তার ছাড়াই একাধিক ডিভাইসে চার্জ দেবে ‘স্মার্ট পাওয়ার বক্স’

বাসস
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:২২
নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডে রিসার্চ ফেলো বাংলাদেশি গবেষক ড. সাইদুল আলম চৌধুরী। ছবি : বাসস

তানিউল করীম জিম

ময়মনসিংহ, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): তার ছাড়া একই সাথে একাধিক ডিভাইসে চার্জ দেওয়ার উপযোগী ‘স্মার্ট পাওয়ার বক্স’ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশি গবেষক। এই পাওয়ার বক্সের মাধ্যমে একসাথে একাধিক ডিভাইসে চার্জ দেওয়া যাবে। যা অনেকটা ওয়াই ফাইয়ের মতো কাজ করবে। 

নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি গবেষক ড. সাইদুল আলম চৌধুরী একাধিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে সম্পূর্ণ তারহীনভাবে চার্জ দেওয়ার অভিনব প্রযুক্তি ‘স্মার্ট পাওয়ার বক্স’ উদ্ভাবন করেছেন। এ গবেষণা প্রকল্পের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ারউইক ও জুডি স্মিথ ইঞ্জিনিয়ারিং এনডাওমেন্ট ফান্ড থেকে প্রতিযোগিতামূলক এক লাখ চৌদ্দ হাজার নিউজিল্যান্ড ডলার অনুদান পেয়েছেন। ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।

উদ্ভাবক ড. সাইদুল আলম গতকাল রোববার (১৬ নভেম্বর) বাসসের সাথে এক টেলিফোন আলাপে বলেন, ‘প্রতিদিনই দেখি ডেস্ক, অফিস বা ঘরে চার্জিং কেবল ছড়ানো থাকে। ফোন, ইয়ারবাড, স্মার্টওয়াচ সবকিছুতেই আলাদা তার লাগে। এই ঝামেলাটা সবসময়ই বিরক্তিকর মনে হতো। আমি চেয়েছি এমন একটা ব্যবস্থা করতে যেখানে পুরোপুরি তারহীনভাবে চার্জিং হবে। ঠিক যেমনভাবে আমরা ওয়াই ফাই ব্যবহার করি। সেই ভাবনা থেকেই স্মার্ট পাওয়ার বক্স-এর ধারণা আসে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে ছোট পরিসরে কনসেপ্ট প্রোটোটাইপ তৈরি করি। তারপর ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের ল্যাবে দল গঠন করে কাজ শুরু করি। সিস্টেম মডেলিং, কয়েল ডিজাইন এবং কার্যক্ষমতা যাচাই করতে আমরা একাধিক পর্যায়ে পরীক্ষা করেছি। ধীরে ধীরে প্রোটোটাইপ থেকে ব্যবহারযোগ্য প্রোডাক্টের দিকে এগোচ্ছি।’

এ ডিভাইসটি তৈরি ও এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য তিনি ১ লাখ ১৪ হাজার নিউজিল্যান্ড ডলার অনুদান পেয়েছেন। তিনি জানান, এই প্রকল্পের মূল সহায়তা এসেছে ‘ওয়ারউইক ও জুডি স্মিথ ইঞ্জিনিয়ারিং এনডাওমেন্ট ফান্ড’ থেকে। পাশাপাশি তার গবেষণা সুপারভাইজার প্রফেসর আইগু প্যাট্রিক হু, ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের সহকর্মী গবেষক এবং পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করেছেন। পরিবারের মানসিক সমর্থনও ছিল তার অন্যতম বড় প্রেরণা।

ড. সাইদুল বলেন, ‘স্মার্ট পাওয়ার বক্স হচ্ছে একটি থ্রিডি ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম। যেখানে ব্যবহারকারী একাধিক ডিভাইসকে ( যেমন; ফোন, ইয়ারবাড, স্মার্টওয়াচ) তার ছাড়াই ও নির্দিষ্ট অবস্থান ছাড়াই বক্সের ভেতর রাখলেই চার্জ দিতে পারবে। সিস্টেমে রয়েছে, উন্নত রেজোন্যান্ট কয়েল ডিজাইন, কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার, তাপমাত্রা ও ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং ইএমএফ (EMF) ও নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুযায়ী ডিজাইন।

তবে এই স্মার্ট পাওয়ার বক্সের এখনো কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, এখনও প্রযুক্তিটির বাণিজ্যিক পর্যায়ে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন; কার্যক্ষম দূরত্ব বাড়ানো, পাওয়ার লেভেল বাড়ালে ইএমআই (EMF) নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদন খরচ কমানো।

তার মতে, এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ব্যবহারিক সহজতা। তার ছাড়াই একাধিক ডিভাইস একসাথে চার্জ নেওয়া যাবে। ঘর বা অফিসে আর চার্জার বা কেবলের জট থাকবে না। ভবিষ্যতে এটি স্মার্ট ফার্নিচার বা গৃহস্থালী পণ্যে সংযোজন করা যাবে।

উদ্ভাবক ড. চৌধুরী এই ডিভাইস সম্পর্কে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও বাসসের সাথে আলাপ করেন। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী ধাপে আমরা স্মার্ট পাওয়ার বক্সকে আরও ছোট, কার্যকর ও কম খরচে তৈরি করতে চাই। 

পাশাপাশি শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তিকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনার পরিকল্পনা আছে। আমি চাই নিউজিল্যান্ডে তৈরি এই প্রযুক্তি একদিন আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করুক।’

তরুণ গবেষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গবেষণা মানে শুধু ল্যাবের কাজ নয় বরং বাস্তব জীবনের সমস্যা চিনে তার সমাধান খোঁজা। ধৈর্য, কৌতূহল আর পরিশ্রম এই তিনটিই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। নিজের আইডিয়াকে ছোট ভেবো না। ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করলে একদিন সেটিই বড় উদ্ভাবনে রূপ নিতে পারে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালাহউদ্দীন মিনা এ উদ্ভাবন সম্পর্কে বলেন, ‘ড. সাইদুল আলম চৌধুরীর উদ্ভাবনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ ও নিরাপদ করে তুলবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তাঁর গবেষণা আন্তর্জাতিক মানের এবং বাস্তবসম্মত সমাধান তৈরিতে সক্ষম। যা আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত উপকারী।’

ড. সাইদুল আলম চৌধুরী ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও মাতা নাসরিন আক্তার। তিনি ২০১৭ সালে চিটাগাং ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (চুয়েট) এর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং(ইইই) বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সম্পূর্ণ বৃত্তিতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। সেখানে তিনি ‘এক্সেলেন্ট রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের ইনোভেটিভ ওয়্যারলেস পাওয়ার রিসার্চ ল্যাবের গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। 

তার নামে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি উদ্ভাবনের পেটেন্ট রয়েছে। এছাড়াও বিশ্বের প্রথম শ্রেণির আইইইই জার্নালে তার আটটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
মাদ্রিদ সফরে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ও রাজার সঙ্গে দেখা করবেন জেলেনস্কি
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৭১ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ চুক্তি
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে বরিশালে আনন্দ মিছিল 
মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড, দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান অন্তর্বর্তী সরকারের
দেশের মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে একটি নির্বাচনের জন্য : শামসুজাজামান দুদু
হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে : ছাত্রশিবির
সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নির্বাচনের প্রস্তুতি ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে : সিইসি
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ
ঢাবিতে ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও উত্তরাধিকার শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব
পৃথিবীর যেকোনো আদালতে একই শাস্তি হতো : চিফ প্রসিকিউটর
১০