পদ্মা নদীর বাস্তুতন্ত্রের প্রতিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে দূষণ

বাসস
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৩১
পদ্মা নদী। ফাইল ছবি

॥ মো. আয়নাল হক ॥

রাজশাহী, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : পদ্মা নদীতে নির্বিচারে কঠিন ও তরল উভয় ধরণের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এটা এ নদীর পানি দূষণ ও নদী ভাঙনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার বাসসের সঙ্গে আলাপকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)’র ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, পদ্মা নদী ও শহর রক্ষা বাঁধের কাছে কঠিন ও তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর পদ্মা নদী অবৈধ দখল ও দূষণের শিকার। ঘরের ভাঙা টাইলস ও কংক্রিটের ফেলে দেওয়া কঠিন বর্জ্য তীরে ফেলা হচ্ছে।

মিজানুর রহমান বলেন, নদীতে অবৈধ দখল, নির্বিচারে মাছ ধরা, অবৈধভাবে মাছ ধরার সরঞ্জাম ব্যবহার, নদীর পানিতে কৃষি রাসায়নিক দূষণ ও প্লাস্টিক দূষণের কারণে মাছের বৈচিত্র্য হ্রাস পেয়েছে।

অধ্যাপক রহমান বলেন, ‘কয়েক বছর আগে, আমি পদ্মা নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেট দিয়ে প্রবাহিত তরল বর্জ্য পরীক্ষা করে দেখতে পাই যে, সেখানে দূষণের মাত্রা ব্যাপক ও এটি ক্রমবর্ধমান।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ নদীতে মাছের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তা ছাড়া কৃষিকাজে নদীর পানির ব্যবহারও স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে যে, পদ্মা নদীর পানিতে ধাতু রয়েছে।’

অধ্যাপক রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র থাকা উচিত। এটা রাজশাহীতে দেখা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, শহরে ২০,০০০-২৫,০০০ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ইজিবাইক রয়েছে। এই ইজিবাইকের গ্যারেজগুলো তাদের ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড পদ্মা নদীতে নিষ্কাশনকারী ড্রেনে ফেলে, যা সমস্ত জলজ প্রাণীর জন্য বিষাক্ত।’ 

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, শহরের তরল বর্জ্য পাঁচটি স্লুইস গেট দিয়ে পদ্মা নদীতে প্রবাহিত হয়। তবে বর্ষাকালে যখন পানির স্তর বৃদ্ধি পায়, তখন গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে পানি শহরে প্রবেশ করতে পারে না।

আশেপাশের এলাকার, বিশেষ করে বুলানপুর, কেশবপুর, শ্রীরামপুর, কুমারপাড়া, শেখেরচক, পঞ্চবটি, তালাইমারী ও শ্যামপুর এলাকার গৃহস্থালির বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে।

এ ছাড়াও পাঠানপাড়া, দরগারাপাড়া, বড়কুঠি ও শ্রীরামপুরসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ বানানো হয়েছে। সকল ধরণের প্লাস্টিক, পলিথিন ও রেস্তোরাঁর বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়।

এ ছাড়াও শহরের পাঁচটি স্লুইস গেট দিয়েও তরল বর্জ্য পদ্মায় প্রবাহিত হয়।

কুমারপাড়ার কাছে নদীতে আবর্জনা ফেলছিলেন ৫৪ বছর বয়সী রুনা আক্তার। 

এ ব্যাপারে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন, পাড়ার সবাই নদীতে আবর্জনা ফেলে।

কেশবপুর-পুলিশ লাইনের সামনের টি-বাঁধেও যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা হচ্ছিল। বাঁধের ওপারে প্লাস্টিকের কাপ, বোতল ও পলিথিন পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

গোলাম রসুল ১৫ বছর ধরে এই বাঁধে একটি পান-বিড়ির দোকান চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে পদ্মা নদীতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।’

শহরের ভেতর থেকে স্লুইস গেট দিয়ে যে তরল বর্জ্য নদীতে পড়ে, তাতে দরগাপাড়া এলাকায় আরও ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে। এর ফলস্বরূপ, পদ্মার পানি দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থা নদীতে জলজ জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।

রাবি ভূতত্ত্ব ও খনি বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান
বলেন, তরল বর্জ্য ইতিমধ্যেই শহর সংলগ্ন আরেকটি নদী বারানাইয়ের জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কঠিন বা তরল-কোনো বর্জ্যই নদীতে ফেলা উচিত নয়। এটি আইনত নিষিদ্ধ। কারণ, তরল বর্জ্য পানির সাথে মিশে প্রাণজ অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে, যা জলজ প্রাণীদের হত্যা করে।

ইতিমধ্যেই দেখা গেছে যে শহরের তরল বর্জ্যও রাজশাহীর পবা উপজেলার বরনই নদীতে পড়েছে এবং সেখানকার জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেছে।

সেভ দ্য নেচার অ্যান্ড লাইভের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন: ‘প্লাস্টিক বর্জ্য ও পলিথিন ব্যাগ পদ্মা নদীর জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকারক। পলিথিনের ব্যবহার কমানোর প্রচারণা থেকে আমরা কোনো লাভ দেখতে পাচ্ছি না।’

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যদি নদী দূষণ ও দখল এখনই বন্ধ না করা হয়, তাহলে বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

নদী দূষণের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে, বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ডেঙ্গু মোকাবিলায় বরগুনায় জেডআরএফের চিকিৎসা সহায়তা
জুবাইদা রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন
আর্কটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে পিটল্যান্ড, কার্বন শোষণে সাময়িক আশা
ইরান-ইসরাইল সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধান চেষ্টায় বৈঠকে বসছেন ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা
লন্ডনে ২ হাজার বছর আগের রোমান প্রাচীরচিত্র উদ্ধার : ‘জীবন্ত হলো’ হারানো ইতিহাস
বরফাবৃত পৃথিবীতে ছোট ছোট জলাশয়েই বেঁচে ছিল প্রাণ: নতুন গবেষণা
সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান সুন্দর রাখতে দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি: উপদেষ্টা আসিফ
১১ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে আফ্রিকায় প্রথম সফল টেলিসার্জারি করলেন মার্কিন চিকিৎসক
ইরান-ইসরাইল সংঘাতের সর্বশেষ পরিস্থিতি
কুয়াকাটার খাস জমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে : ভূমি উপদেষ্টা
১০