ট্রাম্পের মার্কিন সাহায্য হ্রাস: দীর্ঘমেয়াদি সংকটের আশঙ্কা

বাসস
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:২৪

ঢাকা, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : উগান্ডায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত সার্বজনীন শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে লাখ লাখ স্কুলশিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছে। দক্ষিণ সুদানে মার্কিন সহায়তা হাজারো বন্যাদুর্গত মানুষকে কলেরার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করেছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর  প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্দেশে তিন মাসের জন্য অধিকাংশ মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করেছেন এবং সব তহবিল 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্প প্রশাসন পরবর্তীতে খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক সহায়তার জন্য কিছু ছাড় দিয়েছে। তবে ত্রাণকর্মীরা বলছেন, অনিশ্চয়তা এখনো বজায় রয়েছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর এর প্রভাব ইতোমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে।

এমনকি ৯০ দিনের পর্যালোচনার পর মার্কিন সহায়তা পুনরায় চালু হলেও ত্রাণকর্মীরা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের আশঙ্কা করছেন। কিছু বিশ্লেষকের মতে, চীন ও অন্যান্য শক্তিধর দেশ যখন উন্নয়নশীল বিশ্বকে আকৃষ্ট করতে চাইছে, তখন এই সহায়তা বন্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

'ইতোমধ্যে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেছে'

উগান্ডার কমুলির একজন হিসাবরক্ষক পিটার ওয়াইসওয়া 'কম্প্যাশন কানেক্টরস' নামক একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সাহায্য কার্যক্রম সমন্বয় করেন। তিনি বলেন, 'এইচআইভি/এইডস রোগীদের জন্য কয়েকদিনের ওষুধের অভাবও মৃত্যুর কারণ হতে পারে।'

তিনি জানান, মার্কিন সহায়তার ওপর নির্ভরশীল কিছু স্কুল ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে না আসার নির্দেশ দিয়েছে।

দক্ষিণ সুদানের দরিদ্রতম অঞ্চলের আওয়েলে, এতিমখানার শিক্ষক জেমস আকুন আকট বলেন, 'বন্যায় গৃহহীন হওয়া ৩,০০০ মানুষকে মার্কিন সহায়তায় পরিচালিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ত্রাণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।'

তিনি বলেন, 'সমস্যা হলো, ত্রাণ শুধু জরুরি সহায়তার জন্যই নয়, পুনর্গঠনের জন্যও ব্যবহৃত হয়।'

তিনি সতর্ক করেন, 'যদি এই তহবিল কাটার সিদ্ধান্ত শিগগিরই পুনর্বিবেচনা না করা হয়, তবে দক্ষিণ সুদানে ক্ষুধা ও রোগে মানুষ মারা যেতে পারে।'

অনিশ্চয়তার রাজত্ব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সহায়তা দানকারী দেশের ভূমিকা পালন করে এসেছে। ২০২৩ সালেও দেশটি ৬৪ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাহায্য কর্মসূচিগুলোর একটি হলো পিইপিএফএআর। এটি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল। এর মাধ্যমে আনুমানিক ২৬ মিলিয়ন মানুষের প্রাণ রক্ষা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ২৪ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত এক স্মারকে সমস্ত মার্কিন সহায়তা স্থগিত করেন, তবে 'জরুরি খাদ্য' এবং অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে ইসরাইল ও মিশরের জন্য ছাড় দেন।

পরবর্তী এক স্মারকে তিনি আশ্রয় ও ওষুধসহ অন্যান্য মানবিক সহায়তাও ছাড় দেন, যা পিইপিএফএআর-এর অর্থায়নে সরবরাহ করা অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ওষুধের জন্য একটি স্বস্তির বার্তা বহন করে।

কিন্তু মালাভির জুম্বার নার্স সুজি ডিজিমবিরি জানান, তিনি শুনেছেন যে মানুষ যতটা সম্ভব ওষুধ মজুদ করছে এবং 'লাইটহাউস' নামে একটি স্থানীয় দাতব্য সংস্থা, যা এইচআইভি/এইডস চিকিৎসা পরিচালনা করত, দ্রুত বন্ধ হয়ে গেছে।

