ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে ‘পেপে’ মুজিকা আর নেই। ৮৯ বছর বয়সে ক্যানসারের কাছে হার মানলেন এই বিপ্লবী রাজনীতিক, যিনি তার সরল জীবনযাপন, বিনয় ও প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য গোটা লাতিন আমেরিকায় সম্মানিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে অঞ্চলজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মনটেভিডিও থেকে এএফপি জানায়, গেরিলা যোদ্ধা থেকে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠা মুজিকা জানুয়ারিতে জানিয়েছিলেন যে তার ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে এবং তিনি চিকিৎসা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
তিনি বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের দায়ে দীর্ঘ ১২ বছর কারাবন্দী ছিলেন।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু অরসি এক্স-এ লিখেছেন, ‘গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের সাথি পেপে মুজিকা আর নেই। তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট, কর্মী, পথপ্রদর্শক ও নেতা। আমরা আপনাকে খুব মিস করব, প্রিয় বন্ধু।’
তার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। তার মরদেহ বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাহিত করার জন্য নেওয়া হবে।
‘পেপে চিরন্তন!’
একজন সাইক্লিস্ট সরকারিভবনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করে বললেন, ‘পেপে চিরন্তন!’ সেই মুহূর্ত যেন তার জীবনের প্রতীক হয়ে রইল।
২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় মুজিকা তার বেতনের বড় অংশ দান করতেন এবং মনটেভিডিও শহরের বাইরে একটি ছোট খামারে স্ত্রী ও তিন পা-ওয়ালা কুকুরের সঙ্গে সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। এজন্য তাকে ‘বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট’ বলা হতো।
২০১২ সালে এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুজিকা বলেছিলেন, তিনি দরিদ্র নন, বরং তার জীবন ‘সংযমের’। তার কথায়, ‘আমার বেঁচে থাকতে খুব বেশি কিছু লাগে না।’
সংযম থেকে সংস্কারে
গরু ও ফুটবলের জন্য পরিচিত ৩৪ লাখ মানুষের ছোট দেশ উরুগুয়েকে তিনি লাতিন আমেরিকার অন্যতম প্রগতিশীল সমাজে রূপান্তর করেন।
রাষ্ট্রপতি থাকাকালে গর্ভপাত, সমকামী বিয়ে এবং বিনোদনমূলক গাঁজা ব্যবহারের বৈধতা দেন তিনি। তার নীতিকে সমর্থন দিয়ে কণ্ঠ মিলিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম থেকে শুরু করে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস এবং গватেমালার প্রেসিডেন্ট বার্নার্দো আরেভালো পর্যন্ত।
ব্রাজিলের সরকার তাকে ‘সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানবতাবাদী’ বলে অভিহিত করেছে।
কারাগার থেকে সংসদে
১৯৬০-এর দশকে তুপামারোস নামে একটি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী শহুরে গেরিলা আন্দোলনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ধনীদের কাছ থেকে লুট করে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করলেও, পরবর্তীতে সংগঠনটি অপহরণ, বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।
তুপামারোস আন্দোলন ভেঙে পড়ার পর ১৯৭২ সালে মুজিকা বন্দি হন এবং ১৯৭৩-৮৫ সালের সামরিক শাসনামলে নির্যাতনসহ একটানা বন্দি থাকেন, যার বড় অংশই একাকীত্বে কাটে।
মুক্তির পর ১৯৮৯ সালে গঠন করেন ‘মুভমেন্ট অফ পপুলার পার্টিসিপেশন (এমপিপি)’—বর্তমানে বামপন্থী ব্রড ফ্রন্ট জোটের বৃহত্তম দল। ১৯৯৫ সালে সংসদ সদস্য, ২০০০ সালে সিনেটর এবং পরে কৃষিমন্ত্রী হন তিনি।
শেষ ইচ্ছা: নিজের খামারে কুকুরের পাশে সমাধি
ক্যানসার ধরা পড়ে গত বছর মে মাসে। শেষ সময়ে স্ত্রী লুসিয়া তোপোলানস্কির সঙ্গে ছিলেন তিনি। তাদের কোনো সন্তান ছিল না।
তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তাকে দাফন করা হবে নিজের খামারে, প্রিয় কুকুরটির পাশে।