ট্রাম্পের শুল্ক-অনিশ্চয়তায় ভিয়েতনামে চীনা ব্যবসা বিপাকে

বাসস
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৬

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : এক বছর আগে চাং চুন্দোং যে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, সেটিকে সম্প্রসারণ করে ভিয়েতনামে নিয়ে এসেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের বাণিজ্যযুদ্ধের পর, বহু চীনা ব্যবসার মতো তারাও ভিয়েতনামের এই দ্রুত বিকাশমান উৎপাদনকেন্দ্র বেছে নিয়েছিল।

কিন্তু এখন সেই প্রতিষ্ঠান—চীনের বিওয়াইডি কোম্পানির তৈরি ফর্কলিফটের এক পরিবেশক—আশানুরূপ দ্রুত অগ্রগতির মুখ দেখছে না। কারণ বিভিন্ন কারখানা প্রকল্প আটকে আছে, এবং ট্রাম্প যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়িত হয় কি না, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে ভিয়েতনাম।

'যে সব কারখানা থেকে আমরা অর্ডার পেয়েছিলাম, সেগুলোর চালু হওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কিন্তু শুল্ক-সংক্রান্ত খবর আসার পরই আমাদের জানানো হয়েছে, প্রকল্প এবং ফর্কলিফট ক্রয় স্থগিত রাখা হয়েছে,' বলেন হুয়োচাচা নিউ এনার্জি গ্রুপের ব্যবস্থাপক চাং, যাদের ভিয়েতনামের ক্লায়েন্টদের মধ্যে রয়েছে চীনা ইলেকট্রনিক্স নির্মাতা টিসিএলও।

'আমাদের এখন দ্রুত প্রবৃদ্ধির পর্যায়ে থাকার কথা... কিন্তু শুল্কের কারণে তা হচ্ছে না,' এএফপিকে বলেন ৩৯ বছর বয়সী এই কর্মকর্তা।

ভিয়েতনামে থাকা অনেক চীনা ব্যবসা, বিশেষ করে যারা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে, তারা তাত্ত্বিকভাবে চীনের তুলনায় তুলনামূলক ভালো অবস্থানে—কারণ বেইজিং ইতোমধ্যে বহু পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের মুখোমুখি।

হানয়সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভিয়েতনামও যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শতাংশ সমগ্র পণ্যের ওপর শুল্কের আওতায় পড়েছে। জুলাই থেকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে এখনো কিছুটা সময় রয়েছে। অনেকেই আশা করছেন, আলোচনার মাধ্যমে শুল্কের হার কমানো যেতে পারে।

কিন্তু উত্তর ভিয়েতনামের শিল্পাঞ্চল বাকনিনে এএফপির সঙ্গে কথা বলা চীনা ব্যবসায়ীরা—যারা অধিকাংশই রপ্তানিকেন্দ্রিক সরবরাহ চেইনের সঙ্গে জড়িত—বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ বিরাজ করছে।

চাং বলেন, তিনি আলোচনার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হলেও, কোম্পানির তিন-চারটি প্রকল্প এখনো স্থগিত রয়েছে। 'আমি কিছু ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলেছি... কিন্তু সবার জবাব একই—এখন অপেক্ষা করতে হবে।'

বিনিয়োগের ঢল:

হ্যানয় থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বাকনিনে চীনা সাইনবোর্ড লাগানো রেস্তোরাঁ, ম্যাসাজ পার্লার ও কনভিনিয়েন্স স্টোরগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে কোরিয়ান দোকান ও খাবারের দোকান।

দক্ষিণ কোরিয়া অনেক আগে থেকেই ভিয়েতনামে বড় বিনিয়োগকারী—স্যামসাং ও এলজি’র মতো ইলেকট্রনিক্স জায়ান্টদের কারখানাও রয়েছে এখানেই। তবে চীন দ্রুত এগিয়ে আসছে।

২০২৩ সালের শেষ নাগাদ প্রদেশটিতে চীনা নাগরিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার, যা এখন আরও বেড়েছে বলে ধারণা করছেন অভিবাসীরা।

'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিয়েতনামের অর্থনীতি দ্রুত উন্নতি করছে, আর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন চলছেই—ফলে যে সব কোম্পানি আগে দ্বিধায় ছিল, তারা গত দুই বছরে এখানে এসেছে," বলেন ওয়াং হোংশিন, যিনি এক দশক আগে স্যামসাংয়ের একজন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে ভিয়েতনামে এসেছিলেন।