ওয়াশিংটনে, এক কংগ্রেস সহকারী জানান যে, মাত্র নয় দিনের জন্য সহায়তা বন্ধ থাকলে দৈনিক এক মিলিয়ন এইচআইভি/এইডস ওষুধের ডোজ বিতরণে বিঘ্ন ঘটতে পারে, অথচ এখনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা মেলেনি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, 'শোনা যাচ্ছে যে পিইপিএফএআর চলবে, কিন্তু আমাদের হাতে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই।'

তিনি বলেন, 'আমরা জানি কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ শেলফে পড়ে রয়েছে, বিতরণের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু ওয়াশিংটনের নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তা পাঠানো হচ্ছে না।'

ওই কর্মকর্তা যোগ করেন, 'পিইপিএফএআর আমাদের জন্য এক ধরনের মার্শাল পরিকল্পনা ছিল। এখন যদি হঠাৎ করে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে এটি আমাদের খামখেয়ালিপনার প্রমাণ দেবে আমরা আসলে চিন্তা করি না-  এবং ভবিষ্যতে তারা সম্ভবত চীনের মতো দেশগুলোর দিকে ঝুঁকবে।'

''আমরা চাই না মানুষ মারা যাক'

রুবিও, নতুন কিছু ছাড় দেওয়ার ব্যাখ্যায় বলেন, 'আমরা চাই না মানুষ মারা যাক এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটুক।'

কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই ছাড় প্রদান প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যয়ের সঠিক হিসাব দিতে বাধ্য করছে, কারণ 'ঐতিহাসিকভাবে আমরা খুব কম সহযোগিতা পেয়েছি।'

রুবিও বলেন, 'আমাদের কাছে এমন কিছু আছে, যাকে আমি 'বৈদেশিক সহায়তা শিল্প কমপ্লেক্স' বলি- বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার পেয়ে যাচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, এটি আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।'

একটি মার্কিন বেসরকারি সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, 'জরুরি সহায়তাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া মূলত একটি কৌশল হতে পারে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করতে পারে যে, অন্যান্য খাতে আর সহায়তা দেওয়ার দরকার নেই।'

মার্কিন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্টের আশঙ্কায় নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, 'এমনকি 'জরুরি খাদ্য' শব্দগুচ্ছই এক ধরনের স্ববিরোধিতা। আপনি কয়েকদিন না খেয়ে থাকুন, তারপর বুঝবেন জরুরি খাদ্য কী জিনিস।'

তিনি বলেন, সহায়তা বন্ধের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় সংগঠনগুলো, যাদের আর্থিক সঞ্চয় নেই-  অথচ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাই চান এসব সংস্থা আরও শক্তিশালী হোক।

তিনি মন্তব্য করেন, 'এটি মূলত বাড়ি সংস্কারের নামে ভিত্তিটাই ধ্বংস করে দেওয়ার মতো।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হচ্ছে আগামীকাল
দুর্নীতি মামলায় যবিপ্রবি’র সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুস সাত্তার কারাগারে
টাকা পাচারের অভিযোগে স্বামীসহ সাঈদা মুনার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
কাউনিয়ায় অর্থাভাবে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ : দুর্ভোগে পাঁচ গ্রামের মানুষ
ইসরাইলি ‘আগ্রাসন’ বন্ধে ইউরোপীয় শক্তির প্রতি ইরানের আহ্বান
শ্রমিকদের জন্য আরও ৪ রুটে বিশেষ ভাড়া চালু করল বিমান
চট্টগ্রামের ড্রোন নির্মাতা আশির উদ্দিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ১২ দফা সুপারিশ
নওগাঁয় জমে উঠেছে আমের হাট : সিন্ডিকেটে অসন্তোষ চাষীদের
জি৭ সম্মেলনে যোগ দিতে কানাডায় ট্রাম্প
১০