিন এবং পাতলা পলিথিন ইত্যাদি বিশেষভাবে উলে¬খযোগ্য। এগুলো পুনঃ প্রক্রিয়া করা খুবই কঠিন এবং এর কোন বাজার মূল্য নেই। কক্সবাজারের এ রিসাইক্লিং কারখানায় এমন বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন সোফা, বেঞ্চ, কিংবা মজবুত খুঁটি।
কারখানাটি উদ্বোধন করে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, এই উদ্যোগ টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি অনন্য উদাহরণ। এটি একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, অন্যদিকে নারী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। অদূর ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
মেইসন সালাম বলেন, এটি এমন একটি দৃষ্টান্ত, যেখানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে এবং নারীদের ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইউএনওপিএস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ব্র্যাকের পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (প্লিজ) প্রকল্পের আওতায় দীর্ঘদিন ধরেই ব্র্যাক কক্সবাজারকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজার পৌরসভার সহযোগিতায় এই রিসিাইক্লিং কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহকারী, এসব বর্জ্য বিক্রির সঙ্গে যুক্ত মানুষ এবং কারখানার কর্মী থেকে শুরু করে এখানে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়কারী- এই সকলকে মিলে বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়াজ প্রামাণিক বলেন, এই রিসাইক্লিং কারখানার পাশাপাশি এখানে কঠিন বর্জ্য ও পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনাও রয়েছে।
প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানাটি ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (প্লিজ)’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও ইউএনওপিএস-এর সহায়তায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সাউথ এশিয়া কোঅপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (এসএসিইপি)।
কক্সবাজার পৌরসভার সহযোগিতায় এই জেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে ব্র্যাক। প্লিজ প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্লাস্টিক দূষণের গুরুতর সমস্যা মোকাবিলায় আঞ্চলিক উদ্যোগ হিসেবে কাজ করছে।
ব্র্যাক জানিয়েছে, ৫ হাজার ২৮০ বর্গফুট আয়তনের এই কারখানায় প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কেজি পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব। পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে এখানে রয়েছে দৈনিক ২ হাজার লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা (ইটিপি), সোলার পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম, ফায়ার সেফটি সিস্টেম, একটি ইলেকট্রিক সাবস্টেশন এবং চব্বিশ ঘণ্টার সিসিটিভি নজরদারির ব্যবস্থা।