ঢাকা, ১২ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিষয়ক ৪র্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা শহরের তাপমাত্রা কমাতে ছাদ বাগান তৈরি, খালি জায়গায় সবুজায়নসহ নগর কৃষিতে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ সোমবার সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের তৃতীয় দিনের ‘পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতিতে নগর-পেরি নগর কৃষি’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এ আহ্বান জানান।
সেশনটির চেয়ারম্যান ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘যত বেশি ছাদবাগান, খোলা স্থানে সবুজায়ন হবে ততো আমাদের শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই আমাদের সবারই আরবান এগ্রিকালচারে এগিয়ে আসা দরকার। আমাদের শহরের ভবন বাড়ছে, রাস্তা বাড়ছে, নির্মাণ এলাকা বাড়ছে তাই আমাদের অবশ্যই সবুজায়ন নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ আমাদের তাপমাত্রা মরুভূমির মতো হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, শহরের সকল বাসিন্দার মাথায় কৃষি বিষয়টি কাজ করে। তারা কোথাও একটু সুযোগ পেলেই গাছ লাগানোর চেষ্টা করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধানমন্ডির ৩৯ শতাংশ, লালমাটিয়ায় ৩৬ শতাংশ ভবনে রুফটপ গার্ডেন রয়েছে। উত্তরাতে আরও বেশি। তবে কিছু কিছু ভবনের মালিক ছাদবাগানের অনুমতি দিতে চান না, তাদের দাবি ছাদবাগানে ছাদ নষ্ট হয়ে যায়। তবে ছাদ বাগানের জন্য ছাদ প্রস্তুত করা কঠিন কোনো বিষয় না। কারণ ছাদবাগানে ভবনের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
মূল প্রবন্ধে ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন প্রোগ্রামের প্রধান আবু সাদাত মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকটি নগর কৃষি এলাকা ভ্রমণ করেছি এবং সেখানে দেখেছি ঐ সবুজ এলাকা কতটা গোছানো এবং তা শহরের তাপমাত্রাকে কমায়। স্বপ্নধারা হাউজিং তাদের প্লটগুলোতে সবজি চাষ করে এবং সেখানে প্রায় ১২০০ মানুষ কাজ করে। যা তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু ২০০ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। একদিকে সবুজায়ন হচ্ছে সঙ্গে মানুষের আয়ের উৎসের সৃষ্টি হলো।’
ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ছাদবাগান নিয়ে একটি পরিকল্পনা করা দরকার। অনেকেই ছাদ নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে ছাদবাগান করতে চান না। কিন্তু ছাদবাগান যে বরং তার ভবনকে শীতল রাখতে সহায়তা করে সেটা বেশি বেশি প্রচার করতে হবে।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বন-২) ড. মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, সরকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং নগর বনাঞ্চল রক্ষা ও বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
সম্মেলনে ‘ভবিষ্যৎ-প্রমাণ শহরের জন্য জল ব্যবস্থাপনাকে একীভূত করার জন্য ল্যান্ডস্কেপ পদ্ধতি’ শিরোনামে আর একটি সেশনে দেশের জলাধার ও সবুজ রক্ষায় বাংলাদেশ কীভাবে এগোতে পারে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত প্রদান করেন।
এই সেশনে উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী খালিদ আশরাফ, নেদারল্যান্ডসের আইএইচই, ইউনিভার্সিটি অব ডেলফা’র উপকূলীয় এবং নগর ঝুঁকি এবং স্থিতিস্থাপকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ক্রিস জেভেনবার্গেন ও ভূমিজ’র প্রধান নির্বাহী ফারহানা রশিদ।
শনিবার থেকে শুরু হওয়া বিআইপি’র নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিষয়ক ৪র্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আজ সন্ধ্যায় শেষ হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নগর, অঞ্চল এবং গ্রামীণ এলাকার বৈষম্যহীন উন্নয়নে স্থানিক পরিকল্পনা।’