এসব কোম্পানির একটি হলো ‘ভিয়েতনাম কেপাই’—একটি চীনা প্রতিষ্ঠান, যারা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত (সিএনসি) যন্ত্রপাতি তৈরি করে এবং গত মাসে বাকনিনে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। নতুন বাজারে প্রবেশ এবং নিজ দেশে তীব্র প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসাই তাদের উদ্দেশ্য।

"চীনে সফল বহু কোম্পানিই এখন ভিয়েতনামে বাজার খুঁজছে। আমি এখানে চীনা রেস্তোরাঁগুলোতে এই কথাবার্তা বহুবার শুনেছি," বলেন কোম্পানিটির ৩৩ বছর বয়সী ব্যবস্থাপক লি পিংউ।

২০২৪ সালে ভিয়েতনামের শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশের তালিকায় চীন ছিল তৃতীয়, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার পরেই। আগের বছরের তুলনায় চীনের বিনিয়োগ বেড়েছে তিন শতাংশেরও বেশি।

নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পের সংখ্যার দিক থেকে চীন শীর্ষে ছিল—যার পরিমাণ ছিল সব নতুন নিবন্ধিত প্রকল্পের এক চতুর্থাংশেরও বেশি।

ঘণ্টা কাটা:

এই বিনিয়োগ ঢলই সম্ভবত ট্রাম্পকে উত্তেজিত করেছে। তিনি এপ্রিলে ভিয়েতনামের ওপর ব্যাপক শুল্ক ঘোষণার সময় যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানি সহজ করার অভিযোগ আনেন।

যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা পণ্য রপ্তানিতে ভিয়েতনামের সরাসরি সহায়তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবু ব্যবস্থাপক চাং স্বীকার করেন, কিছু ক্লায়েন্ট ‘এন্ট্রেপট ট্রেডিং’-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাচ্ছেন।

'আমাদের কিছু ক্লায়েন্ট, যারা ফ্লোরবোর্ড বা ছাঁচ নির্মাণ যন্ত্রপাতি বিক্রি করে, তারা এই ধরনের রপ্তানি কাজে জড়িত,' বলেন তিনি।

শুল্ক হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ভিয়েতনামের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পণ্যের উৎপত্তিস্থল যাচাইয়ে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে, বলে মঙ্গলবার এএফপির হাতে আসা একটি নথিতে জানা গেছে।

বাকনিনের এক ব্যবসায়ী বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে একসময় শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছিল, কিন্তু এখন চীনা কোম্পানিগুলোতে কর্মরত ভিয়েতনামীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

একটি চীনা কোম্পানিতে ডেস্কটপ মনিটরের বাইরের অংশ তৈরির কাজে নিয়োজিত ৩০ বছর বয়সী হুং বলেন, তিনি মাসে প্রায় ২৭০ ডলার আয় করেন, তবে এখন তার অতিরিক্ত সময়ের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

'আমরা এখন আর ওভারটাইম করতে পারছি না,' বলেন হুং। 'এই সামান্য আয়ে এখানে টিকে থাকা খুব কঠিন, জানি না সামনে কী হবে।"

ওয়াং বলেন, 'আমরা মূলত দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি আপগ্রেড করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিনিয়োগ বড় হবে জেনেই এখন কিছুটা দ্বিধায় পড়েছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সাতক্ষীরার বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মা-ছেলে নিহত
তৃতীয়বারের মতো ইরানিদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মার্কিন দূত
সিলেটে দৈনিক ৫ কোটি লিটার পানি শোধনাগার প্ল্যান্ট নির্মাণের উদ্যোগ
গোপালগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ১০টি দোকান পুড়ে গেছে
বেরাইদে ৭ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ পর্যায়ে: ডিএনসিসি প্রশাসক
‘শ্রমিক আবাসন নীতি’ ও প্রতিবন্ধী শ্রমিক সুরক্ষায় সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
হামাস আত্মসমর্পণ করবে না: ব্রিটিশ বিশ্লেষক
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে: দক্ষিণ আফ্রিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান
থাইল্যান্ডে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৬ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ ডে’ উদযাপিত
১০