ঢাকা, ১৭ মার্চ ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আজকে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অসন্তোষ ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেটা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের রেশ। এই দুঃশাসনের বিকৃত ফসলের মূল উৎপাটন করে সমাজকে পবিত্র সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর শেখ হাসিনার শাসন আমল ছিল অপরাধীদের অভয়ারণ্য। সমাজে ধর্ষক, টাকা লুটেরা, স্মাগলার, মাদক ব্যবসায়ী, মাফিয়া চক্র ও ক্যাসিনো মালিকদের রমরমা আধিপত্য ছিল। এর রেশ টানতে গিয়েই আজকে সমাজে একের পর এক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এই অপরাধ আর দুঃশাসনের বিকৃত ফসলের মূল উৎপাটন করে আমাদের সমাজকে পবিত্র সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল একটি অগ্রগণ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে আমি আশা করছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে আজ সোমবার দুপুরে নয়া পল্টনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নয়া পল্টন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের যে আন্দোলন তা ছিল গত ১৫ বছরের গণতন্ত্রকামী মানুষ, বিএনপির নেতৃত্বে যে আন্দোলন করেছেন তার চূড়ান্ত বহি:প্রকাশ।’
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরের মধ্যে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সুমন হারিয়ে গেছে। এদেরকে অদৃশ্য করা হয়েছে। কারণ, এরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দেয়ার দাবিতে সোচ্চার ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলন সংগ্রামের চূড়ান্ত বহি;প্রকাশ হিসেবে শিশু-তরুণ-কিশোররা জুলাই-আগস্টে জীবন দিয়ে দেশটাকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছে। সব রক্তস্রোত একই সমুদ্রের মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়েছে এবং মোহনার এই মিলিত স্রোতেই শেখ হাসিনা আজকে পালিয়ে গেছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনুস আপনি প্রধান উপদেষ্টা, মানুষের বিশ্বাস আপনার ওপর। আমাদের প্রত্যাশা আপনার হাত দিয়েই দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হবে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি বেছে নেবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আপনি দেশের জনগণকে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ করে দেবেন।’
শিশু আছিয়ার ধর্ষণসহ সকল অপরাধের বিচার দাবি করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, সরকারকে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে, মানুষের অধিকার আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের অপরাধের বিচার হতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, নুসরাত পারুল থেকে শুরু করে গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে একের পর এক নারীরা ধর্ষিতা হয়েছে, যারা ধর্ষণকারী তাদের কোনো বিচার হয়নি, এমনকি হত্যাকারীদেরও কোনো বিচার হয়নি। কারণ যারা গুম-খুন-হত্যা করেছিল তারাই কিন্তু সেই সময়ে রক্ষক হিসেবে অন্যদেরকে দিয়ে কাজগুলো করাতো। আজকে আমরা এমন একজনের কাছে দেশের দায়িত্ব তুলে দিয়েছি যিনি শান্তির প্রতীক। আমরা জানি ড. ইউনুসের কাছে দেশ নিরাপদে থাকবে, আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদে থাকবে, সবাই মুক্ত, স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে।
গত ৪ বছরে ৭ হাজার শিশুসহ ৪৩ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে- সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘এগুলোর কোনো বিচার হয় নাই। আমরা দেখেছি মাগুরার শিশু আছিয়া হত্যার পরে এক সপ্তাহের মধ্যে যেন মনে হয় মহোৎসব লেগেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ১১ জন মহিলা-শিশু ধর্ষিত হয়েছে।’
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, জেবা খানসহ মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।