যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা মানলে হয় ‘মর্যাদা’ নয়তো মিত্র হারাবে ইউক্রেন : জেলেনস্কি

বাসস
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৭

ঢাকা, ২২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া যুদ্ধ-সমাপ্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই পরিকল্পনায় রাশিয়ার কট্টর দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকায় রুশ নেতা ভøাদিমির পুতিন এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

কিয়েভ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য এক সপ্তাহেরও কম সময় বেঁধে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি অঙ্গীকার করেছেন, ইউক্রেনের স্বার্থের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হয় এমন কোনো সমঝোতা তিনি করবেন না। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রকে মিত্র হিসেবে হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।

পুতিন বলেছেন, এই পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠার ‘ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।’

তবে ইউক্রেন আলোচনা থেকে সরে এলে রাশিয়া আরও ভূমি দখল করবে বলে হুমকিও দিয়েছেন পুতিন।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন তার ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মুখোমুখি। এ সময় তিনি ট্রাম্পের ২৮-দফা পরিকল্পনার বিকল্প প্রস্তাব করবেন বলেও জানান।

এই প্রস্তাবনায় ইউক্রেনকে জমি ছেড়ে দিতে, সেনাবাহিনী কমাতে এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার অঙ্গিকার করতে হবে। এতে কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা হতবাক হয়েছেন।

অন্যদিকে, এএফপি’র দেখা খসড়া অনুযায়ী, রাশিয়া নতুন ভূখণ্ড পাবে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ফিরবে এবং জি-৮ এ পুনঃঅংশগ্রহণ করবে।

পুতিন তার নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, ‘ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা এখনও বিভ্রমের মধ্যে আছে এবং যুদ্ধে রাশিয়াকে কৌশলগতভাবে হারানোর স্বপ্ন দেখছে।’

পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কুপিয়ানস্ক শহর দখলের মতো ঘটনা আবারও ঘটবে যদি কিয়েভ আলোচনায় না বসে। তবে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কুপিয়ানস্ক এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

জেলেনস্কি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার সময়ও তারা নিজ দেশের সঙ্গে বেইমানি করেননি।

তিনি বলেন, ‘আমরা তখনও ইউক্রেনের সঙ্গে বেইমানি করিনি, এখনো করব না। আমি যুক্তি উপস্থাপন করব, বোঝাব এবং বিকল্প প্রস্তাব করব।’

ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারই চুক্তির সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, সময় কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে। 

এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তাকে (জেলেনস্কি) এটা মেনে নিতেই হবে। যদি না করে, তবে যুদ্ধ চালিয়ে যাক। শেষ পর্যন্ত তাকে কিছু একটা মেনে নিতেই হবে।’

জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে বৈঠকের পর জানান, ইউক্রেন এখনো ট্রাম্পের যুদ্ধ শেষ করার ইচ্ছাকে ‘সম্মান’ করে।

এই প্রক্রিয়ায় ইউরোপকে বাদ দেওয়ায়, তারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে জরুরি ভিত্তিতে জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটিশ নেতাদের সঙ্গেও জরুরি বৈঠক করেন।

তিনি জার্মানি, ফ্রান্স ও বৃটেনের নেতাদের সঙ্গেও জরুরি ফোনালাপ করেন। কারণ, ইউরোপকে এ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ায় তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎপর হয়েছে।

জেলেনস্কি শিগগিরই ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করার পরিকল্পনা করছেন বলে তার কার্যালয় জানিয়েছে।

মার্কিন পরিকল্পনা অনুযায়ী, মস্কোর নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোকে ‘কার্যত’ রুশ অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং কিয়েভকে দোনেৎস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।

এছাড়াও, কিয়েভকে তার সেনাবাহিনীর সংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টি বাদ দিতে হবে এবং তার ভূখণ্ডে ন্যাটোর কোনো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।

বিনিময়ে, ইউক্রেনকে দেওয়া হবে অনির্দিষ্ট ‘নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ এবং পুনর্গঠনের জন্য তহবিল, যা বিদেশে জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ থেকে আসবে।

জেলেনস্কি তার ভাষণে বলেন, ‘এখন আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়। চাপ সবচেয়ে বেশি। ইউক্রেনকে একটি অত্যন্ত কঠিন পছন্দের মুখোমুখি হতে হতে পারে; হয় মর্যাদা হারাতে হবে, নয়তো গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হারানোর ঝুঁকি নিতে হবে।’

বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতারা জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেনের প্রতি তাদের ‘অটল ও পূর্ণ সমর্থন’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ইউরোপকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগে অনেক সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তাদের আশঙ্কা, মস্কোর শর্ত অনুযায়ী যুদ্ধ শেষ হতে পারে।

পুতিন জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কায় ১৫ আগস্ট বৈঠকের আগেই পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

তিনি বলেন, রাশিয়া সংঘাত সমাধানে ‘নমনীয়তা’ দেখাতে প্রস্তুত। তবে কীভাবে, তা স্পষ্ট করেননি।

পুতিন আরও বলেন, রাশিয়া বিস্তারিত আলোচনা করতে প্রস্তুত। না হলে যুদ্ধ চলতে থাকবে।

ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোর সঙ্গে মিলে এই পরিকল্পনা করেছে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ২৭ নভেম্বর অর্থাৎ থ্যাঙ্কসগিভিং দিবস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে জেলেনস্কিকে।

এদিকে, কিয়েভে সাধারণ মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ মনে করছে আলোচনায় বসে ভালো অবস্থান আদায় করা উচিত। আবার কেউ এটিকে আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখছে।

৪১ বছর বয়সী দর্জি ইয়ানিনা বলেন, এই প্রস্তাব থেকে কিছুই হবে না। যুদ্ধ চলবেই। ‘আমরা বা রাশিয়া কেউই ছাড় দেবে না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
খুলনায় অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
আলেমদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
৪৯১ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা মানলে হয় ‘মর্যাদা’ নয়তো মিত্র হারাবে ইউক্রেন : জেলেনস্কি
দিনাজপুরে ৩ দিনব্যাপী পিঠা উৎসব শুরু
মোংলা নৌঘাঁটিতে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন
ভূমিকম্পে ঢাবির ক্ষতিগ্রস্ত হল ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
বরগুনায় ৪ ভুয়া চিকিৎসক আটক
যশোরে জাল নোটসহ যুবক গ্রেপ্তার
কুড়িগ্রামে ভটভটি-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে যুবক নিহত
১০