ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় বিরল খনিজ আহরণের জন্য গভীর সমুদ্র খনন কার্যক্রম বিস্তৃত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, হোয়াইট হাউসের সহকারীরা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগের ফলে যুক্তরাষ্ট্র এক বিলিয়নেরও বেশি মেট্রিক টন খনিজসমৃদ্ধ গভীর সামুদ্রিক পাথর আহরণ করতে পারবে এবং এটি মার্কিন অর্থনীতিতে শত শত বিলিয়ন ডলার যোগ করতে পারে।
তবে সমুদ্রের তলদেশে কোবাল্টসহ অন্যান্য খনিজ আহরণের জন্য পরিবেশের ক্ষতি করার বিষয়টি পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ (আইএসএ)-এর নিয়ন্ত্রণবিধির পরিপন্থী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৯৯০-এর দশক থেকে আইএসএ আন্তর্জাতিক জলসীমায় খনন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিধি তৈরির চেষ্টা করে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ-সংযুক্ত এই সংস্থার সদস্য নয় এবং আইএসএর কর্তৃত্ব নির্ধারণকারী চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেনি।
বরং ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৮০ সালের একটি অপরিচিত আইনের ওপর ভরসা করছে, যা আন্তর্জাতিক জলসীমায় সমুদ্রতল খননের জন্য মার্কিন সরকারের অনুমতি প্রদানকে বৈধতা দেয়—এমনটি জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
এএফপির অনুরোধের পরও আইএসএ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
এই আদেশ অনুযায়ী, বাণিজ্য সচিবকে ৬০ দিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক জলসীমায় খনিজ অনুসন্ধান ও পুনরুদ্ধার লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দ্রুততর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা:
গভীর সমুদ্র খনন এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে বিরল খনিজ আহরণের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে এবং এই খাতে বর্তমানে চীনই শীর্ষে অবস্থান করছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজের প্রতিরক্ষা, উন্নত উৎপাদন এবং জ্বালানি খাতকে সহায়তা করতে খনন কার্যক্রম বাড়াতে আগ্রহী।
তবে পরিবেশবাদীরা সতর্ক করেছেন, এই প্রক্রিয়া প্রকট পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হতে পারে।
‘গভীর সমুদ্র খননের পথ সুগম করাটা আসন্ন পরিবেশ বিপর্যয়ের নামান্তর,’ বলেন সেন্টার ফর বায়োলজিকাল ডাইভারসিটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এমিলি জেফারস।
তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প পৃথিবীর সবচেয়ে ভঙ্গুর এবং কম-বোঝা পরিবেশব্যবস্থাগুলোর একটিকে বেপরোয়া শিল্পোৎপাদনের জন্য খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’
হোয়াইট হাউস জানায়, এই নতুন খনননীতি একদিকে যেমন মিত্রদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করবে, তেমনি চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায়ও সহায়ক হবে।
আইএসএ বর্তমানে খননের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বনাম পরিবেশগত হুমকির ভারসাম্য রক্ষা করে একটি নিয়মনীতির খসড়া তৈরির কাজ করছে।
গত সপ্তাহে ‘ইমপসিবল মেটালস’ নামের একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান জানায়, তারা আমেরিকান সামোয়ার পার্শ্ববর্তী প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি অংশে খননের জন্য মার্কিন সরকারের কাছে ইজারা প্রক্রিয়া শুরু করার অনুরোধ জানিয়েছে।
এই পদক্ষেপ আইএসএর নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমার মধ্যে খননের সুযোগ তৈরির প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গভীর সমুদ্রতলে পাওয়া যায় পলিমেটালিক নডিউল নামে পরিচিত আলুর মতো আকৃতির খনিজ পাথর, যেগুলো প্রায় ১৩,০০০ থেকে ২০,০০০ ফুট (৪,০০০ থেকে ৬,০০০ মিটার) গভীরতায় পাওয়া যায়। এতে থাকে ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, কড়নধষঃ, তামা ও নিকেল।
একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বাক্ষরের আগেই জানান, এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এক বিলিয়নের বেশি মেট্রিক টন খনিজ আহরণ করতে পারবে এবং আগামী ১০ বছরে এটি দেশের জিডিপিতে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩২ লাখ কোটি টাকা) যোগ করতে পারে, পাশাপাশি প্রায় এক লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
কানাডাভিত্তিক গভীর সমুদ্র খননের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান ‘দ্য মেটালস কোম্পানি’ সম্প্রতি আইএসএকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে খাতসংশ্লিষ্টদের চমকে দেয়।
বহু বছর ধরে আইএসএর কাছ থেকে শিল্প খননের নীতিমালা গ্রহণের আহ্বান জানানোর পর প্রতিষ্ঠানটির সিইও জেরার্ড ব্যারন এ বছর জানিয়ে দেন, তারা এখন মার্কিন অনুমোদনের পথেই হাঁটবে।
ব্যারন বলেন, ‘দেশীয় উদ্ভাবন ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে নেওয়া এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে সমুদ্রতল খনিজের কৌশলগত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ার নিশ্চয়তা দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।’