ঢাকা, ৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বাংলাদেশে একটি স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে এই কমিশনে নিরপেক্ষ পর্যালোচনা, জবাবদিহিতা এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক চর্চার কাঙ্ক্ষিত অবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়নের পূর্বে ও পরে উভয় ক্ষেত্রেই সহায়তা প্রদান করতে পারে।
সিপিডির মতে, ত্রয়োদশ সংসদ ‘গণতন্ত্র, আইন প্রণয়ন, নির্বাহী ও আইন বিষয়ক সংসদীয় কমিশন’ গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইন বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে?’ শীর্ষক সংলাপে সিপিডি তাদের ‘বাংলাদেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ’ বিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশকালে এই পরামর্শ দেওয়া হয়।
সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়দ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল।
সংলাপের সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ এম শাহান এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আবদুল আলিম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিজাম আহমেদ।
শামা ওবায়দ বলেন, বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং দেশের গণতন্ত্রসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি স্বাধীন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সে জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
বাংলাদেশের সংসদে উচ্চকক্ষ প্রবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিএনপি দেশের জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ চায়, তবে উচ্চ কক্ষে প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে আরও আলোচনা দরকার।
আখতার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি দেশের সাংবিধানিক সংকট নিরসন এবং কর্তৃত্ববাদ প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, ‘এই উচ্চকক্ষের কার্যকারিতা পুরোপুরি নির্ভর করবে এর সদস্যরা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়ার ওপর।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি পিআর ব্যবস্থা কার্যকর না হয়, তবে উচ্চকক্ষ নিয়ে আলোচনা অর্থহীন হয়ে যাবে।
এনসিপি নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান সংকট হলো কোনো দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে এককভাবে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। যা প্রায়শই শুধুমাত্র একটি দলের মতাদর্শ, কর্মসূচি ও পরিকল্পনাকে প্রতিফলিত করে, জনগণের ইচ্ছাকে নয়।
মাইকেল মিলার বলেন, আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সফলতার চূড়ান্ত মাপকাঠি কেবল নির্বাচন নয়, বরং জবাবদিহিতা ও কাঠামোগত সংস্কারের ওপর নির্ভর করে।
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় ইইউ বাংলাদেশের পাশে আছে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে লক্ষ্য করে তৈরি বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবকে ঐকমত্য কমিশনকে তার চূড়ান্ত ঐকমত্য তালিকায় গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, ত্রয়োদশ নতুন সংসদের উচিত প্রয়োজনীয় আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও পরিচালনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করা।
তিনি আরও বলেন, সংসদ বর্জনের চক্র ভাঙতে ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই অনিয়মিত ও প্রহসনের নির্বাচনের অবসান ঘটাতে হবে। যা সংসদের বৈধতাকে ক্ষুণ্ন করে এবং বিরোধী দলকে বাইরে ঠেলে দেয়।
স্বাধীন কমিশন প্রসঙ্গে মোয়াজ্জেম বলেন , ‘এই কমিশন সংবিধান, আইন ও প্রশাসনিক নীতিমালা শক্তিশালী করা, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং স্থানীয় সরকারকে গণতান্ত্রিকভাবে বিকশিত করার কাজ করবে।’